রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীলতার ভুবনে আকাশের মতো
তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী
আমি অবাক হয়ে শুনি।
রবীন্দ্রনাথের ১৬২তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অসাধারণ লেখক ছিলেন। যিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। সেই সময় থেকেই বাঙালি জাতির কাছে রবীন্দ্রনাথ একজন অসাধারণ লেখক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
শুধু নিজের লেখা হিসেবে নয়, একটি জাতির মাতৃভাষাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে অনন্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার কারণে বাংলা সাহিত্য আমাদের সামনে একটি বড় দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ১৯৯৯ সালে আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আমরা মনে করি, ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমাদের মাতৃভাষার সুরক্ষার জন্য যারা জীবন দিয়ে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যা কি না বিশ্বের কাছে বড় দিগন্ত। বংলা ভাষা, বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ সবকিছু মিলিয়ে আমরা যারা বেঁচে আছি, তাদের সবার কাছে একটি অবস্থান থেকে আমরা বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি। বিশেষ করে ১৯১৩ সালে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেলেন,তার কবিতার জন্য, এটি বাংলার জন্য একটি বিশাল বড় জায়গা।
কাজেই আমি মনে করি, বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির চেতনাকে বিশ্ব আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা যারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্টের প্রতিষ্ঠা করেছি ,আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রবক্তা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষা সাহিত্যের প্রকাশ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
আমাদের প্রজন্মকে ভাষা সম্পর্কে মর্যাদার জায়গা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এসব কিছু মিলিয়ে আমরা যেন সেই ভাষাকে মঙ্গলের জায়গায় নিয়ে রাখতে পারি। বিশ্বের দরবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে পৌঁছে ছিলেন, সেইভাবে পৌঁছানোরও প্রচেষ্টা করতে পারি। সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়ার জায়গাকে ধারণ করা আর এভাবেই বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সবচেয়ে বড় দিগন্ত বলে আমি মনে করি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার নবজাগরণের অগ্রভাগে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তার জীবনের প্রথম দিকে শিল্পের সংস্পর্শে আনা হয়েছিল। তিনি আট বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন এবং ১৬ বছর বয়সে তার প্রথম কাজ প্রকাশ পায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমস্ত অর্জনের মধ্যে একটি হলো শান্তিনিকেতন। নামে তার কবিতার সংকলনের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ লিখেছেন এবং শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন অমূল্য সব সম্পদ গুলি। তার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, যা জীবনে চলার পথে প্রতিমুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন পড়ে। তার জন্ম দিবস উপলক্ষে ২৫ শে বৈশাখ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসব পালন করি আমরা। ফুলের মালা, ফুল, প্রদীপ, ধুপ এর মধ্যে দিয়ে তাকে স্মরণ করে থাকি। নানা ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করা হয় এবং এভাবেই রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তীতে আমরা তাকে গভীর ভালবাসা ও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
সেলিনা হোসেন: কথাসাহিত্যিক এবং সভাপতি, বাংলা একাডেমি