বাংলাদেশের উন্নয়নে এই সফর চিন্তার নতুন খোরাক সৃষ্টি করবে
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট বাস্তবতা। জাপান এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশ সময়ে সময়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সত্য, তাদের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিককালের জাপান সফরে ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের নতুন দৃঢ়তার ভিত্তিতে, দুই দেশের জনগণ এবং দুই সরকারের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের আরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি একটি ইতিবাচক দিক।
আমরা আশা করি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বাড়বে। এ ছাড়াও, আমরা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং ঢাকা মেট্রো রেলের মতো আমাদের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের সহায়তার প্রশংসা করি।
জাপান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শিল্পোন্নত দেশ। বাংলাদেশের দেশ গঠনের কৌশলে জাপান যে ভূমিকা পালন করেছে তা নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের একটি দৃষ্টান্ত। গত চার দশক ধরে জাপান ও বাংলাদেশ যে বন্ধুত্ব উপভোগ করছে তা আজকের বিশ্বে বিরল। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে যেটি প্রশংসনীয়।
জাপানি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আরও বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের কালের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান এবং এর জনগণ আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পরিবর্তনমূলক যাত্রায় আমাদের সঙ্গে থাকবে। ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। পরবর্তীটি একক বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক দাতা এবং বিশ্বস্ত বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি অপরিহার্য যে টোকিও একটি উন্নত দেশ হওয়ার যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে পারলে সেটি বাংলাদেশের জন্য সবক্ষেত্রেই অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপান সবসময়ই বড় ভূমিকা রেখেছে। এখন বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে অনেক বেশি অবদান আশা করছে। সরকারের বাস্তববাদী নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির জন্য একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে পারে এবং সে দেশের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নিজেদের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং দেশের জনগণ আমাদের জাপানি বন্ধুদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরদার করে বর্তমান ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বে পরিণত করার দরকার আছে বলে মনে করি।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী [ফুমিও] কিশিদা এবং আমি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এর যৌথ বিবৃতিটি শেষ করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে।”
জাপান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শিল্পোন্নত দেশ হওয়ায় দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছেন যেটি একটি ভালো দিক।
এটা উৎসাহজনক যে, আমরা কয়েক দশক ধরে জাতি হিসেবে যে সম্পর্কগুলো গড়ে তুলেছি তা এখন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের নেতারা তাদের ৫০ বছরের পুরনো বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করার জন্য বর্তমান ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা ইতিবাচক হবে আশা করি। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে দুই দেশ আলোচনা করছে সেটিও খুব ভালো দিক হিসেবেই দেখা উচিত হবে।
জাপান ও বাংলাদেশ পাঁচ দশক ধরে শক্তিশালী মিত্র। উচ্চতর অংশীদারিত্ব আগামী কয়েক দশক ধরে উভয় দেশের জন্য পারস্পরিকভাবে উপকারী হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আমার ধারণা এই সফরের মাধ্যমে এই কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নতুন চিন্তার খোরাক সৃষ্টি হবে এবং উন্নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশকে পৌঁছাতে হলে ব্যাপক আকারে সহমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। আমার ধারণা,তাহলেই কেবলমাত্র আমরা একটি আশাপ্রদ ফলাফল অর্জন করতে পারব।
এম.হুমায়ুন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত
এসএন