মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু গড় আয়ু কমার অন্যতম কারণ
বর্তমানে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। এর আগের জরিপগুলোতে অর্থাৎ ২০২০ সালের জরিপে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। তার আগে ২০১৯ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। এর পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের মৃত্যু হার। দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। দেশের মানুষের গড় আয়ু আগের চেয়ে কমে গেছে।
এর কারণ কোভিড ও কোভিড–পরবর্তী নানা জটিলতায় মানুষের মৃত্যু বেড়েছে। মৃত্যুজনিত কারণেই গড় আয়ু কমেছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু বলতে দেশের সব মানুষের সাধারণ গড় আয়ু বোঝায় না। সোজাভাবে বলা যায়, আজকে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে, ওই শিশুর প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর।
আবার দেশে মাতৃমৃত্যুর হার আরও বেড়েছে। ২০২১ সালের হিসাবে, প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১৬৮ জন মা মারা যান। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬৩ জন। এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কিছুটা বেড়েছে। দেশে প্রতি এক হাজার এক বছর বয়সী শিশুর মধ্যে গড়ে ২২টি শিশুর মৃত্যু হয়। আগে এই সংখ্যা ছিল ২১। নানা ধরনের রোগবালাইয়ে বেশি মৃত্যু হয়। জীবিত জন্ম হয়, কিন্তু এক মাস বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়, এমন নবজাতকের সংখ্যা প্রতি হাজারে ১৬। এই হারও বেড়েছে।
অন্যদিকে আরও একটি বিষয় যেটি পরিলক্ষিত হচ্ছে সেটি হলো, শহর থেকে মানুষ গ্রামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এখন গ্রামে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কৃষির বহুমুখীকরণ হয়েছে। কৃষিজ কাজ বেড়েছে। তাই শহরের চেয়ে গ্রামে কাজ বেশি। ফলে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। সরকারও চাচ্ছে গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে। গ্রামকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে। শহরের উপর চাপ কমাতে। এর মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের ছুটে আসা কমাতে, উল্টো শহরের মানুষকে গ্রামে ফেরাতে। এ লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়ানো, চর জীবিকায়ন প্রকল্প, ঘরে ফেরা কর্মসূচি, গৃহায়ন প্রকল্প, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। তারপরও গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাড়তি আয় করা এসব কারণেই গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে বেশি মানুষ। তবে বিবাহ, খণ্ডকালীন কাজের সন্ধান, কর্মসংস্থানে বদলি, বন্যা, নদী ভাঙন, ব্যবসা, পরিবারের সঙ্গে বসবাস, অবসর জীবন কাঠামো- ইত্যাদি কারণেও গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমছে।
স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক জীবনের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করেই শহরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। এ অবস্থায় জনসংখ্যার ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়ছে শহরগুলো। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা। মানুষের ভিড়ে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
আমরা জানি যে,সরকার গ্রামকে শহর বানানোর ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। অর্থাৎ গ্রামে যাবে শহরের সব সুবিধা। এজন্য শুরু থেকেই বাজেটে এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ চলছে। সেখানেও গ্রামকে শহর বানানোর যে প্রতিশ্রুতি আছে তার প্রতিফলন ঘটানো হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মানুষকে আর গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করতে হবে না। বরং অনেক মানুষ গ্রামীণ পরিবেশে উন্নত জীবন যাপনের জন্য শহর ছেড়ে গ্রামে যাবে বলে আশা করছি।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব
এসএন