অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রকৃতির প্রতি অবিচার অসহনীয় দাবদাহের কারণ
বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে। গেল ক’বছরেও তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। এ সময় দখিনা হাওয়া নেই, বাতাসে আর্দ্রতা কম, মানে জলীয়বাষ্পও তেমন নেই। মানুষ নদীর সত্তাকে স্বীকার করে না। শাসন করতে গিয়ে বাধা দিয়ে দেয়। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়।
ঢাকার নগরায়ণের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে দুই ভবনের মাঝখানে কোনো জায়গা রাখা হচ্ছে না। ফলে আলো-বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শহরটা কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বাড়িঘর ও অফিসে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসছে। এগুলো ঘরের বাইরে তাপ বের করে দিচ্ছে। ফলে বাড়ির বাইরে তাপ আরও বাড়ছে। ঢাকায় বায়ুর আরাম ও ধরন’ শীর্ষক ২০১১ সালে টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ভবনগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে যে সেখানে আলো-বাতাস কম প্রবেশ করছে। নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর বেশির ভাগ ভবনের প্রতিটি ফ্লোর বা তলার মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ছিল ১১ থেকে ১৩ ফুট। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিটি তলার উচ্চতা কমে সাড়ে ৯ ফুট করা হচ্ছে। আগের ভবনগুলোর ছাদে ও জানালায় কার্নিশ দেওয়ার চল ছিল।এখনকার ভবনে তা উঠেই গেছে। ফলে বাইরের তাপ প্রতিটি ভবনকে একেকটি অগ্নিচুল্লিতে পরিণত করেছে। ওই গবেষণাতেই দেখা গেছে, ফ্ল্যাট বাড়ি গুলোর রান্নাঘর ও টয়লেট এমনভাবে নির্মিত হচ্ছে যে সেখানকার তাপ বাইরে বের না হয়ে ঘরের মধ্যেই আটকে থাকছে। ঘরে আলো না থাকায় সারা দিন বাতি জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে। ঘরের তাপ কমাতে অনেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করছেন। এতে ঘর ঠান্ডা থাকছে ঠিকই, কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে বের হওয়া তাপের কারণে ভবনের বাইরের তাপমাত্রা বাড়ছে, যা ভবনটিকেই আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে রাজধানীতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের কারণে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
অন্যদিকে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে ল্যান্ড বিল্ডিং সম্পন্ন হয়নি। পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার আগেই সেখানে মানববসতি গড়ে উঠেছে। এতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ওয়াটারশেড শব্দ নিয়ে বিতর্ক আছে। ওয়াটারশেড বদলাচ্ছে। আগে একটি ফসল হতো, এখন তিনটি হচ্ছে। পানির প্রবাহের উপর নির্ভর করে যে নদীভাঙনে মানুষের বসতিতে আঘাত করছে, এজন্য আমরা নদীকে শাসন করতে যাচ্ছি। অনেক সময় এই শাসন উল্টো কাজ করে।
শব্দের সঙ্গে তত্ত্বের ও তত্ত্বের সঙ্গে প্রয়োগের সম্পর্ক আছে। পানি শব্দটি ব্যবহার করলে বিজ্ঞান বলবে হাইড্রোজেন-অক্সিজেন মিলে পানি হয়। সামাজিকভাবে ব্যবহার করতে হলে সেখানে পলিটিকস, পাওয়ার, পলিউশন থাকতে হবে। এই তিনটি জিনিস থাকতে হবে। আমরা পতাকাকে স্যালুট দিই কিন্তু তার পেছনে থাকা মানুষকে ভুলে যাই।
আইনুন নিশাত: পরিবেশ ও আবহাওয়াবিদ।
এসএন