রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে দিন মাতৃক্রোড়ে যে শিশু প্রথম চোখ মেলেছিল, পরবর্তীকালে সে শিশুর পরিচিতি দেশের সীমানা পেরিয়ে পরিব্যাপ্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মা-বাবার আদরের ‘খোকা’, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সুপ্রিয় ‘মুজিব ভাই’, সমসাময়িকদের প্রিয় ‘শেখ সাহেব’ থেকে মুক্তিকামী বাঙালির ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি, শেষত কায়েমী স্বার্থবাদীদের প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা-‘জাতির পিতা’, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’।

বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে তার নাম একাকার হয়েছে। এত শুধু একটি নাম নয় বাঙালির জাতীয় মুক্তির ইতিহাস। যে জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। ১৭ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে। জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে সমগ্র জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। ইতিমধ্যে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ সগৌরবে পালিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের আলোয় জাতীয় দিগন্ত আজ উদ্ভাসিত।

বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালীর মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ থেকে ’৫২ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি এবং সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায়, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধস বিজয় অর্জন ও পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাকে জীবনের ১৩টি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে।’ ২০১২তে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যাই এবং রোবেন আইল্যান্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ পরিদর্শন করি। এখানেই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকেও মিয়ানওয়ালি কারাগারে এ রকম একটি নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছিল। এই বন্দিশালাতেই নেলসন ম্যান্ডেলা তার দীর্ঘ ২৭ বছর কারাজীবনের ১৮ বছর বন্দী ছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি বন্দিশালার নির্জন সেলটি। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কারাবন্দী ম্যান্ডেলার বিছানার জন্য একটি ও গায়ে দেওয়ার জন্য আরেকটি কম্বল, একটি প্লেট, গ্লাস ও জগ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি পাঠ করে জেনেছি কারারুদ্ধ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল একটি থালা, বাটি, গ্লাস আর কম্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল।’ এখানে গিয়েই বারবার আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের কথা ভেবেছি-যে কারাগারে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘকাল বন্দিজীবন অতিবাহিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সম্মেলনে গিয়ে মিয়ানওয়ালি কারাগারের প্রিজন গভর্নর (জেল সুপার) হাবীব আলীর কাছ থেকে বর্ণনা শুনেছি, কারাকক্ষের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী অথবা কবর বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কবরকেই বেছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাংলার আলো-বাতাসে আমি বর্ধিত হয়েছি, মৃত্যুর পর এই কবরে না, আমার লাশ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।’ জাতির পিতা সাড়ে ৯ মাস পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের নির্জন সেলে বন্দী ছিলেন। মিয়ানওয়ালি কারাগার ভিন দেশে হওয়ায় আমরা তা সংরক্ষণ করতে পারিনি। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে তিনি বন্দী ছিলেন সে-সব সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগরতলা মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের যেখানে তিনি বন্দী ছিলেন সেটিও জাদুঘর করা হয়েছে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী নেতৃত্বের রয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আদর্শিক মিল। যেমন ’৭১-এর ৪ মার্চ বাঙালির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির জনক বলেছিলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতির মুক্তি আসে নাই।’ তদ্রুপ দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘জনগণের মুক্তির জন্য অবশ্যই সবকিছু ত্যাগের জন্য প্রকৃত নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।’ ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি দেশের মানুষকে ভালোবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাদেরকে খুউব বেশি ভালোবাসি।’

বঙ্গবন্ধু সবসময় ছোটকে বড় করে তুলতেন। যেসব জায়গায় সফর করতেন, বক্তৃতায় সেখানকার নেতা-কর্মীদের বড় করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকে থানার, থানা আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলার এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে জাতীয় নেতায় উন্নীত করে তিনি জাতির পিতা হয়েছেন। ফলত, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজো বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করেই টিকে আছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হৃদয়বান এক মহান নেতা। কারো দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। পরকে সহজেই আপন করে নিতেন। যারা বিরোধী ছিলেন তাদের কাছে টেনে নিতেন। তিনি যখন বলতেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না’, মানুষ তাই বিশ্বাস করত। তিনি ক্ষমতার জন্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেন নি। প্রিয় মাতৃভূমিকে শোষণ-বঞ্চনার নাগপাশ থেকে রক্ষা করে বাঙালিরা যাতে বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সে জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে রাজনীতি করেছেন। ’৬৭-এর ১৭ মার্চ নিজের জন্মদিনে লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই-বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস।’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা-২০৯) মনে পড়ছে ’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৫২-তম জন্মদিন ছিল। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২-তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনসাধারণকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বলতেন, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সময়পোযোগী। সেই কবে ’৬৬তে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা...’ গেয়ে হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। সেই সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০ মার্চ পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘৬ দফা কর্মসূচি নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই।’ কবিগুরুর গান থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...।’ আরও বলেছিলেন, ‘আমার দলের নেতা-কর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছবই।’ বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবার সমস্ত ষড়যন্ত্র আইয়ুব খান গ্রহণ করেছিল। আগরতলা মামলার সরকারি নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা। স্বৈরশাসক তাকে প্রধান আসামি করে ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু মাথা নত করেননি। এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই গণআন্দোলন প্রবল গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই বাঙালির বন্ধু তথা ‘বঙ্গবন্ধু’। ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আই ফিল ফর মাই কান্ট্রি অ্যান্ড মাই পিপল, অ্যান্ড দ্যান মাই ফ্যামিলি।’ সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বিশ্বে র নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা। যেখানেই মুক্তিসংগ্রাম সেখানেই তিনি সমর্থন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় ভারতের মহাত্মা গান্ধী, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর সঙ্গে। তাদের সমকক্ষ নেতা ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে আলোচনার টেবিলে বসে। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নিজ জীবনকে তিনি বাঙালি জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন বলেছিলেন, ‘যে মরতে চায়, তাকে কেউ মারতে পারে না।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তার মৃত্যু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের একজন মহান নেতা, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তিনি চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও আপোস করতেন না।

‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন। ’৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বকণ্ঠে স্লোগান দেন, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যা কিছু সংঘটিত হয়েছে সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ’৫২তে বলেছিলেন, ‘একদিন আমি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হবো।’ আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একদিন আমি এই দেশকে স্বাধীন করবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে তুচ্ছ।’ সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে ধাপে ধাপে তাঁর আরাধ্য কর্মসূচী এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ’৭০-এর নির্বাচনে নবনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ করাবেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। সেদিন বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘৬ দফা ও ১১ দফা আজ আমার নয়, আমার দলেরও নয়। এ আজ বাংলার জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কেউ যদি এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে বাংলার মানুষ তাকে জ্যান্ত কবর দেবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও।’ জনগণের জন্যই ছিল তাঁর রাজনীতি ও কর্মসূচি। বক্তৃতায় সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে মোনেম খান কাবু করতে পারেনি, এমনকি আইয়ুব খানও পারেনি-কিন্তু আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে আপনাদের এই অকুণ্ঠ ভালোবাসা। আপনারা দোয়া করবেন যেন আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি।’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তিনি একাই রক্ত দেননি সপরিবারে রক্ত দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করে গেছেন।

মনে পড়ে, ’৭১-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা; যে ভাষণ আজ ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে আসীন। সেদিন তিনি একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই ৭ মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের প্রেরণার উৎস। ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রারম্ভে বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ তার এই শেষ বার্তা স্বাধীনতার ঘোষণা হৃদয়ে ধারণ করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারিনি। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি যেদিন তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ১০ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’-এর প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। মাত্র ৭ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা অর্জন করি সদ্য স্বাধীন দেশের উপযোগী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়ে তার প্রতি বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা স্বচক্ষে দেখেছি। বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সোভিয়েট ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পোদগর্নি, প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল জোসেফ ব্রোজ টিটোসহ বিশ্বের বরেণ্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করেছেন। আলজেরিয়াতে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ সেই বক্তৃতা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বক্তৃতায় বলেছেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার।’ যখন সোভিয়েট ইউনিয়নে যান তখন দেশটির শীর্ষ চার নেতা পোদগর্নি, কোসিগিন, ব্রেজনেভ ও আঁন্দ্রে গ্রোমিকো তাকে অভ্যর্থনার জন্য ক্রেমলিনে সমবেত হন। ব্রেজনেভ বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমি ধন্য। আজ আপনার মতো মহান নেতার সান্নিধ্য লাভ করেছি।’ জাপান সফরকালে সম্রাট হিরোহিতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করে বলেছিলেন, ‘সত্যিই আপনি ইতিহাসের একজন মহান নেতা।’ তৎকালীন বিশ্বে মার্শাল টিটো অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। কাছে থেকে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। ’৭৩-এ কমনওয়েলথ সম্মেলনে ৩২টি দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান এসেছিলেন। আফ্রিকা মহাদেশের নেতারা কেনিয়ার জুমো কেনিয়াত্তা, জাম্বিয়ার কেনেথ কাউন্ডা, তাঞ্জানিয়ার জুলিয়াস নায়ারে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুইটলাম, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টুংকু আবদুর রাজ্জাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াকুব গোয়েনসহ বিশ্বের খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই কমনওয়েলথ সম্মেলনে এসেছিলেন। কিস্তু আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরতো। তিনি অন্তরে যা বিশ্বাস করতেন দেশের মানুষকে এবং বিশ্ববাসীকে তা-ই বলতেন। যেখানেই গিয়েছেন মানুষ তাকে আপন করে নিয়েছে। দীর্ঘ কারাবাসের পর পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছার সংবাদ শুনে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তৎক্ষণাৎ অবকাশ কেন্দ্র থেকে ফিরে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আপনি একজন মহান নেতা এবং আমি কখনোই ভাবিনি আপনার সঙ্গে দেখা হবে।’ এই ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

আজ বিশেষভাবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের থমথমে দিনটির কথা মনে পড়ে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বের হই, কাজ শেষে পুনরায় নেতার সঙ্গে দেখা করি। বিদায় নেওয়ার সময় বলি, বঙ্গবন্ধু, আমার তো মনে হয় তারা অবশ্যই আপনাকে গ্রেপ্তার করবে। দৃঢ়-প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘করুক না। তাতে কী? ওরা আমাকে আগেও গ্রেপ্তার করেছে এবং তাতে ওদের কোনো লাভ হয় নাই। ওরা ফের আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু এ থেকে ওরা কি সুবিধা পাবে আমি জানি না। ওরা যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাতেও ওদের কোনা লাভ হবে না। আমার মৃত্যুর বদলা নিতে বাংলার মাটিতে হাজারো শেখ মুজিবের জন্ম হবে। ওদের দিন শেষ এটা ওরাও জানে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আজ এই সত্যই আমার হৃদয়টাকে অনাবিল আনন্দে ভরে দিচ্ছে। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে এবং তুমি আমার লাশ দেখার সুযোগ পাও তখন দেখবে, আমি কেমন সুখে হাসছি।’ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা উদ্ধৃত করে বিষাদাচ্ছন্ন স্বরে অথচ অটল মনোবলে বলেছিলেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়...।’

’৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানের সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্রে হৃদয়ের অর্ঘ্য ঢেলে আবেগমথিত ভাষায় বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ স্থির-প্রতিজ্ঞ থেকে জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘ভাইয়েরা, তোমাদেরকে একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আজকে আমি বলি, আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কাজ করে যেতে হবে।’ সেদিন বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে-গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।’ বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালীর সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। যে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে বাংলার জন্য তিনি যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছেন বাঙালির জয়গান, সেই বাংলা ও বাঙালির জন্য তার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব; কিন্তু বাংলা ও বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে দরদ, যে ভালোবাসা তার গভীরতা অপরিমেয়।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

 

Header Ad
Header Ad

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ

অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‍ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে। এই ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "এটা শুধু অঙ্গীকার নয়, এটা আমাদের দায়।”

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের এলডি হলে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপের সময় আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, পুঞ্জীভূত সংকট থেকে উত্তরণে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে এসেছে। এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, “গত ৫৩ বছর ধরে যারা গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের দায় আছে। এই ঐক্য বজায় না রাখতে পারলে সব অর্জন হারিয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নই শেষ কথা নয়, প্রয়োজন গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং গণতন্ত্রচর্চার মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য অটুট রাখা।”

সংলাপে অংশ নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, “অংশীজনদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ গঠিত হবে। আর দ্বিমতের বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরাই হবে আমাদের দায়িত্ব।”

এর আগেও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ঐকমত্য কমিশন। আজ বিকেলে জেএসডির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি কমিশন গঠিত হয়েছে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছে এই কমিশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Header Ad
Header Ad

মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাংলাদেশি যুবক। রোববার (২৭ এপ্রিল) ভোররাতে উপজেলার মধুপুর সীমান্তের ওপারে, ভারতের অংশে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মোহাম্মদ মিকাইল (২২) ও মো. ওবায়দুল (২৩)। তারা দুজনই মহেশপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার ভোরে যাদবপুর সীমান্তের ওপার থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর কয়েকজন গ্রামবাসী সীমান্তের কাছাকাছি গিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়ে থাকা দুটি মরদেহ দেখতে পান। তারা দাবি করেন, মরদেহ দুটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকাজুড়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান: ‍শেহবাজ শরীফ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ছবি: সংগৃহীত

সিন্ধু নদ পানি চুক্তি স্থগিত করার পর ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা মেনে নেওয়া হবে না এবং পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক টেলিফোন সংলাপে এই মন্তব্য করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভি ওয়ার্ল্ড।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং এর জেরে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপের কড়া জবাব দিতে গিয়ে শেহবাজ বলেন, “পানিকে যদি ভারত রাজনৈতিক চাপের উপকরণে পরিণত করে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”

পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন শেহবাজ। তিনি বলেন, “এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সরাসরি বা পরোক্ষ সংযোগ নেই। বরং সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হলো পাকিস্তান। আমরা হাজার হাজার প্রাণ হারিয়েছি, বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।”

তিনি আরও জানান, পেহেলগামের ঘটনার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তে পাকিস্তান প্রস্তুত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তান সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি ইরান এই বিষয়ে মধ্যস্থতা বা ভূমিকা রাখতে চায়, তবে পাকিস্তান তা সাদরে গ্রহণ করবে।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে শেহবাজ কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময় কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের ন্যায্য দাবির পাশে থাকবে এবং জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে তাদের সমর্থন জানাবে।”

উল্লেখ্য, ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মীরি মুসলিম এই আন্দোলনকে স্বাধীনতার সংগ্রাম হিসেবে দেখে থাকেন, যদিও ভারত একে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ প্রেক্ষাপটে পানিকে ঘিরে চলমান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে জটিলতা তৈরি করেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান: ‍শেহবাজ শরীফ
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন
পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭
টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা