রমজানে কোনো অবস্থাতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সঠিক নয়
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। সাধারণ ভোক্তা যারা আছেন বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, তাদের দৈনন্দিন চাহিদাকে অনেক বেশি কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এমনকি অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয়ভারও অনেকে বহন করতে পারছে না। শিক্ষা-বিনোদন সবকিছুকে কাটছাঁট করে নূন্যতম জীবনযাপনের যে প্রয়োজনীয়তাটুকু মেটানোর চেষ্টা করছেন সেটিও মানুষের জন্য সংকুলান হয়ে উঠছে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, খাদ্য তালিকায় গরুর মাংস নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। সাধারণ মানুষ দুই মাসে এক আধবার যদি গরুর মাংসের চেহারা দেখে তাহলে মনে করে যে আমরা ভালো আছি। এমনকি ছোট মাছগুলিও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কাজেই বর্তমান বাজারে খুবই নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বৈশ্বিক বাজারে একটি মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশে আছি আমরা। জিনিসপত্রের আমদানি মূল্য যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, একইসাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আমদানি করা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় একই ধরনের যেসব পণ্য বাজারে রয়েছে সেসবেরও দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা এসব দাম বাড়াচ্ছে কারণ তাদেরও জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়।
আমি বলব, এখন মূল্যবৃদ্ধির সময় নয়। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হোক, ভর্তুকি দেওয়ার সাথে সাথে সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় যে অপচয় হয় তা অব্যবস্থাপনার জন্য, দুর্নীতির জন্য, অদক্ষতার জন্য এবং অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। তাই সাশ্রয়ী উপায় অবলম্বন করে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই পণ্যের মূল্য বাড়ানো সঠিক হবে না।
যেকোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সহনশীল রাখার উদ্দেশ্য হলো সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন। তবে কেউ যদি সরবরাহ বিঘ্নিত করার জন্য অপচেষ্টা করে, দ্রব্য সামগ্রী মজুদ করে, পণ্য পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত। কোনো অবস্থাতেই সাপ্লাই চেঞ্জ যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষত্রে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। সেটি আমরা আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের আয় খুবই সীমিত অথবা নির্দিস্ট আয়, তাদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সীমিত আয় দিয়ে তাদের জীবন যাত্রা সুস্থভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় সরকার নিম্নবিত্তদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হবেন বলে আমি আশা করি। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সাধুবাদ জানাই। এই কার্যক্রমকে যদি আরও সম্প্রসারিত করা যায়, যেটি বানিজ্যমন্ত্রী বলছেন-আরও কিছু প্রান্তিক মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা যায়। সবচেয়ে অসুবিধায় আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার তারা না পারে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে, না পারে সাশ্রয়ী মূল্যে কার্ডের অংশীদার হতে এরাই সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় আছে। সেক্ষত্রে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা থাকতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন প্রচেষ্টা চালাতে হবে, সরকারি পর্যায়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে মানুষের আয়-রোজগার বাড়ে। মানুষের আয়-রোজগার বৃদ্ধি যাতে ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়। মূল্যস্ফীতির দূর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব
এসআইএইচ