ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন
বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রথমত আমাদের ইন হাউজ ইকোনোমিক ভারসাম্য ঠিক রাখা দরকার। আমাদের দেশে বিদেশিরা ব্যবসা করতে এলে তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে যত কথা বলা হোক না কেন আসলে বাস্তবতা ঠিক সেরকম নয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, দেশের শেয়ারবাজারে কিছু তালিকাভুক্ত বিদেশি কোম্পানি আছে। এসব কোম্পানি যদি তাদের মুনাফা না পায় তারা এখানে আসবে কেন? আরও একটি দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ হয়। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু ভালো বলা যাবে না। সেটি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের সম্ভাবনার গল্পগুলো তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ২০০টির বেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১১ থেকে ১৩ মার্চ তিন দিনব্যাপী এ বিজনেস সামিটের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই। অবকাঠামো খাতে সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এখন বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে জানানো প্রয়োজন। তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও ওষুধ, প্লাস্টিক, ভোগ্য পণ্য, অটোমোবাইল, মোটরসাইকেলসহ ৩০টি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে সম্মেলনে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করাসহ এবং দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এই সামিট।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, আমাদের পলিসি তৈরিতেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আগে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে তারপর বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, ব্যবসাবান্ধব কাগজে কলমে যথেষ্ট আছে কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। আমাদের দেশে বড় ব্যবসায়ীরা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেটিই যথেষ্ট নয়। কারণ আমাদের এখানে সুষ্ঠু নীতিমালা নেই। তা ছাড়া এখানে ঘন ঘন নীতি বদল হয়। যে কারণে বিদেশিরা অসন্তুষ্ট হয় এবং বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না। এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি এলে আরেকটি তাকে অনুসরণ করে।
সে অর্থে আমি মনে করি যে, আমাদের এখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। আমাদের পথে পথে দুর্নীতি। তা ছাড়া এখানে ব্যবসার সংস্কৃতিও ক্ষতিকারক। কারণ ব্যবসা যারা করবেন, তাদের সে বিষয়ে জ্ঞান নেই। আজকাল ব্যবসার নামে সবই চাঁদাবাজি চলে। চাঁদাবাজিই হয়ে গিয়েছে বড় ব্যবসা র অনুষঙ্গ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে এগুলো করা হচ্ছে। যে কারণে এদেশে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে।
কাজেই আমি মনে করি, আমাদের মেধায় মননে অনেক বেশি পরিশুদ্ধ হতে হবে। কাজেই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়া সামিটগুলো কোনোভাবেই ফলপ্রসূ হবে না। দেশে ব্যবসার পরিবেশ থাকলে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
আবু আহমেদ: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এসএন