বাজার স্বাভাবিক রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন করতে হবে
বর্তমানে বিশ্ব বাজারে মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। জিনিসপত্রের আমদানি মূল্য যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় একই ধরনের যেসব পণ্য আছে সেসবেরও দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। আমদানি মূল্য যেহেতু বাড়ে টাকায়, কাজেই সেদিক থেকে ট্যাক্সও বাড়ে, যার ফলে ট্যাক্সও বাড়ছে।
মানুষ আসলে শান্তিতে নেই। সেটি আমরা আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ; যাদের আয় খুবই সীমিত অথবা নির্দিষ্ট আয়, তাদের জন্য জীবনযাপন খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমিত আয় দিয়ে তাদের জীবনযাত্রা সুস্থভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। কাজেই আমি বলব, কোনো ক্ষেত্রেই দাম বৃদ্ধি সুফল বয়ে আনবে না বরং এতে করে অসামঞ্জস্যতা আরও বেড়ে যাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কাজেই দাম বাড়িয়ে নয় বরং সরকারকে নীতিগত পরিবর্তন করেই সমাধানের নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।
এ ছাড়া যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে সংকট তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয়, বাজারকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজার স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের কর্মপন্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসের দাম সহনশীল রাখার উদ্দেশ্য হলো, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন। তবে কেউ যদি সরবরাহ বিঘ্নিত করার জন্য অপচেষ্টা করে, দ্রব্যসামগ্রী মজুদ করে, পণ্য পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কোনো অবস্থাতেই সাপ্লাই অব চেঞ্জ যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। হুটহাট করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বিশেষ করে, মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে।
বাজারের এই অস্থিরতার কারণে বড় ধরনের সমস্যায় সাধারণ মানুষ। বাজারকে স্বাভাবিক রাখতে সরকারের মনিটরিং পলিসি থেকে শুরু করে ফিজিক্যাল পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে। একই জমিতে কৃষক যেন বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং বেশি ফসল পান সেদিকে জোর দিতে হবে। আর যারা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে মুনাফা লুটতে চান, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী। তারা অতি মুনাফার লোভে সুযোগ পেলেই পণ্যের মূল্য বাড়ায়। পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের নিত্যপণ্যের মজুত, উৎপাদন ও আমদানি সন্তোষজনক। তারপরও রোজার এক-দুই মাস আগেই পণ্যের দাম বেড়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি গরুর মাংসে ৫০ টাকা, চিনিতে ৮, পেঁয়াজে ১৫ ও আমদানি করা রসুনে ১০ টাকা বেড়েছে। রোজা সামনে রেখে এই দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।
দুনিয়াজুড়ে যখন পণ্য বিক্রি বেশি হয় তখন দাম কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হলেও দাম বাড়ানো হয়। রোজার আগে বিভিন্ন পয়েন্টের চাঁদার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যাদের এসব দেখা দরকার তারাও তখন হয় ঘুমিয়ে থাকেন, নয়তো সেই সময় চোখের অসুখে ভোগেন।
এ ছাড়াও ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সেবা পেতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের জনমত গঠন করতে হবে প্রতিবাদ করতে হবে। যাতে করে সরকার জনগণের স্বস্তির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রমজানকে সামনে রেখে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
গোলাম রহমান: সভাপতি, ক্যাব
এসএন