জনবান্ধবমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে
মূল্যস্ফীতি বিষয়টি এখন ‘বাস্কেট অব কমোডিটি’ হয়ে গেছে। এখন মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি অথবা অধঃগতি নির্ভর করে ভোক্তা কীভাবে সেটিকে কনজিউম করে। আমরা যেটিকে গুরুত্ব দিই সেটি হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ চাল, আটা, ডাল, মাংস, ভোজ্যতেল ইত্যাদি। এখন এ সব দ্রব্যগুলো কতটুকু স্থিতিশীল থাকে সেটি নির্ভর করে তার সরবরাহের উপর। আমাদের ডিম্যান্ডসাইড মোটামুটি স্থির আছে। এখন সরবরাহের ঘাটতি থাকলে এটি বাড়তে থাকবে। সেটি ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ— যেটিই হোক না কেন সেটি বাড়বে।
মূল্যস্ফীতিতে সরকারের ভূমিকা আছে। আমাদের বিনিময় হার ঠিক রাখতে হবে। বিনিময় হার ঠিক রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থির থাকবে। টাকা ও ডলারের বিনিময় হার ঠিক রাখতে হবে। সেটি বেশি আপস অ্যান্ড ডাউন করে সেটি বিনিময়ও হবে না মূল্যস্ফীতিও ধরে রাখা যাবে না। মৌসুমি মূল্যস্ফীতি আছে কিছু। দেখা যায় সরবরাহ কম হলে এগুলোর চাহিদা বাড়বে। সেটি মেনে নেওয়া যায়। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরে সবকিছু নির্ভর করছে।
বাংলাদেশে অর্থনীতির জন্য আগামী ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন ডলার সংকট আছে। ইনভেস্টমেন্ট অফ র মেটেরিয়ালস। মেডিক্যাল ফার্মা সেক্টরের মেটেরিয়ালস ইত্যাদি আনা যাচ্ছে না ডলার সংকটের কারণে। আমাদের ডলার সংকট আছে। সেটি পাকিস্তান অথবা শ্রীলঙ্কার মতো না। আগামী ছয় মাসে বোঝা যাবে।
এক শ্রেণির মানুষ টাকা পাচার করছে। এরাই ডলারের দাম বাড়াচ্ছে। এদের মধ্যে আবার বিরাট একটি অংশ ঋণ খেলাপি। ব্যাংকগুলো যে আর্থিকভাবে ঋণ খেলাপি হয়েছে এদের মাধ্যমেই হয়েছে। আমরা যে কথাগুলো আগে থেকেই বলেছি, তারা এটি অনুধাবন করছে। আইএমএফ আমাদের লোন দেবে। আইএমএফ হচ্ছে ঋণ বিক্রেতা এবং সুদসহ সেটি আদায় করা।
সরকারের আমলা যারা তাদেরও এখন আগে থেকেই বুঝতে হবে। সমস্যা যে আছে তারাও এটি অনুধাবন করছে। আমার কথা হচ্ছে যে, ঋণ নিয়ে ঘি খেলে হবে না। আমরা ঋণ গ্রহীতা যারা আছি, তারা আইএমএফ এর মূল কাস্টমার। এখন আইএমএফ শ্রীলকঙ্কাকে ঋণ দিলে টাকা ফেরত পাবে না। পাকিস্তানকে দিলে ডলার ফেরত পাবে না। এখন আইএমএফ এদের ঋণ দিয়ে বিপদে পড়তে চায় না।
তা ছাড়া আমরা আইএমএফ থেকে যে পরিমাণ ঋণ পাচ্ছি সেটিতো খুব বেশি কিছু না। এটি বাজেটের একটি সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর চেয়ে অনেক বেশি রেমিট্যান্স আসে দেশে। কাজেই এই ঋণকে আমি বিশেষ কোনো সফলতা অথবা প্রাপ্তি বলেও মনে করি না। এটি এক ধরনের সহায়ক মাত্র ।
আমাদের দেশে আইনের সুশাসন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসাথে মনিটরিং খুব দরকার।যেটি এখানে ঠিকমতো হয় না। এগুলো দেখার কেউ নেই। কাজেই আমি মনে করি জনকল্যাণে কাজ করতে সে লক্ষ্যে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। জনবান্ধবমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। নীতিনির্ধারক যারা আছেন তাদের দেশের মানুষের কথা আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে।
আবু আহমেদ: অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/