দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক
বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক যে প্রেক্ষাপট, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির সম্ভাবনা আছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে আমরা পুরো বছরের একটি পর্যবেক্ষণমূলক বিশ্লেষণ উত্থাপন করেছি। আমরা এ বিষয়ে একটি রিটও করেছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। যে কারণে মানুষের মধ্যে অসন্তোষতো আছেই। হতাশাও চরম আকার ধারণ করেছে বলে আমি মনে করি। এর ফলে জীবন মানের ব্যাপক অবনতির আশঙ্কা আছে। এখন সরকারকে মানুষের ভালো-মন্দ দেখার কথা। এদের মধ্যে দেখা যায় যে, সীমাহীন উদ্ধত প্রকাশ— যা বাড়ছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে এখনই সাবধান না হলে ঘোর অন্ধকার অর্থাৎ ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে।
তবে আশার কথা যে, আমাদের কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক বলেই মনে হচ্ছে। এটি একটি স্বস্তির বিষয় আমাদের জন্য। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়তির দিকে থাকতে পারে। সরকার বলছে জ্বালানিক্ষেত্রে ভর্তুকি তুলে দেবে। সেক্ষেত্রে ভর্তুকি তুলে দিলে দাম আরও বেড়ে যাবে। তবে সাধারণ জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা ও স্বস্তিদানের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় আরও অধিক হারে বৃদ্ধি করার দরকার আছে বলে মনে হয় এবং সেক্ষেত্রে সঠিক মনিটরিং দরকার মনে করি।
এর ফলে দরিদ্র মানুষের কিছুটা স্বস্তি হয়ত আসতে পারে। সাশ্রয়ী দামে স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে টিসিবির পণ্য তুলে দিতে আরও আগেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল।
একদিকে, তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে এখনো তা পৌঁছেনি। এমন হযবরল অবস্থা প্রত্যাশিত নয়। এমনকি জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি পরিবার বিশ্বাস করে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রনের অভাব রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই চায়, সরকার সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনুক। যদিও এদের এক-তৃতীয়াংশের পরামর্শ ছিল মূল্য হ্রাস করা বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য। এটা স্পষ্ট দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে আয়ের দিক থেকে অভিন্নতা রয়েছে।
সংকটকালে দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর আয় তীব্রভাবে কমেছে। সে তুলনায় দারিদ্র্য থেকে পুনরুদ্ধারের গতি বেশ মন্থর, বিশেষত দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য। মহামারির পর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য নারীপুরুষ কর্মহীন।
দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনেক সময় বিশেষ বিশেষ পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয় বা উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়। যেমন লবণ আমদানি নিষিদ্ধ আর চাল আমদানির ওপর ৬২ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। দেশে সরবরাহ ঘাটতি হওয়ায় চাল আমদানির শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকার ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করছে। সরকারি গুদাম থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রমও গৃহীত হয়েছে। এতে চালের মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সেসব পণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট হ্রাস করেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হয়, সে লক্ষ্যে টিসিবির ট্রাকসেল সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং এক কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে কয়েকটি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে।
গোলাম রহমান: সভাপতি, ক্যাব
আরএ/