রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন

বাঙালি জাতির জীবনে ১০ জানুয়ারি অনন্য ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭২-এর এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করে। যদিও ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদার মুক্ত হয়। কিন্তু বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। যতক্ষণ মহান নেতা ফিরে না এসেছেন, ততক্ষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনি। স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়, যেদিন জাতির জনক স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন সোনার বাংলায় ফিরে এসেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের প্রধান কারাগার লায়ালপুর জেলে রাখা হয়েছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সামরিক আদালতে তার বিচার শুরু হয়। বিচারের রায় ছিল পূর্বনির্ধারিত। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের সময় ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন বিনা শাস্তিতে সে পার পাবে না। বিচারটা ছিল প্রহসনের। গোটা বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি আদালতে চুপচাপ বসে থাকতেন। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে তার পক্ষে নিয়োগ করা আইনজীবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মুজিব নিজের পক্ষে কোনো অবস্থান নিতে চান কি না।’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আমাকে অথবা আমার জনগণকে বিচার করার কোনো অধিকার এদের নেই। আইনের দিক দিয়ে কোনো বৈধতা এই আদালতের নেই।’ (পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবের বন্দীজীবন, আহমেদ সালিম) ’৭১-এর ৩ ডিসেম্বর, প্রহসনমূলক বিচরের রায়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দ- হয়। পরে তাঁকে লায়ালপুর থেকে স্থানান্তর করা হয় মিয়ানওয়ালি জেলে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তার কারাকক্ষের পশে কবর খোঁড়া হয়।’ আহমেদ সালিম লিখেছেন, ‘জেলের ডেপুটি সুপার ফজলদাদ একদিন ব্যারাকে এসে ৮ জন বন্দিকে বাছাই করলেন। এদের দিয়ে ৮ ফুট লম্বা, ৪ ফুট প্রশস্ত ও ৪ ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া হলো। উপস্থিত সবাই বুঝতে পারলেন সেই রাতেই শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়া হবে। ৯টার মধ্যে কবর খোঁড়া সম্পন্ন হলো। কিন্তু সেই রাতে কিছু ঘটলো না। ফাঁসি দেওয়ার নির্ধারিত দিন জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে শেখ মুজিবকে ফাঁসি না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, যদি মুজিবকে ফাঁসি দেওয়া হয় তবে বাঙালির ক্রোধের লক্ষ্য হবে পূর্বাঞ্চলে মোতায়েনকৃত পাকবাহিনীর সর্বোচ্চ অফিসার থেকে সর্বনিম্ন সৈনিক পর্যন্ত সবাই। ভুট্টোর উপদেশ অনুসারে ইয়াহিয়া খান মুজিবের ফাঁসি স্থগিত রাখেন। কয়েকদিনের জন্য কবর ভরাট করা হয়। ১৫ দিন পর একইভাবে গর্ত খোঁড়ার হুকুম আসে। এবারও শেখ মুজিবের ফাঁসি দেওয়া হলো না। এমনি প্রক্রিয়া ৩ বার ঘটেছিল এবং ৩ বারই তার ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়া হয়।’ (প্রাগুক্ত) ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয়ী হলে, ইয়াহিয়া খান সেই আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। পাকিস্তানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর ইয়াহিয়া খানকে অপসারণ করে ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। ইয়াহিয়া খান ভুট্টোর কাছে আবেদন করেছিলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেটি হলো শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো, আমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হোক।’ যে কারণে ভুট্টো মিয়ানওয়ালি কারাগারের জেল সুপার হাবীব আলী’র কাছে বার্তা পাঠায় এবং বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালি কারাগার থেকে চশমা ব্যারাজ’স্থ হাবীব আলী’র বাসভবনে নিয়ে রাখা হয়। এরপর ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুনয়-বিনয় করে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সম্পর্ক রাখার জন্য অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু ঘৃণাভরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

ভারতের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়ে তাঁকে মুক্তি দিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রেখে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাঁকে লন্ডন পৌঁছে দেয়। দ্রুতগতিতে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে বরণ করতে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেবে। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করেন ব্রিটিশ সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ব্রিটেনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলে পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা লেবার পার্টির হ্যারল্ড উইলসন (পরে প্রধানমন্ত্রী) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। হ্যারল্ড উইলসন প্রথম কোনো রাজনৈতিক নেতা যিনি করমর্দনের জন্য বঙ্গবন্ধুর দিকে হাত বাড়িয়ে প্রথম উচ্চারণ করেন ‘গুডমর্নিং মিস্টার প্রেসিডেন্ট’। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপাওে ব্রিটেনের অনুসৃত নীতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কনজারভেটিভরা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাবো।’

উল্লেখ্য যে, দেশ স্বাধীনের পর ’৭২-এর ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম পশ্চিমা দেশ হিসেবে ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বিকালে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে বরণ করেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ। আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এডওয়ার্ড হিথ বলেন, ‘আপনাকে কী সহযোগিতা করতে পারি বলুন।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি দ্রুত দেশে ফিরতে চাইছি।’ এডওয়ার্ড হিথ ত্বরিৎগতিতে ব্যবস্থা নেন। বৈঠক চলাকালেই নিশ্চিত হয় যে, ব্রিটিশ রাজকীয় কমেট জেট বিমানে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবেন জাতির জনক। বৈঠক শেষে বিদায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন গাড়িতে উঠবেন তখন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ সৌজন্য প্রদর্শন করে গাড়ির দরজা খুলে দেন। কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এমন সম্মান পূর্বে দেখাননি। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হিথের সমালোচনায় হয়। তিনি সে-সব সমালোচনার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি যাকে সম্মান প্রদর্শন করেছি তিনি একটি জাতির মুক্তিদাতা মহান বীর। তাঁকে এই সম্মান প্রদর্শন করতে পেরে বরং আমরাই সম্মানিত হয়েছি।’ জাতির জনক শুধু বাঙালীর বন্ধু নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু তথা বিশ্ববন্ধু। বিশ্ব নেতারা তাঁকে এভাবেই সম্বোধন করতেন।

৯ জানুয়ারি লন্ডনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু একটি বিবৃতি প্রদান করেন। ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলার মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীনতার অপরিসীম ও অনাবিল আনন্দ অনুভব করছি। এই মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। আমার জনগণ যখন আমাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছে তখন আমি রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি হিসেবে একটি নির্জন ও পরিত্যক্ত সেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের জন্য ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে আমি ধন্যবাদ জানাই। স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তব সত্য। এ দেশকে বিশ্বের স্বীকৃতি দিতে হবে। বাংলাদেশ অবিলম্বে জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য অনুরোধ জানাবে।’ পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজী নই। আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।’ বিবৃতির শেষে সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে আপনার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন সেই দেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপ?’ তখন জাতির জনক উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমার বাংলার মানুষ যদি থাকে, বাংলার মাটি যদি থাকে, একদিন এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই আমি আমার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব।’

১৬ ডিসেম্বর প্রিয় দেশ শত্রুমুক্ত হলেও তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা জানতাম না। যেদিন ৮ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সংবাদ জানলাম সেদিন এক অনির্বচনীয় আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেল সারা দেশে। যেদিন তিনি ফিরে এলেন সেদিনটি ছিল সোমবার। সকাল থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে চারদিক মুখরিত করে মিছিল নিয়ে বিমানবন্দর অভিমুখে। রণক্লান্ত যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধা, শ্রদ্ধাবনতচিত্তে সংগ্রামী জনতা, অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে সন্তানহারা জননী, স্বামীহারা পত্নী, পিতৃহারা পুত্র-কন্যা সব দুঃখকে জয় করে স্বজন হারানোর বিয়োগ ব্যথা ভুলে গর্বোদ্ধত মস্তকে সকলেই অধীর আগ্রহে সেদিন অপেক্ষায় ছিল দু’হাত বাড়িয়ে জাতির জনককে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করার জন্য।

ঢাকায় যখন সাজ সাজ রব, তখন সকাল হতেই দিল্লীর রাজপথ ধরে হাজার হাজার মানুষের মিছিল পালাম বিমানবন্দর ও প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। দিল্লীর জনসাধারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে এক অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট জেটটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবতরণ করলে তাঁর সম্মানে ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর পূর্বেই উপস্থিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ তাঁকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, ‘আপনার জন্য আমি গর্বিত। ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ আপনার জন্য গর্ব অনুভব করে। শেখ মুজিবকে আমাদের মাঝে পেয়ে ভারতের জনগণ আজ আনন্দে আত্মহারা। শেখ মুজিব তাঁর জনগণকে নতুন জীবন দান করেছেন। তাঁর স্বাধীনতার স্বপ্ন আজ সার্থক।’ দিল্লীতে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতিকালে লক্ষ মানুষের সমাবেশে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ভারতবাসীর উদ্দেশে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেন, ‘আমার জন্য এটা পরম সন্তোষের মুহূর্ত। বাংলাদেশে যাবার পথে আমি আপনাদের মহতী দেশের ঐতিহাসিক রাজধানীতে যাত্রাবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ কারণে যে, আমাদের জনগণের সবচেয়ে বড় বন্ধু ভারতের জনগণ এবং আপনাদের মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী-যিনি কেবল মানুষের নন, মানবতারও নেতা। তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের কাছে এর মাধ্যমে আমি আমার ন্যূনতম ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারব। এ অভিযাত্রা সমাপ্ত করতে আপনারা সবাই নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং বীরোচিত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দীদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায়। অবশেষে আমি নয় মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি।’ অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধু একান্তে ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমি ঋণী। আপনি আমার বাংলার মানুষকে অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছেন; আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কঠিন দিনগুলোতে আপনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আপনার কাছে আমরা চিরঋণী। প্রধানমন্ত্রী, আপনার নিকট আমার একটি অনুরোধ। আপনি কবে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবেন।’ শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মহানুভবতার স্বরে বলেছিলেন, ‘আপনি যেদিন চাইবেন।’ বঙ্গবন্ধু এমন বিচক্ষণ নেতা ছিলেন যে, এ রকম একটি অবস্থার মধ্যেও রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যার্পণের বিষয়টি আলাপ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করে নেন।
এরপর অবসান ঘটে আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার। দিল্লী থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট বিমানটি ঢাকার আকাশ সীমায় দেখা দিতেই জনসমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। দুপুর ১:৫১ মিনিটে ঢাকা বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করে। বিমানে সিঁড়ি স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও অন্যান্য নেতারা, আমরা মুজিব বাহিনীর চার প্রধান, কেন্দ্রীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ছুটে যাই নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে। আমার হাতে ছিল পুষ্পমাল্য। জাতির জনককে মাল্যভূষিত করার

সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে এক অবিস্মরণীয় ক্ষণ, অভূতপূর্ব মুহূর্ত। বিমানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু জনতার মহাসমুদ্রের উদ্দেশে হাত নাড়েন। তাঁর চোখে তখন স্বজন হারানোর বেদনা-ভারাক্রান্ত অশ্রুর নদী, আর জ্যোতির্ময় দ্যুতি ছড়ানো মুখাবয়ব জুড়ে বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্তির হাসি। বিমানের সিঁড়ি বেয়ে জাতির জনক তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি করে রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি সম্মান জানানো হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। চারদিক থেকে তাঁর উপর পুষ্পবৃষ্টি হতে থাকে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী রাষ্ট্রপ্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণী ওসমানী, লে. কর্নেল শফিউল্লাহ্ এবং বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র লেফটেন্যান্ট শেখ কামাল জাতির জনকের পাশে ছিলেন। গার্ড অব অনার পরিদর্শনের পর বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা, ঢাকাস্থ বিদেশি মিশনের সদস্যরা, মিত্র বাহিনীর পদস্থ সামরিক অফিসার, বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে করমর্দন করেন।

রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যাওয়ার জন্য জাতীয় নেতারাসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপেক্ষমান ট্রাকে চেপে রওয়ানা দেই। সুদৃশ্য তোরণ, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত রাজপথের দু’পার্শ্বে দাঁড়ানো জনসমুদ্র পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ময়দানে পৌঁছলাম। লক্ষ লক্ষ অপেক্ষমান জনতার মুহুর্মুহু করতালি আর ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ রণধ্বনিতে চারদিক মুখরিত। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠে চতুর্দিকে তাকালেন এবং রুমালে মুখ মুছলেন। বঙ্গবন্ধুর মখের দিকে তাকিয়ে আমার কেবলই মনে হয়েছে, জাতির জনক জীবনভর এমন একটি দিনের অপেক্ষায়ই ছিলেন। দীর্ঘ কারাবাসের ক্লান্তিতে মলিন মুখটি তবু সমুজ্জ্বল। উন্নত ললাট, প্রশান্ত বদন, দু’চোখ তখনো অশ্রুসিক্ত, কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ। সে অবস্থায়ই চিরাচরিত ভঙ্গিতে ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে উপস্থিত জনসমুদ্রের উদ্দেশে নিবেদন করলেন তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা। হৃদয়ের সবটুকু অর্ঘ্য ঢেলে আবেগঘন ভাষায় বললেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন নির্জন কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গোনা একজন মানুষ কী করে এ রকম উদ্বেলিত পরিস্থিতিতেও স্থির-প্রতিজ্ঞ থেকে বলছেন, ‘ভাইয়েরা, তোমাদেরকে একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আজকে আমি বলি, আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কাজ করে যেতে হবে।’ আরও বললেন, ‘সকলে জেনে রাখুন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের স্থান চতুর্থ।’ বক্তৃতায় তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বললেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে-গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।’ ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মদান স্মরণ করে বেদনা-ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাংলায় আজ বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে বলেন, ‘গত পঁচিশে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। বিশ্বকে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এসব কুকীর্তির বিচার করতে হবে।’ পরিশেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি। কবিগুরুর মিথ্যা কথা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ।’ লক্ষ লক্ষ মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে এবং পরম পরিতৃপ্ত হয়েছে এই ভেবে যে, আজ থেকে আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। সভামঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ১৮ নং বাড়িতে গেলেন। যেখানে পরিবারের সদস্যবৃন্দ অবস্থান করছিলেন। সেই বাড়ির সামনে আর একটি বাড়ি তখন তাঁর জন্য রাখা হয়েছিল। কেননা ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবনটি শত্রুবাহিনী এমনভাবে তছনছ করে দিয়েছিল যা বসবাসের অনুপযুক্ত ছিল। প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে ১১ জানুয়ারি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন এবং ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আমাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁর রাজনৈতিক সচিব করেন। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। কাছে থেকে দেখেছি দিবারাত্রি নিরলস পরিশ্রম করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বাভাবিক করতে যখন তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন তখনই দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্র জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করল!

জাতির জনকের দুটি স্বপ্ন ছিল-বাংলাদেশ স্বাধীন করা, এবং দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়ে প্রথম স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন। আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে যখন দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন, তখনই বুলেটের আঘাতে সপরিবারে জাতির জনককে হত্যা করা হলো। আমাদের সৌভাগ্য তাঁর দুই কন্যা তখন বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান। ’৮১-এর মধ্য ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে রক্তে ভেজা আওয়ামী লীগের পতাকা আমরা তুলে দিয়েছিলাম। সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। প্রতিপক্ষের শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক আজ ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে ধাবমান। করোনা অতিমারী সফলভাবে মোকাবিলা ও দেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন প্রদান করে তিনি মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সম্প্রতি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে নিষেধাজ্ঞার যে কূটকৌশল চলছে আশা করি সেই পরিস্থিতিও ধৈর্যের সঙ্গে তিনি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বিশ্বজুড়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন মেট্রোরেল চালু করেছেন। যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জাতির জনক ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ তা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে চলেছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের চরম শিখরে নিয়ে যাবেন এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবেন।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ

Header Ad
Header Ad

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ

অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‍ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে। এই ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "এটা শুধু অঙ্গীকার নয়, এটা আমাদের দায়।”

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের এলডি হলে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপের সময় আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, পুঞ্জীভূত সংকট থেকে উত্তরণে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে এসেছে। এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, “গত ৫৩ বছর ধরে যারা গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের দায় আছে। এই ঐক্য বজায় না রাখতে পারলে সব অর্জন হারিয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নই শেষ কথা নয়, প্রয়োজন গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং গণতন্ত্রচর্চার মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য অটুট রাখা।”

সংলাপে অংশ নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, “অংশীজনদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ গঠিত হবে। আর দ্বিমতের বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরাই হবে আমাদের দায়িত্ব।”

এর আগেও বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ঐকমত্য কমিশন। আজ বিকেলে জেএসডির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি কমিশন গঠিত হয়েছে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছে এই কমিশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Header Ad
Header Ad

মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাংলাদেশি যুবক। রোববার (২৭ এপ্রিল) ভোররাতে উপজেলার মধুপুর সীমান্তের ওপারে, ভারতের অংশে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মোহাম্মদ মিকাইল (২২) ও মো. ওবায়দুল (২৩)। তারা দুজনই মহেশপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার ভোরে যাদবপুর সীমান্তের ওপার থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর কয়েকজন গ্রামবাসী সীমান্তের কাছাকাছি গিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়ে থাকা দুটি মরদেহ দেখতে পান। তারা দাবি করেন, মরদেহ দুটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকাজুড়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান: ‍শেহবাজ শরীফ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ছবি: সংগৃহীত

সিন্ধু নদ পানি চুক্তি স্থগিত করার পর ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা মেনে নেওয়া হবে না এবং পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক টেলিফোন সংলাপে এই মন্তব্য করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভি ওয়ার্ল্ড।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং এর জেরে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপের কড়া জবাব দিতে গিয়ে শেহবাজ বলেন, “পানিকে যদি ভারত রাজনৈতিক চাপের উপকরণে পরিণত করে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”

পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন শেহবাজ। তিনি বলেন, “এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সরাসরি বা পরোক্ষ সংযোগ নেই। বরং সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হলো পাকিস্তান। আমরা হাজার হাজার প্রাণ হারিয়েছি, বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।”

তিনি আরও জানান, পেহেলগামের ঘটনার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তে পাকিস্তান প্রস্তুত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তান সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি ইরান এই বিষয়ে মধ্যস্থতা বা ভূমিকা রাখতে চায়, তবে পাকিস্তান তা সাদরে গ্রহণ করবে।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে শেহবাজ কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময় কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের ন্যায্য দাবির পাশে থাকবে এবং জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে তাদের সমর্থন জানাবে।”

উল্লেখ্য, ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মীরি মুসলিম এই আন্দোলনকে স্বাধীনতার সংগ্রাম হিসেবে দেখে থাকেন, যদিও ভারত একে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ প্রেক্ষাপটে পানিকে ঘিরে চলমান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে জটিলতা তৈরি করেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান: ‍শেহবাজ শরীফ
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন
পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭
টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা