গৌরবের সেই ইতিহাস
এ বছর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী তথা হীরকজয়ন্তী উদ্যাপন করছে। ১৯৭৩-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস।’ বাঙালির আধুনিক কালের ইতিহাস অনুযায়ী কথাটি আক্ষরিক অর্থেই সত্য। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এই চারটি নাম সমার্থক। বাঙালি জাতিসত্তাকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় সত্তায় অভিষিক্ত করতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, অসীম ত্যাগ ও অবদান অনস্বীকার্য। নিজ জাতির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের প্রতিটি ধাপে অগ্রণী ভূমিকা পালনের এমন দৃষ্টান্ত আন্তর্জাতিক ছাত্র রাজনীতিতে দুর্লভ। এজন্য বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে অভিহিত করেছিলেন অগ্রগামী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে। অগ্রসর ভূমিকা পালনে দৃঢ়সঙ্কল্পবদ্ধ ছাত্রলীগ গৌরবময় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি ধাপেই আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠিত করতে হারিয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামে এই মহত্তর আত্মদান একটি ছাত্র সংগঠনের জন্য বিরল গৌরবের।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের জয়যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ৪.৫ শতাংশ লোক যে উর্দু ভাষায় কথা বলে সেই জনবিচ্ছিন্ন ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার উদ্যোগ ও শাসক মুসলিম লীগের প্রতারণামূলক অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুসলিম লীগের তরুণ নেতৃত্ব গঠন করে ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠিত করে ছাত্র সমাজের মাঝে রাজনৈতিক অধিকারের চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গঠিত হয় ছাত্রলীগ। গঠন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, নূরউদ্দিন আহমেদ, এম এ ওয়াদুদ, নঈমউদ্দিন আহমেদসহ ১৪ জন প্রগতিবাদী ছাত্রনেতা। প্রতিষ্ঠার মহতীলগ্নে গঠনমূলক ১০টি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে ছাত্রলীগের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি; দেশরক্ষা; স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম; ছাত্র সমাজকে দলীয় রাজনীতি মুক্ত রাখা; নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে জেহাদ; আধুনিক ধ্যান-ধারণা ও কৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত চরিত্রের অধিকারী বিপ্লবী কর্মী সৃষ্টি; জাতি ও দেশের কল্যাণে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা; জনকল্যাণে নিয়োজিত থাকা ও গণস্বার্থবিরোধী কর্মে সংগ্রাম; প্রাপ্ত বয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকারের দাবী আদায়; দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও চোরাকারবারীদের উচ্ছেদ সাধন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছাত্র আন্দোলন পরিচালনার যে রেওয়াজ প্রচলিত আছে তার ধ্বংস সাধন। উপরোক্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর ধারক বাহক ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সমাজের অধিকার শুধু নয় গোটা বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
প্রতিষ্ঠার পরপরই মার্চের ২ তারিখে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছাত্রলীগ নেতা জনাব সামছুল আলম। রাষ্ট্রের অন্যতম ভাষা বাংলার দাবীতে ১১ মার্চ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে সমগ্র প্রদেশব্যাপী হরতাল, সভা ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালিত হয়। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এটি ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রথম হরতাল। এদিন হরতাল কর্মসূচিতে পিকেটিং করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আহত ও গ্রেপ্তার হন। হরতালে সরকারের নৃশংস ভূমিকার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের আহ্বানে ১২ মার্চ সারা দেশে প্রতিবাদ সভা, ১৩ মার্চ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট, ১৪ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের ডাকে লাগাতার আন্দোলনে টনক নড়ে সরকারের। ১৫ মার্চ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গভর্নর হাউজে (বর্তমান বাংলা একাডেমির বর্ধমান ভবন) মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকেন। বৈঠক চলাকালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে ও নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে গভর্নর হাউজের বাইরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ প্রণীত ও ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনুমোদিত ৭ দফা মেনে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বরাবরে দাবি জানায়। মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ৭ দফা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন এবং সরকারের পক্ষে খাজা নাজিমউদ্দিন ও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ছাত্রলীগ নেতা কামরুদ্দিন আহমেদ একটি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন। ৭ দফা দাবি সম্বলিত চুক্তিনামাটি মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন মেনে নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রনেতাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। শাসকগোষ্ঠী ছাত্রনেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজকে আপাত শান্ত করেই মেতে ওঠে নতুন চক্রান্তে। ৭ দফা দাবির ৩ নং দফায় বলা হয়েছিল, ‘১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদে বেসরকারি বিল আলোচনার জন্য নির্ধারিত তারিখে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার এবং তাকে পাকিস্তান গণপরিষদে এবং কেন্দ্রীয় চাকরি পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমান মর্যাদা দানের নিমিত্তে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।’ আর ৪ নং দফায় বলা হয়েছিল যে, ‘পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে এপ্রিল মাসে একটি প্রস্তাব তোলা হবে যে, প্রদেশের অফিস-আদালতের ভাষা ইংরেজীর স্থলে বাংলা হবে।’ এই দু’টি দফা নিয়ে কর্তৃপক্ষের চক্রান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলে। প্রতিবাদে ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল আইন পরিষদের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে, বঙ্গবন্ধুসহ ১৯ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আহত হন। ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন এবং ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমাবেশে ও ২৪ মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দু’স্থানেই দম্ভভরে ঘোষণা দেন, উর্দু কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় এবং রাষ্ট্র ভাষা অন্যকিছু নয়...।’ এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগ নেতারা গর্জে উঠেছিলেন। সভাস্থলেই তাৎক্ষণিক ‘ঘড়’ ‘ঘড়’ অর্থাৎ ‘না’ ‘না’ প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল।
’৪৮-এর ১১ মার্চের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, ’৪৯-এ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন, ’৫০-এ গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তৈরি, ’৫২-এর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করায় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব প্রদান করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত আদর্শ-উদ্দেশ্যর প্রতি অবিচল থেকে ছাত্রলীগ অর্জন করে অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ। যার প্রতিফলন ঘটে ’৫৩তে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মুসলিম ছাত্রলীগের স্থলে ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ নামকরণ করা হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগের অসাম্প্রদায়িকরণের পূর্বেই ছাত্রলীগকে অসাম্প্রদায়িক করা হয়। একই বছর ডাকসু ও বিভিন্ন হল সংসদের নির্বাচনে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে নির্বাচনী জোট গঠিত হয়। ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে আশাতীত সাফল্য অর্জন করে এবং মুসলিম লীগ সমর্থিত নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করতে বাধ্য করে। ছাত্রলীগের প্রস্তাবে ও নেতৃত্বে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের’ চেতনাই পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে ’৫৪-এর ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ভিত্তি তৈরি করে এবং হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করে মুসলিম লীগকে বিদায় দেয়। নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২২২টি আসনেই যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী বিজয়ী হয়। যুক্তফ্রন্ট গঠনে এবং যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরপর ’৫৫-এর ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর, আওয়ামী মুসলিম লীগের ৩ দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ গঠনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ’৪৮-এ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ’৫৫ পর্যন্ত কালে ৭ বৎসরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত চেতনার বলে ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অগ্রগামী বাহিনী ছাত্রলীগের মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটান। যে আদর্শ-উদ্দেশ্য ধারণ করে ছাত্রলীগের শুভ সূচনা হয়েছিল তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার মধ্য দিয়েই ছাত্রলীগের মতাদর্শিক চেতনার ভিত্তি স্থাপিত হয়।
’৫৮তে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে বিভিন্ন ফরমান-আদেশ বলে রাজনীতি করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন মেয়াদে যেমন, ১৪ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড, বেত্রাঘাত, অর্থ জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের দণ্ড প্রদানের ব্যবস্থা করে। ফলে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ছাত্রলীগ ‘শিল্প-সাহিত্য সংঘ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। ’৬০-এর দশকের শুরুতে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ করে শরীফ কমিশন ও হামুদুর রহমান কমিশনের শিক্ষানীতি, রবীন্দ্র চর্চা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে ছাত্রলীগ সমমনা সংগঠনগুলোকে নিয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে। ’৬৬-তে ৬ দফা দেওয়ার পর আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগের হুমকি প্রদান করেন। শুরু হয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের উপর দমন নীতি। বঙ্গবন্ধুর উপর ৬টি মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তারি ও হয়রানি ’৬৬-এর এপ্রিল মাস জুড়ে চলতে থাকে এবং ৮ মে রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে।
এ রকম চরম দমন-নির্যাতনের ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। ’৬৭-এর ১৭ জানুয়ারি, সেদিন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র সহসভাপতি নির্বাচিত হই। তখন ৬ দফার আন্দোলন চলছে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে অন্তরীণ। সেদিন রাতেই প্রিয় নেতার কাছ থেকে একটা গোপন পত্র পাই। তিনি লিখেছেন, ‘স্নেহের তোফায়েল, তুই ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, এই ডাকসুর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি আন্দোলন গড়ে উঠবে। মুজিব ভাই।’ সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য তাকে প্রধান আসামি করে সর্বমোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি কক্ষে আটকে রাখে। এর প্রতিবাদে ’৬৮-এর ২৬ ডিসেম্বর ডাকসুর পক্ষ থেকে আমি সহসভাপতি এবং নাজিম কামরান চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক, আমরা সমগ্র পাকিস্তানে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ‘কালো পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন’ এই কর্মসূচি গ্রহণ করি। ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে আমার সভাপতিত্বে এবং ৪ ছাত্র সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে ৬ দফা দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে ৬ দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত ১১ দফায় অন্তর্ভূক্ত করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমরা জানতাম আমাদের ১১ দফায় ধারিত আছে গণমানুষের দাবি। আমাদের আন্দোলনের দৃঢ়তা, দ্বিধাদ্বন্দ্বহীন উত্তালতা ও সফলতা পর্যবেক্ষণ করে সকলেই আমাদের সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছিলেন। ৮ জানুয়ারি সম্মিলিত বিরোধী দল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৮টি বিরোধী দলের ঐক্যফ্রন্ট কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ দফা ভিত্তিক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। ৯ জানুয়ারি দেশের ৮টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের ঐক্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ১২ জানুয়ারি প্রাদেশিক সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৮ দফা দাবির ভিত্তিতে ১৭ জানুয়ারি ‘দাবি দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৭ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমে ‘উঅঈ’-এর আর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জমায়েত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়। ’৬৯-এর ১৭ থেকে ২৪ জানুয়ারি, মাত্র ৭ দিনের প্রবল গণআন্দোলনে সংঘটিত হয় সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান। এই ৭ দিনে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ও সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মতিউর, মকবুল, রুস্তম, মিলন, আলমগীর, আনোয়ারাসহ শহীদের রক্তে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল বাংলার ছাত্রসমাজ। ’৬৯-এর ১ ফেব্রুয়ারি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বেতার ভাষণে কিছু বক্তব্য দেন, যা বিরোধী দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি আইয়ুর খান ঢাকায় আসেন এবং এক সংবাদ সম্মেলনে দেশরক্ষা আইন ও অর্ডিন্যান্সের প্রয়োগ বাতিল করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে ‘শপথ দিবস’ পালিত হয়। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক এবং সভার সভাপতি হিসেবে পিন-পতন নীরবতার মধ্যে ৪৫ মিনিট বক্তৃতা করি। পুরো বক্তৃতাতেই বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও ঐতিহাসিক ১১ দফা ব্যাখ্যা করে ছাত্রদের রাজনীতি করার যৌক্তিকতা তুলে ধরি। আমার বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী কণ্ঠে স্লোগান তুলেছিলাম-‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মা-গো তোমায় মুক্ত করব।’ এ স্লোগানের দু’টি লক্ষ্যই আমরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করি। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রামের পর ২০ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য আইনের মধ্যে আমরা মশাল মিছিল করি। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। ’৬৯-এ এদিনটি পালিত হয়েছিল সগৌরবে। ’৫২-এর রক্তধারা ’৬৯-এর স্রোতে এসে মিশেছিল। সেদিনও পল্টন ময়দানে ছিল জনসভা।
সভায় সভাপতির বক্তৃতায় বলেছিলাম, ‘এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯-এ এদিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তিসংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে।’ স্বৈরশাসক আইয়ুবের পদত্যাগ, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরকারের উদ্দেশে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেই। সেদিনেই এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হইব না এবং আমার এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়।’ অতঃপর আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকল রাজবন্দীর মুক্তির পর বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গণসংবর্ধনায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সভাপতির বক্তৃতায় প্রিয়নেতাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে বলেছিলাম, ‘যে নেতা তার যৌবন কাটিয়েছেন কারাগার থেকে কারাগারে। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে যিনি বাংলার মুক্তির কথা বলেছেন। যে নেতা বলেছেন-আমি ক্ষুদিরামের বাংলার মুজিব; আমি সূর্যসেনের বাংলার মুজিব; প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ যার কাছে তুচ্ছ; যে নেতা বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে দ্বিধাবোধ করেননি; হে প্রিয় নেতা বাংলার মানুষ তোমার কাছে ঋণী, চিরঋণী। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে তুমি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে কখনোই মাথা নত করোনি। তোমার সেই ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারব না। সেই ঋণের বোঝাটাকে একটু হাল্কা করার জন্য জাতির পক্ষ থেকে তোমাকে একটি উপাধি দিতে চাই।’ ১০ লক্ষ মানুষ বিশ লক্ষ হাত উত্তোলন করে কৃতজ্ঞচিত্তে মুক্ত মানব শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু‘ উপাধি প্রদান করে।
পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের আদর্শ-উদ্দেশ্যতে ছিল বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকার’-এর দাবি। ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা তা অর্জন করি। আমাদের অর্জিত সাফল্যের পথ ধরেই ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ’৭১-এর মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরী হয়। ’৭০-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা এবং ছাত্র সমাজের ১১ দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্সে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ করান স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন ও শাসনতন্ত্র তৈরি করার জন্য অধিবেশনে মিলিত হতে না দিয়ে ’৭১-এর ১ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে পূর্বঘোষিত ৩ মার্চ ঢাকায় আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্র নেতাদেরকে ডেকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। নেতার নির্দেশে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর সমন্বয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। একমাত্র ছাত্রলীগ নেতারাই সব ধরনের ঝুঁকির মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়। ২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয় এবং তার নির্দেশে কলাভবনে অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পল্টনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন স্বাধীনতার অমোঘ মন্ত্র, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আর ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনের রক্তঝরা দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর সর্বমোট ৩৫টি ঐতিহাসিক নির্দেশাবলী প্রতিটি বাঙালির কাছে হয়ে উঠেছিল অবশ্য পালনীয় অলঙ্ঘ্য বিধান। এরপর ২৫ মার্চ কাল রাতে নজীরবিহীন গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক ও তৎকালীন নেতাদের গঠিত হয় ‘মুজিব বাহিনী’ তথা বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট সংক্ষেপে বিএলএফ। মুজিব বাহিনী গঠন করে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ প্রাণ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি।
’৪৮-এর ১১ মার্চের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের যে জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল, ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক-দাঙ্গা প্রতিরোধ আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এ মহত্তর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ পালন করে অগ্রগামী ভূমিকা। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করে গণতান্ত্রিক তথা নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করে নেয় বাংলার মানুষের হৃদয় আর সৃষ্টি করে ইতিহাস। সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধি, নিয়মানুবর্তিতা, সংগঠনের আদর্শ-উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেৃতত্বের প্রতি আনুগত্যের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ সৃষ্টি করে অসংখ্য বিপ্লবী ও সংস্কৃতিবান নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগের সম্মেলন গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তা না হলে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে দিতে হতো। এটাই ছিল বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধানের অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সমগ্র ’৫০ ও ’৬০-এর দশক জুড়ে ছাত্রলীগ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে শামিল হয়ে যে রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনা অর্জন করেছিল তা সংরক্ষণ, লালন ও অব্যাহত চর্চা সময়ের দাবি।
আজ অতীতের সেই সোনালী দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের অধিকার আদায়ের, মুজিবাদর্শ প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম বলে গর্ববোধ করি। সংগঠনের কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগ আমাকে মুজিবাদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করার পথই শুধু উন্মুক্ত করে দেয়নি, সেইসাথে দেশসেবার ও দেশগঠনের মহতী কর্মে আজীবন প্রয়াসী থাকার সুযোগ অবারিত করে দিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আজ একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, এ সংগঠনের অতীত গৌরবময়, এর বর্তমানকে করে তুলতে হবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ, আর ভবিষ্যতের জন্য নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে প্রতিশ্রুতিশীল হিসেবে। ছাত্র সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক নির্লোভ ত্যাগী শক্তি বলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রী মহল তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার নানা ষড়যন্ত্র করেছে। দু’বারের সামরিক শাসন মাদক, অস্ত্র আর অর্থ ঢেলে ছাত্রসমাজের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে। আমি বিশ্বাস করি ছাত্রলীগসহ অপরাপর সমমনা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এ কুৎসিত ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করে ছাত্র আন্দোলনের সুমহান ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ