যে আমাকে সময়ের সঙ্গে রাখে
তখন আমার কিশোরবেলা। ঢাকা থেকে অনেক দূরে এক শহরে থাকি। জাতীয় পত্রিকার ভাষায় মফস্বল। সেখানে ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পৌঁছায় পরের দিন। পত্রিকায় দুটো তারিখ লেখা থাকত। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ আর মফস্বলের জন্য প্রযোজ্য তারিখ। মফস্বলের জন্য প্রযোজ্য তারিখ হতো পত্রিকা প্রকাশের পরদিন। অর্থাৎ এটা মানতে হলো, ঢাকা থেকে যারা দূরে থাকে তাদের কাছে সেটা টাটকা খবর, যে খবর ততক্ষণে একদিনের বাসি হয়ে গেছে ঢাকাবাসীর কাছে।
তারপর এক সময় ঢাকা থেকে দূর শহরে দিনের পত্রিকা দিনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা হলো। পত্রিকায় মফস্বলের জন্য প্রযোজ্য তারিখ আর লেখার প্রয়োজন পড়ল না। আমরা ঢাকাবাসীর সঙ্গে তরতাজা টাটকা খবর পেতে থাকলাম। বড়ো হলাম। পড়তে গেলাম ভারতে। সেখানে দেখলাম অতি আজব ঘটনা। দৈনিক যে পত্রিকা সকালে প্রকাশিত হয়, সেই একই পত্রিকা সারাদিনের খবর নিয়ে ছোটো আকারে বিকালেও প্রকাশিত হয়। শুনলাম ইউরোপ, আমেরিকাতে নাকি এমন ট্যাবলয়েড পত্রিকা প্রকাশনার রেওয়াজ আছে। তাতে পুরো ২৪ ঘণ্টা সময় দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনে ঘটে যাওয়া খবর পেয়ে যেতে থাকলাম সন্ধ্যার মুখে।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু হলো। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংবাদ পেতে থাকলাম। আচমকা ঝড়ের মতো গতি গেল বেড়ে। তাতে বিস্ময়ের সঙ্গে আমাদের ভেতর চলে এলো বিভ্রান্তি, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল, গুজব ও অযৌক্তিক তর্ক। কতক অনলাইন পত্রিকা যাচাই না করেই, লোকমুখে শোনা খবর পরিবেশন করতে শুরু করে দিলো। এ যেন এক বীভৎস প্রতিযোগিতা কিংবা লড়াই। কার আগে কে কোন খবর পৌঁছে দিতে পারে পাঠকের কাছে। তাতে আকস্মাৎ মিথ্যা জায়গা করে নিতে থাকল। আমাদের ভেতর আস্থার সংকট তৈরি হলো।
হইচই ডামাডোলের ভেতর একটি অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের একদম প্রথম দিন থেকে পাঠকের আস্থা অর্জন করে নিল। সেই পত্রিকাটি হচ্ছে, ঢাকাপ্রকাশ। এটা সম্ভব হয়েছে দ্রুত সঠিক সংবাদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে। যখনই ঘটনা ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ তা পাঠককে জানাচ্ছে দায়িত্ব নিয়ে, সংবাদের সত্যতা যাচাই করে। আমার বিশ্বাস, এটা সম্ভব হয়েছে পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সততা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জন্য।
ঢাকাপ্রকাশ সব ধরনের পাঠকের কাছে সমানভাবে সমাদৃত। এক এক মানুষের মনের চাহিদা এক এক রকম। কেউ পছন্দ করেন রাজনীতি, কেউ খেলা। ঢাকাপ্রকাশ যেটা করেছে তা হচ্ছে বহুমাত্রিক আঙ্গিকে নিজেকে বেশ গুছিয়ে সাজিয়েছে। এখানে যেমন রাজনৈতিক আলোচনা আছে, তেমনি আছে সারা দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার তাৎক্ষণিক উপস্থাপন, আছে সারা বিশ্বের কথা, মতামত, অর্থনীতি, খেলা, সাহিত্য, বিনোদন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, আইন-আদালতসহ নানান আয়োজন। এমনকি আপন কথা বলার জন্য রয়েছে হৃদয়ের জানালা।
এই যে এত আয়োজন, কেন? এই আয়োজন আমাকে মানসিক শক্তি জোগায়। দোরে দোরে ঘুরতে হয় না আমাকে। একখানে সব পেয়ে যাই। আর আস্থা পাই বলে মনের জোরও বেড়ে যায়। ঢাকাপ্রকাশ আমাকে রাখে সময়ের সঙ্গে। প্রথম বর্ষপূর্তিকে ঢাকাপ্রকাশ-এর সকলকে অভিনন্দন। সততায়, আস্থায় মজবুত থাকুক ঢাকাপ্রকাশ সবসময়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক