মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে গেছে
বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে সব পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়ে গিয়েছে। যখন বিশ্ববাজারে দাম কম ছিল, তখনো এখানে দাম কমানো হয়নি। এখন বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াকে আবার দেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। আমরা ক্যাবের পক্ষ থেকে বারবারই বলে আসছি, জ্বালানি তেল বিক্রি করে যে মুনাফা হয়, একটি ফান্ডে রেখে দেওয়া হোক। যখন দাম বাড়বে, তখন সেই অর্থ কাজে লাগানো হোক। এতে মানুষের উপর অকারণ প্রভাব পড়বে না এবং অর্থনীতিও সবল থাকবে।
বৈশ্বিক বাজারে একটি মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশে আছি আমরা। জিনিসপত্রের আমদানি মূল্য যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আমদানি করা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় একইধরনের যেসব পণ্য সেসবেরও দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে কারণ তাদেরও জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। যার ফলে ট্যাক্সও বাড়ছে। আমদানি মূল্য যেহেতু বাড়ে টাকায়, কাজেই সেদিক থেকে ট্যাক্সও বাড়ে।
যদি সরবরাহ করা এসব পণ্যের দাম বাড়াতে হয়, তাহলে তার প্রভাব অন্যান্য পণ্যের উপর পড়বে। দেশের রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। তাই আমি বলব, এখন মূল্যবৃদ্ধির সময় নয়। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হোক, ভর্তুকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় যে অপচয় হয়, অব্যবস্থাপনার জন্যে, দুর্নীতির জন্যে, অদক্ষতার জন্যে এবং অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। তাই সাশ্রয়ী উপায় অবলম্বন করে, ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই এসব পণ্যের মূল্য বাড়ানো সঠিক হবে না।
যেকোনো নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসের দাম সহনশীল রাখার উদ্দেশ্য হলো, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন। তবে কেউ যদি সরবরাহ বিঘ্নিত করার জন্য অপচেষ্টা করে, দ্রব্য সামগ্রী মজুদ করে, পণ্য পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কোনো অবস্থাতেই সাপ্লাই চেঞ্জ যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
মানুষ আসলে শান্তিতে নেই। সেটি আমরা আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের আয় খুবই সীমিত অথবা নির্দিষ্ট আয়, তাদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সীমিত আয় দিয়ে তাদের জীবন যাত্রা সুস্থভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। কাজেই আমি বলব, কোনো ক্ষেত্রেই দাম বৃদ্ধি সুফল বয়ে আনবে না। বরং এতে করে অসামঞ্জস্যতা আরও বেড়ে যাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কাজেই দাম বাড়িয়ে নয় বরং পলিসির পরিবর্তন করে সমাধানের নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।
এ ছাড়া যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে সংকট তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয়, বাজারকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজার স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
হুটহাট করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বিশেষ করে, মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে। বাজারের এই অস্থিরতার কারণে বড় ধরনের সমস্যায় এসব মানুষ। বাজারকে স্বাভাবিক রাখতে সরকারের মনিটরিং পলিসি থেকে শুরু করে ফিজিক্যাল পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য উৎপাদনশীলতায় জোর দিতে হবে। একই জমিতে কৃষক যেন বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং বেশি ফসল পান সেদিকে জোর দিতে হবে। আর যারা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে মুনাফা লুটতে চান, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সভাপতি, ক্যাব।
এসএন