অর্থনীতিতে নারীর অবদান অনস্বীকার্য
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল-ইউএনএফপি'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ২০২১ সালের আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে আমরা দেখছি। এর জন্য করোনা মহামারির প্রভাব বড় ভূমিকা রেখেছে। যদিও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শক্তিশালী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সমাজের নেতা ও এনজিওকর্মীদের সহায়তার বিষয়টি যেভাবে এসেছে তা যথার্থ। একই সঙ্গে আমি মনে করি, পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে যেমন জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন, তেমনি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রয়োজন আরও কার্যকর সামাজিক ক্যাম্পেইন। নারীর বিরুদ্ধে যেসব সহিংসতা হয়; এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণে একটি গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাতে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আন্তর্জাতিক উদাহরণের আলোকে সেই গবেষণাটি সাজাতে হবে।
আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে; সেটা শুরুতেই বলেছি। চারটি বিষয় এখানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে-নারীর ক্ষমতায়ন, সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী বিতরণ, উদ্ভাবনী যোগাযোগ এবং নীতিনির্ধারণের জায়গা থেকে গুরুত্ব আরোপ। আমরা দেখছি, নারী এখন আর বসে না থেকে অর্থনীতিতে অধিক পরিমাণে অবদান রাখছে। স্বাস্থ্যসেবাও এখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। তবে 'থ্রি জিরো এজেন্ডা'র ক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেকখানি রয়ে গেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কিশোরী গর্ভধারণের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের হার না বাড়ার বিষয়টিও মনোযোগ আকর্ষণের মতো।
আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নিষিদ্ধ থাকলেও উল্লেখযোগ্য মেয়েরই এর আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার শিক্ষা বা এসআরএইচআর-এর প্রসার যেভাবে ঘটানো দরকার, সেখানে ঘাটতি লক্ষণীয়। এর প্রভাবে শুধু বাল্যবিয়েই বাড়ছে না; একইসঙ্গে অনেকে অনিরাপদ গর্ভপাতও করছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংতার বিষয়টিও কম উদ্বেগজক নয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে এসেছে, ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ বিবাহিত নারীই সহিংসতার শিকার। এসআরএইচ শিক্ষার দৈন্যও এর অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কিশোর বয়সের সবাই এ শিক্ষা যথাযথভাবে না পাওয়ার কারণে সংকট স্পষ্ট। 'থ্রি জিরো এজেন্ডা'র ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র বা বস্তিবাসীর প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
জনসংখ্যার উন্নয়নে আমাদের যে সংকট সেখান থেকে উত্তরণে সব শেষ আমি আবারও ২০১২ সালের জনসংখ্যানীতি সংশোধনে জোর দিতে চাই। এর বিপরীতে জাতীয় জনসংখ্যা কাউন্সিলকে সক্রিয় করা দরকার। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সুশাসন নিশ্চিত করা চাই। গ্রামের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দুর্বল জায়গাগুলোতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তিনটি ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থার নিয়মিত পর্যালোচনা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই তিনটি এজেন্ডার কাজ জোরালো করতে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: অর্থনীতিবিদ ও এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, পিপিআরসি