ইন্টারেস্ট বাড়ালেই সুবিধা করা যায় না
আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য মূলত নির্ভর করে ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান মার্কেটের উপর। ওদের ওখানে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়া মানে আমাদের এখানেও রপ্তানি আয় কমে যাওয়া স্বাভাবিকভাবেই। এটির একমাত্র উপায় হচ্ছে ডাইভার্সিফিকেশন করা অর্থাৎ অন্য মার্কেট দেখা। যেমন- চাইনিজ মার্কেট, ইন্ডিয়ান মার্কেট, জাপানিজ মার্কেট, কোরিয়ান মার্কেট ও রাশিয়ান মার্কেট। তবে আমাদের রপ্তানিকারকরা কতটুকু অগ্রসর হচ্ছে সেটি নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।
রেমিট্যান্স যেটি আছে সেটি কমার কথা নয়। জানুয়ারি থেকেই অনেক লোক প্রায় আট থেকে দশ লাখ লোক বাইরে গিয়েছে। রেটের গরমিলের কারণে কিছু লোক ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে পাঠাচ্ছে। যেটি গণনাতে আসছে না। তবে ইকোনমিতে ভিন্নভাবে আসছে। একটি রিপোর্ট এসেছে অন্য মিডিয়াতে। বিজনেস ক্লাস ও ফার্স্টক্লাস বিমান ভর্তি বাংলাদেশি লোকেরা যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা? এরা বড় অংকের টাকা নিয়ে যাচ্ছে বাইরে। এখন একটি ক্লাস তৈরি হয়েছে তথাকথিত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার পরিচয়ে যারা বাইরে গিয়ে টাকা পয়সা অপচয় করছে। আমি এ বিষয়ে একটি মতামত দিয়েছিলাম যে, এদের টুরিস্ট ভিসায় বিদেশে একবারের বেশি যেতে না দেওয়ার ব্যাপারে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত আকারে করা হয়েছে। সেখানে রেস্ট্রিকশন দিলে এমনিতেই ডলারের দাম কমে আসবে।
ফরেন একচেঞ্জ রিজার্ভ বলতে আমাদের যদি এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট অপেক্ষা বেশি হয়, তাহলে রিজার্ভ বেড়ে যায়। আমি মনে করি, রেমিট্যান্স কম হওয়ার যে কারণ, সেটি আবার অন্যপথে আসছে। ব্যাংক ৯৫ হলে বাইরে নিচ্ছে ১১০ টাকা করে। এদের টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। আমি মনে করি, আগামী ছয় সাত মাস আমাদের একটি চিন্তার একটি বিষয় আছে। এজন্য ব্যয় কমানোটা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছে, তাদের কৃচ্ছতা সাধন করার দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। কাজের সময় কমিয়ে দিয়ে কোনো লাভ নেই। তাহলে বলা উচিত যে, তোমাদের বেতন ভাতা এমনিতেই হবে। ওদের ইকোনমি প্রডাক্টিভিটি কমে যাবে।
রিজার্ভ কমে যাওয়া শঙ্কার বিষয়। এত দ্রুত কমতে দেওয়াটা ঠিক না। এটি কমছে কেন সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক জানে। প্রাইভেট লোকজন টুরিজম করতে গিয়েই তো বহু টাকা নিচ্ছে। এই কথাটিই আমি বুঝাতে চেয়েছি। আমাদের স্ট্র্যাটেজিক হতে হবে। তা না হলে আমাদের অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিছু লোক ফর নাথিং টাকা পয়সা নিয়ে যায়। এটি তো অন্যায়। এসব যখন চলতে থাকে তখন কিছু লোক ডলার এমনিতেই হোল্ড করতে থাকে। এসবের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়েছে। যদিও এতসব কিছু বাড়ানোর পক্ষে আমি না। ইন্টারেস্ট বাড়িয়ে পৃথিবীর কেউ কখনো সুবিধা করতে পারে নেই। ইনভেস্টম্যানরা তখন নিরুৎসাহিত হয়। আমাদের ইকোনোমিতে সুদের হার বাড়ানো আমার কাছে মনে হয় না এগুলো ভালো কিছু। এর ফলে কখনো মূল্যস্ফীতি কমবে না।
মূল জায়গা হলো কস্ট অব প্রডাকশন। উৎপাদন বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমবে। সাধারণ মানুষ আজ ভুক্তোভোগী মূল্যস্ফীতির কারণেই। মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে দারিদ্র্যের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান আরও কমে যাবে। আমাদের ফরেন একচেঞ্জ রিজার্ভ ভালো হলেই কেবল আমরা শঙ্কামুক্ত থাকব। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় আগামী ছয় থেকে সাত মাস আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিগণিত হবে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসএন