শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

আমাদের স্বপ্ন বোনার শিল্পী

মানুষকে তো পরিমাপ করা যায় না, সম্ভবও নয়। মানুষ জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়, প্রসারিত হয়, প্রস্ফুটিত হয়। ক্রমান্বয়ে সে নিজেকে তুলে ধরতে পারে, মানবতার অংশ হয়ে ওঠে। তার জাদুকরী কর্মক্ষমতা আর মানুষের ভালোবাসা ও আস্থায় সে নামটা ধীরে ধীরে এক সময় বিশেষণ হয়ে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনা হলেন এমন একজন মানুষ যিনি একটা জাতিকে তাঁর নিজস্ব স্বপ্নের সঙ্গে দারুণভাবে সংযুক্ত করতে পেরেছেন। এই যে এক অনন্যসাধারণ ক্ষমতা এই ক্ষমতাটিকে কোনো অবস্থাতেই, কার পক্ষেই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আজ এখানে আমি এক কিংবদন্তির উপাখ্যান বলছি, এক মানুষের কথা বলছি, বলছি একজন শেখ হাসিনার কথা।

শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন-যাপন করা একজন মানুষের নাম। সেই টুঙ্গিপাড়ার মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও বাংলার প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা একজন সাধারণ মানুষ। আমাদের জীবনের মতোই যার জীবনকে অতি পরিচিত মনে হয় এবং সহজেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যাঁকে দেখলেই মনে হয় সে আমাদের অতিচেনা-পরিচিত একজন মানুষ। যাঁর সাথে সহজেই গল্প করা যেতে পারে; পরিবারের দুঃখ-বেদনার কথা বলা যেতে পারে। রাষ্ট্রভার কাঁধে তুলে নিয়ে যিনি অনেকের ‘আপা’ই রয়ে গেছেন। যাঁর মধ্যে রয়ে গেছে বাংলার চিরচেনা মায়ের মুখাবয়ব, বোনের মূর্তি। শেখ হাসিনা হলেন সেই মানুষ যিনি একজন দুঃখী মানুষের জন্য কাতর হন; মানুষকে পরিপূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে তাকে আপন করে নেয়ার সমস্ত কিছুই যেন তাঁর মধ্যে প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে।

আবার অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে এই দেশেই একটি বিপরীত চিত্রও আমরা দেখি। কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে নিয়ে সারাক্ষণ নিন্দা আর সমালোচনায় মুখর থাকেন। প্রতিমুহূর্তে তাঁর ত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকেন। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য হচ্ছে যেই মানুষের কল্যাণে তাঁর সমস্ত স্বজনকে চিরতরে হারাতে হয়েছে; শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যাদের জন্যে নিজের জীবনকে উজাড় করে দিচ্ছেন, তারাও তাঁকে ভুল বোঝেন এবং তাদের একটা সংকীর্ণ বিচারের বাটখারা দিয়ে পরিমাপ করার চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বাঙালি জাতির জন্যে তাঁকে আর কত হারাতে হবে; আর কত বেদনার আগুন বুকের মধ্যে ছাইচাপা দিয়ে তাদেরকেই বুকে জড়িয়ে আপন করে নেয়ার সাধনা চালিয়ে যেতে হবে; আর কত হারানোর সাগর পাড়ি দিতে হবে; আর কত! জসীম উদ্দিনের কবিতার বৃদ্ধের স্বজন হারানোর ব্যথা মনে পড়ে-‘এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।’

আমার একটা বিরল সৌভাগ্য-আমি বিশাল এই মহীরুহকে ধীরে ধীরে পরিণত হতে দেখেছি। কথাটা রূপকভাবেই বলি-এক ছাদের কোনা থেকে গজিয়ে ওঠা অশ্বত্থের চারাকে ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ এক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হতে দেখেছি যেন। দেখেছি এক বিশেষণ হয়ে ওঠা এক মানুষকে- যেন এ এক ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জেগে ওঠা।

প্রিয়জন হারানোর ব্যথা-বেদনা-শূন্যতাবোধ সকল মানুষের মতো শেখ হাসিনারও আছে। তিনি তো মানুষই। তবে এক ভিন্ন মানুষ। সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও তিনি অসাধারণ মানুষ। আর সেই কারণেই তাঁর সমস্ত পরিবারকে হারিয়েও এদেশের মাটি ও মানুষকেই আপন করেছেন আর তিনিই বাংলাদেশকে এখনো পর্যন্ত পথ দেখাচ্ছেন। তিনি আছেন বলেই এখনো বাংলাদেশকে মনে হয়-এ দেশটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এখনো মনে করি- এই বাংলাদেশে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়, লেখা যায়, ভাবা যায়। শেখ হাসিনাই আমার মধ্যে সেই স্বপ্ন এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন-যেই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুকে ঘুমোতে দেয়নি, যেই স্বপ্ন দেশরত্ন শেখ হাসিনাকেও ঘুমোতে দেয় না। মনে পড়ে উপ-মহাদেশের মহান দার্শনিক এ. পি. জে. আব্দুল কালামের অবিস্মরণীও সেই বাণীর কথা-‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটা যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমাকে ঘুমাতে দেবে না।’ এই বাণীর মর্মার্থই যেন মনে-প্রাণে উপলব্ধি করেছেন বাংলার আপামর মানুষের চোখের মণি জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তাঁর ভেতরে এমন এক অদম্য শক্তি প্রত্যক্ষ করি যা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন দেখার জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ করে। রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ ছিয়াত্তরে পা রাখলেন। সংগ্রাম-সংক্ষুব্ধ জীবনের অগণিত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে তিনি এগিয়ে চলেছেন, হাতে তাঁর বিজয় কেতন এবং তাঁকে অনুসরণ করছে এক বিশাল জাতিগোষ্ঠী, অন্তরে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অনির্বাণ অগ্নিশিখা, কণ্ঠে আছে বিজয়ের অমোঘ সংগীত লহর আর হৃদয়ে বহন করে চলেছেন মহান পিতার অকৃপণ আশীর্বাদ।

অথচ ৭৫-এ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ভেবেছিল বাংলাদেশের হৃদয় থেকে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; ৭১-এ পরাজিত শক্তির করতলে আবার দেশটাকে নিপতিত করবে। সেসময় বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয়কে দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। পরদেশে ভেসে ভেসে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হয়েছে। সেখানেও তাঁদেরকে হত্যার নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি দীর্ঘ সামরিক স্বৈর-শাসন। পাকিস্তানের চর রাজনীতিকে যিনি জটিল করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছিলেন; দেশটাকে আবার পাকিস্তানের আদলে তৈরি করে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেবার মিশন নিয়েছিলেন; শত শত মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসারকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছিলেন, তাকেও আমরা দেখেছি। আমরা এ-ও দেখি এই স্বাধীন বাংলাদেশে ৭১-এ পরাজিত শক্তিকে নানাভাবে পুনরুজ্জীবিত করা, তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, সরকারের অংশীদার করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও জামাত হেফাজতের তাণ্ডব দেখেছি দেশব্যাপী। অর্থাৎ দেশটাকে যারা মেনে নেননি, সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতেই দেশটি পরিচালিত হয়েছে সুদীর্ঘকাল। এতদসত্ত্বেও, আজ আমরা যে দেশটিকে নিয়ে গর্ব করছি, কিছু পূর্বে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি, যে অভাবিত উন্নতির জন্যে পুরো বিশ্ব উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথটি কি বঙ্গবন্ধু কন্যা ও তার দল আওয়ামী লীগের জন্যে এতো সহজ ছিল?

সহজ তো ছিলই না বরং পুরো পরিস্থিতিই ছিল এক ভয়ানক ও অসম্ভব রকমের বিপরীত অবস্থানে। বঙ্গবন্ধু কন্যা হলেন সেই ফিনিক্স পাখি যিনি একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী দলটিকে সে সময় জাগিয়ে তুলেছিলেন। একইসঙ্গে একটি জাতিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখালেন। একদিকে বাবা-মাসহ পরিবারের সকল আপনজনকে হারানোর দুঃসহ ব্যথা তার বুকে বয়ে চলেছেন; একইসঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দুর্বৃত্ত ও ঘাতকদের ষড়যন্ত্রের নাগপাশ থেকে একটি জাতির মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিরন্তরভাবে নিয়োজিত করেছেন। একদিকে ভাই হারানোর শোকে বুকে পাথর বেঁধেছেন; একইসঙ্গে পিতার স্বপ্ন পূরণে সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে হয়েছেন বজ্রকঠিন।

পঁচাত্তরের আগস্টে মানবতার বহ্ন্যুৎসব ঘটিয়ে জিয়া-মোশতাক চক্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে সময়ের চাকাকে উল্টোদিকে ঘোরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তাদের চক্রান্ত ও নীলনকশার লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট-নির্মম ও হিংস্র।

এত ভয়াবহ নীল নকশা এবং নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির যাবতীয় অপচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেই একচল্লিশ বছর আগে এই দিনে জন্মভূমির মাটি যার পদচুম্বন করেছিল তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা শেখ হাসিনা। তখন গণশত্রু নির্দেশিত ঘোষণা ছিল; যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করে বিধ্বস্ত করতে হবে, রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করাকে অসম্ভব করে তুলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে বিপর্যস্ত করার জন্য অর্থ কোনও সমস্যা হবে না, ভাগ করতে হবে, সব ভাগ করে করে এক সময় ক্ষয় করে ফেলতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া দেশপ্রেমিক, চতুর রাজনীতিক, ভুয়া ব্যবসায়ী, প্রতারক ধর্মব্যবসায়ী দিয়ে ছেয়ে ফেলতে হবে দেশ এবং পাশাপাশি অতি সন্তর্পণে চালাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি নিধনপট। তাদের কৌশল, এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে করা যাবে বিতর্কিত, দুর্বল করে দেওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।

পঁচাত্তরের পরপরই কাজ সেভাবেই শুরু হয়েছিল। ভাগ করা হতে থাকল আওয়ামী লীগকে, আওয়ামী লীগের নামের পাশে লেগে গেল ব্র্যাকেট, বাড়তে থাকল সেই ব্র্যাকেটের সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য সংগঠনগুলোতেও গজিয়ে উঠতে থাকলো ব্র্যাকেটের রাজনীতি। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা তখন বিদেশের মাটিতে দ্বারে দ্বারে আশ্রয় প্রার্থনা করে চলেছেন গুপ্তঘাতক চক্রের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে।

এরই মধ্যে ঘাতকের রোষণকষায়িত লোচন এবং নির্মম প্রহারের শ্যেনদৃষ্টিকে পদদলিত করে একচল্লিশ বছর আগের এই দিনে তিনি এসে দাঁড়ালেন তমসাবিনাশী আশার প্রদীপ নিয়ে হতাশা-সংক্ষুব্ধ জাতির সামনে। অন্তরের গভীরে বেদনার ফল্গুধারা আর হৃদয়ে শুভকর্মের প্রদীপ্ত চৈতন্য ধারণ করে শেখ হাসিনা যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন এ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির নির্ভরযোগ্য সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেন জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠল। বারবার আক্রমণে জর্জরিত কর্মীরা দেখল এক সাহসী নারীর অবয়বে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখচ্ছবিই যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনাকারীরা এবার শঙ্কিত হলো, কারণ তারা এটা বুঝেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার যদি কোনোভাবে বাংলাদেশের মাটিতে আসতে পারে তবে সে তার স্বপ্নের ডালা বহন করেই আনবে এবং মুমূর্ষু জাতির দেহে প্রাণসঞ্চার করবেই। তাই তারা তাঁর যাত্রাপথে কণ্টক বিছিয়ে যেতে থাকলো।

আমরা দেখছি শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে অমিত বিক্রমে এগিয়েই চলেছেন। তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব অসামান্য মেধা, সততা এবং নিষ্ঠা তাঁর কার্যক্রমের ক্ষেত্রকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানাকে অতিক্রম করে উপমহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অধিকতর বিস্তৃত হচ্ছে। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁর স্বপ্নসৌধ সোনার বাংলা সৃষ্টির প্রয়াস।

আমার কাছে শেখ হাসিনাকে জোয়ান অব আর্কের মতো মনে হয়। জোয়ান অব আর্ক যেমন ব্রিটিশরাজকে পরাস্ত করে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাও তেমনি অর্ধশতাব্দীব্যাপী তিল-তিল করে বেড়ে ওঠা স্বাধীনতা-বিরোধীদের পরাস্ত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। জোয়ান অব আকর্কে পুড়িয়ে মেরে ফরাসিরা অবশেষে তাকে দেবীর মর্যাদায় সন্ত সাজিয়েছিল। শেখ হাসিনা জয়ী হোন এবং মানুষই থাকুন, তার উপর দেবত্ব আরোপিত হোক-তা যেমন কামনা করি না; আবার মানুষ হিসেবেও তার সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে কূপমণ্ডকদের সংকীর্ণ বিচারকাঠিতে পরিমাপ করা হোক সেটাও প্রত্যাশা করি না।

আজ এটাই মনে হয়-জাতির পিতা যে রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণ করেছেন, তার কন্যা তাতে দিয়েছেন শক্তি, গতি, অগ্রগতি। তিনি আছেন বলেই আমরা বিনীত স্পর্ধা নিয়ে চলতে পারি। আমরা সাহসের সঙ্গে বলতে পারি-বিজয়ের শ্যামল তীর হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাঙালি জাতিকে অমরাবতীর পথে পা রাখবার জন্য। পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের গুরুভার তারই সুযোগ্য কন্যা কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং সমস্ত অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে ‘মুক্তির দূত’ হয়ে জাতির মুক্তির সূর্যকে ঠিকই ছিনিয়ে আনবেন-এ বিশ্বাস এখন বাংলার মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। শতায়ু হোন হে সাহসিকা। বটবৃক্ষের পরমায়ু নিয়ে ছায়া বিস্তার করুন এই দেশ ও জাতির মাথায়।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা ও দৈনিক জাগরণ

 

Header Ad
Header Ad

বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, জুলাই থেকেই শুরু হতে পারে ফ্লাইট চলাচল

বগুড়া বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। ১১ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, ডাম্বল এবং এপ্রোন সারফেসের উন্নয়ন কাজ চলছে পুরোদমে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী জুলাই মাসেই বগুড়া থেকে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ—বেবিচক। শুধু বগুড়াই নয়, দেশের আরও সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সচল করতে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, শমসেরনগর (মৌলভীবাজার) এবং রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর।

বেবিচক সূত্র বলছে, এসব পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালু হলে সড়ক ও রেলপথের ওপর চাপ কমবে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ আরও সহজ হবে। ফলে শিল্প, ব্যবসা ও পর্যটনে নতুন গতি সঞ্চার হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, “বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এসব বিমানবন্দর পুরোপুরি সচল করা যাবে।”

তবে এসব বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের মতো ফ্লাইট পরিচালনায় সবচেয়ে বড় বাধা রানওয়ের দৈর্ঘ্য ও অবকাঠামো। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি যাত্রীবাহী বিমানের ওঠানামার জন্য ৬ থেকে ৮ হাজার ফুট রানওয়ে দরকার, অথচ পরিত্যক্ত এই বিমানবন্দরগুলোতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুট।

বেবিচক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হুদাবাসি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্মের সহায়তায় বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে সংস্কার কাজ আগে শেষ হবে, সেখানে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে আগে।

উল্লেখ্য, দেশে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল ২৮টি বিমানবন্দর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে। অভ্যন্তরীণ রুটে সচল রয়েছে রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর।

নতুন করে চালু হতে যাওয়া সাতটি বিমানবন্দর যুক্ত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগে বড় বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Header Ad
Header Ad

বেনজীরকে বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার, ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কারের কারণ প্রকাশ করেছেন ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাসির মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ক্লাবের রিভারভিউ লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাব দখল করে রেখেছিলেন এবং আর্থিক অনিয়মে জড়িত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাসির মাহমুদ বলেন, “বেনজীর আহমেদ কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, জোর করে ক্লাবের সভাপতি পদে বসেছিলেন। সামাজিক সম্মান পেতেই তিনি এই পদে ছিলেন, তবে ক্লাবের নিয়ম-কানুন তিনি মানেননি। এমনকি আমি নিজে তিন বছর ক্লাবে আসার সাহস পাইনি, কারণ তিনি তাঁর প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ক্লাবে প্রবেশ করতে দেননি।”

তিনি জানান, ক্লাবের প্রায় ৩২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে পুনরায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম হুদাবাসিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

নাসির মাহমুদ অভিযোগ করেন, বেনজীরের ভয়ে তিনি ক্লাবে যাওয়া বন্ধ করে দেন, তবে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। “তিনবার আমি তাঁকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। পরে তিনি বুঝতে পারেন আমি আইনগতভাবে সঠিক পথে আছি এবং তখনই আলোচনায় বসতে চান।”

তিনি আরও বলেন, “ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে বেনজীর কেউকেটা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো নিয়ম মানেননি, কোনো রিপোর্ট সাবমিট করেননি। ক্লাবের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল।”

ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনকেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্লাবের প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বহিষ্কার কার্যকর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত পরীমনি ঘটনার প্রসঙ্গও আসে। এ নিয়ে নাসির মাহমুদ বলেন, “পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন না, তিনি অতিথি হয়ে এসেছিলেন। অনুমতি ছাড়াই ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

নাসির মাহমুদ দাবি করেন, বেনজীরের প্রভাব ও চাপের কারণে তাঁরা একসময় প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনের দাবিতে বারবার নোটিশ দেওয়ার পর ২০২৩ সালের ২৪ জুন নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হন বেনজীর।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নকিব সরকার অপু, মো. জেসমুল হুদা মেহেদী অপু, আসমা আজিজ, এ কে এম আইয়াজ আলী (খোকন), আলীম আল কাজী (তুহিন), খালেদা আক্তার জাহান, মির্জা অনিক ইসলাম প্রমুখ।

Header Ad
Header Ad

ঢাকায় আবারও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় ফের ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ১৮ নম্বর আসন এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

মিছিলটি ঢাকার উত্তরা এলাকায় সংগঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দিতে থাকেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবি জানান।

মিছিলে তারা ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এবং ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’—এই ধরনের স্লোগানে রাজপথ কাঁপান।

জানা গেছে, এই ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেন উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলন।

আওয়ামী লীগের সাবেক ছাত্রনেতা নুর হোসেন তার ফেসবুকে মিছিলের একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, “আজ ১৮/০৪/২৫ ইং তারিখ সকালে উত্তরা ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

এর আগেও গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা প্রধান সড়কে আওয়ামী লীগ একটি হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করেছিল।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটির নেতাকর্মীরা রাজপথে সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা হঠাৎ বিক্ষোভ ও মিছিল করে বর্তমান সরকারবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করে চলেছেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, জুলাই থেকেই শুরু হতে পারে ফ্লাইট চলাচল
বেনজীরকে বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার, ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ঢাকায় আবারও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি
২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে আশাবাদী মেসি, সিদ্ধান্ত নেবেন সময়মতো
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার