তিনি মমতাময়ী তিনিই শক্তির আঁধার
আজ ২৮শে সেপ্টেম্বর। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৬তম জন্মদিন। আজকের দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও অভিনন্দন।
৭৫এর ১৫ই আগস্ট সেই নৃশংস দিনে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সময়, ভাগ্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী বেঁচে গিয়েছিলেন। কারণ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন প্রবাসে ছিলেন। সেই ভয়াবহ দিনে তারা বাংলাদেশে ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু তাদের যে যন্ত্রণা সেটি তারা বয়ে বেড়াবেন আজীবন।
আমরা জানি, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী তার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন বেলজিয়ামে। সেখান থেকে ফিরে যান জার্মানিতে। কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সেই কলঙ্কজনক মুহূর্তে চাকুরিরত অবস্থায় হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে সাদরে গ্রহণ করলেন এবং তাদের যতটুকু সম্ভব যেভাবে সম্ভব নিরাপত্তা দিলেন। সেখানে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা কিন্তু দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমরা জানি যে, দীর্ঘ ছয় বছর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রবাসে জীবন যাপন করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ঢাকায় অবতরণ করেই অপেক্ষারত লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সেই বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি এসেছি আওয়ামী লীগের জন্য নয়, আমি এসেছি আপনাদের মুক্তির জন্য। গণতন্ত্রের মুক্তি সেইসঙ্গে দেশকে সামরিক শাসন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। আপনাদের সঙ্গে কাজ করার জন্যই আমি ফিরে এসেছি।
তারপর তিনি ৩২নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। কিন্তু সেটিও আরেক দুর্ভাগ্য। তিনি ৩২ নম্বরে প্রবেশ করতে পারলেন না। সামরিক সরকার তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দিলেন না। এভাবেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ জীবন শুরু হল। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যখন যে পদে আছেন সে পদে থেকেই তিনি তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন অবিচলভাবে। দেশকে সামরিক শাসন থেকে মুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের যে সম্পর্ক, সেটিকে তিনি বিকশিত করেছেন এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। আমরা দেখেছি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নীতিতে অটল।
বাংলাদেশের কোনো অর্থনীতিবিদ যেখানে বলেন নি, সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে সফলতা একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের বিপরীতে গিয়ে মনোবল ও মানসিক শক্তির এমন বহিঃপ্রকাশ শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। দুঃখেও তিনি পাহাড়ের মত অটল। যত ধরনের বাধা বিপত্তি আসুক না কেন তাকে কখনো দুর্বল হতে দেখা যায় না। তিনি মমতাময়ী তিনিই শক্তির আঁধার।
এবারের জাতিসংঘে ভাষণে তিনি যা বলেছেন, বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে একই সঙ্গে পৃথিবীকে কীভাবে শান্তির পৃথিবীতে রূপান্তর করা যায় এবং বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, সেই বিষয়গুলোকে তিনি তুলে ধরেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ এর ২৫শে সেপ্টেম্বর যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই বাংলা ভাষায় দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন, তারই অনুসরণে জাতিসংঘের দায়িত্ব কর্তব্যগুলো সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন হতে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দ ও গৌরবের।
প্রধানমন্ত্রীর শুভজন্মদিনে আমরা তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। যে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তৈরির সেই লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন এবং একসময় নিশ্চয়ই তিনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। সেই আশাবাদ ও শুভকামনা।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/