ভারতকে উদারতার পরিচয় দিতে হবে
ভারতের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান এবং সেটি থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কারণে এটি যে খুব বিরাট একটি জাম্প করবে সে রকম কিছু নয়। সম্পর্ক যেমন ছিল সেটি সে রকমই থাকবে মনে করি। বিষয় যেটি সেটি হচ্ছে যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের কিছু ইস্যু আছে যেগুলোর কারণে মানুষের মাঝে কিছু হতাশা কিছু ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যেটি থেকে মনে হয় ভারত যথেষ্ট সিরিয়াসলি চেষ্টা করছে না সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে।
চট করে ভারত সফরের মাধ্যমে সমস্যাগুলো এত সহজে সমাধান হয়ে যাবে এতটা আশা না করাই ভাল। এজন্য সময় লাগবে। ভারতীয়রা তো সবকিছুই খুব ধীরে সুস্থে করেন। কাজেই ঝটপট করে কিছু হয়ে যাবে এ রকম কিছু মনে না করাই ভালো। ইস্যুগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে নিশ্চয়ই। কিছু প্রতিশ্রুতি হয়তো আসবে। তবে এটিও ঠিক যে, প্রতিশ্রুতি পালিত হতে সময় লাগে। আমি মনে করি সফরটিকে আমাদের সেভাবেই দেখতে হবে।
একটি দুটি ইস্যু নিয়ে বলা যেতে পারে। যেমন একটি ইস্যু হচ্ছে , কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেক্ষত্রে চুক্তি স্বাক্ষর হলে আমাদের দেখতে হবে যে, সেক্ষেত্রে কী কী থাকছে এবং সেটি আমাদের স্বার্থে অনুকূল কিছু থাকে কি না সেটিও আমাদের দেখা দরকার আছে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য একইসঙ্গে ভারতীয় বিনিয়োগ অর্থাৎ দুই পক্ষই যেন লাভবান হয় সেটিও আমাদের দেখা দরকার আছে।
আমার মতে, কূটনৈতিক কলাকৌশলগুলো যদি বিশ্লেষণ করা হয় আমি বলব সেটিও সার্বিক রাজনীতিরই অংশ। সার্বিক রাজনীতিতে যেরকম সম্পর্ক উন্নয়ন হবে, কূটনীতিতেও সেরকম হবে। সহসা একটি সমস্যা হল আর সেটির সমাধান হল না বলে, আপনি কুটনীতিকদের দোষারোপ করতে পারবেন না। দুশ বছর আগে সম্পর্কটি যেমন ছিল এখন সে রকম নয়। এখন কোনো কিছুই গোপন থাকে না অথবা পেছনে থাকে তা নয়। একটি সমস্যা সমাধানের জন্য পর্দার আড়ালে কাজ চলতে থাকে। সেটি অনেকাংশে নির্ভর করবে যে, কার কতটুকু লিভারেজ আছে। ভারতের মুখোমুখি আমাদের লিভারেজ খুব কম। এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় আছে যে, আমরা কতটুকু সেটি পেট্রোনাইজ করতে চাই।
ভারতের যে সমস্যাগুলি অথবা প্রতিবন্ধকতা ছিল, আমরা সেগুলি দূর করে দিয়েছি সহজেই। কিন্তু ভারত আমাদের ক্ষেত্রে সেভাবে এগিয়ে আসেনি আমাদের ‘কনসার্ণগুলো দূর করার জন্য। এখানে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার কতটুকু সামর্থ আমাদের আছে, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
ভারত তার নিজের স্বার্থ দেখছে, সেক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ যদি বিঘ্নিতও হয় সেখানে ভারত খুব একটা ভাল কিছু করছে না। এটিই দুঃখজনক ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি দেশ তার নিজের স্বার্থই দেখবে। এটি স্বাভাবিক বিষয়। ক্ষেত্রেবিশেষে আমার মনে হয়েছে, ভারতীয় দূরদর্শিতার যথেষ্ট অভাব আছে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের পক্ষে রাখার। আমাদের যে কিছু ক্ষেত্রে অসন্তোষ আছে সেটি প্রশমন করার প্রয়োজন আছে, সেটি বুঝতে ভারতের যথেষ্ট অভাব আছে। কারণ, আপনি যদি বন্ধু রাখতে চান অর্থাৎ বন্ধুর আস্থা রাখতে চান, তাহলেতো বন্ধুর স্বার্থটুকুও আপনাকে রাখতে হবে।
লেখক: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব