রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধান জরুরি
রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই একটি সমাধান হতে পারে। গত পাঁচ বছর ধরেই বাংলাদেশ এবং আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বন্ধুরা যারা আছেন, সকলে মিলেই আমরা চেষ্টা করছি যাতে করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদের সঙ্গে, সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে যে, সেই কাজটি আমরা এখনো সম্পন্ন করতে পারিনি। কেন পারিনি তার নিশ্চয়ই অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে।
আমি যেটি বলতে চাই যে, এত অল্প জায়গায় এত বড় জনগোষ্ঠী প্রায় দশ লাখের মতো মানুষ এবং যারা এই দেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে অর্থাৎ মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে। এই মানুষগুেলোর জীবনের অভিজ্ঞতাটুকু তিক্ত, অনেক ভয়ংকর এবং সহিংস। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে যারা এসেছেন এবং জীবন সম্পর্কে যাদের প্রচণ্ড নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই ধরনের জনগোষ্ঠী এতটুকু জায়গায় থাকলে বিভিন্নমুখি সমস্যা হতে পারে। সেই কথাটি কিন্তু বাংলাদেশের দিক থেকে বরাবরই বলছি।
এটির যদি সমাধান না ঘটে তাহলে নিরাপত্তা, মানবিক সমস্যা, পরিবেশগত সমস্যা হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এখন কিন্তু সত্যিকার অর্থেই সেদিকেই আমরা যাচ্ছি। বাস্তব অর্থেই আমরা সেটি দেখছি।
আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি যে, ক্রমাগতভাবেই কিন্তু আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। খুনাখুনি হচ্ছে। ধর্ষণ হচ্ছে। নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এগুলো আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। আমাদের যেটুকু সদয় অথবা উদার হওয়া যায়, সেই উদারতার দিক থেকেই কিন্তু আমরা বাংলাদেশে তাদের জায়গা দিয়েছি।
তাদের দেখভাল আমরা করছি। এখন আশাহীন অবস্থায় কিছু মানুষ যখন ওখানে পড়ে থাকে, তাহলে কিন্তু এ ধরনের জটিলতা আমরা যেটি বলছি, এগুলো খুব অপ্রত্যাশিত নয় এবং একইসঙ্গে লক্ষ্যনীয় যে শুধুমাত্র ক্যাম্পের ভেতরে যে সমস্যা হয়েছে তা নয়। ক্যাম্পের বাইরে যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কিন্তু সম্পর্ক বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। যার ফলে পারস্পরিক একটি অবিশ্বাস ও নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
সামগ্রিক অর্থে যেটি বলা যায়, আমরা এই সমস্যাটির সমাধান এখন পর্যন্ত করতে না পারার কারণ, এই রোহিঙ্গা সমস্যা অনেকগুলো ডালপালা ছড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্যি হলো, আমরা এই সমস্যাটির খুব ইতিবাচক সমাধান দেখতে পাচ্ছি না।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ও বলেছেন, যদি দরকার হয়, তবে ক্যাম্পের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ চিন্তা করবেন। নিশ্চয়ই আমরা বাধ্য হলে সেটি আমাদের করতে হবে। সেটি খুব ভালো কিছু হবে তা নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যে সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবে সেটিও জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে গুটিকয়েক রোহিঙ্গাদের জন্য সাধারণ রোহিঙ্গারা যদি বাড়তি চাপের মুখে পড়ে, সেটি খুব খারাপ হবে।
আমরা যেমন রোহিঙ্গাদের এখানে থাকবার জন্য জায়গা দিয়েছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কিন্তু আমাদেরকে সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়েছে। কাজেই এখানে তিনটি উপাদান সমন্বিতভাবেই আঁচ করতে হবে।
এই বিশৃঙ্খলা সমাধানের জন্য, অথবা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অথবা রোহিঙ্গারা যতদিন থাকবেন, তারা যেন নিরাপদে সম্মানের সাথে থাকতে পারেন সেজন্য। এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ এ কারণে যে রোহিঙ্গা সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না হওয়া অব্ধি রোহিঙ্গারা যেন এই ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে সেটি সুনিশ্চিত করা।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে যেভাবে খুনাখুনি বাড়ছে, মারামারি বাড়ছে এগুলি হলেতো রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার দায়দায়িত্বতো আছে। সকল সরকারকেই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের যদি শক্ত হাত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, আমরা সেটি করব। আমাদের সুরক্ষাটুকু প্রথমত আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত