সরকারের ব্যয় কমলে বাড়তে পারে সাধারণ মানুষের
সরকার অহেতুক ব্যয় সাশ্রয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে সব মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নিরূপণ করবে। সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ হ্রাস করতে হবে। জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের লক্ষে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করবে।
অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা তেল ব্যবহার করেন এখন তাদের বরাদ্দ ২০ শতাংশ কম হবে। অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে এবং অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে। অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকিকরণের লক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধিকল্পে অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সরকার মোটা দাগে ব্যয় কমানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেটি প্রশংসার দাবিদার। অহেতুক ভ্রমণ, ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারসহ ইত্যাদি অতিরিক্ত ব্যয়গুলো সম্পর্কে বলব এসব বাহুল্য বাদ দেওয়া উচিত। এর বেশি যেটি করা হয়েছে, লোডশেডিং কমাতে অফিস সময় কমিয়ে দেবে। প্রাইভেট জেনারেটর যেগুলো আছে সেসব কিন্তু চলতে থাকবে। এখন ঘরে ঘরে গড়ে কতটুকু খরচ হচ্ছে সেটিও দেখার দরকার আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমার বাড়িতে একঘণ্টা লোডশেডিং এ জেনারেটর চলত, এখন লোডশেডিং এর কারণে আরও একঘণ্টা চলবে। সরকারের ব্যয় কমলে কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যয় বাড়তে পারে।
এখন আমাদের বুঝতে হবে, সেটি সার্বিকভাবে মঙ্গলজনক কিনা। জরুরিভিত্তিতে যেটি করা উচিত, বিশেষ করে অফিস আদালতে অযথা লাইটিং করা— সেগুলো বাহুল্য। এটিতে কোন কিছু এসে যায় না এবং কারও কোনো ক্ষতিও হবে না। মানুষের জনজীবনে সাধারণ কিছুতে প্রভাব বিস্তার না করে যে ব্যয়গুলো অপ্রয়োজনীয় সেগুলো দূর করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি বলি, এক একটি দোকানে কতগুলো লাইট জ্বলে? বিশেষ করে শাড়ির শো-রুমগুলোতে, তারপর হোটেলের লবিতে, যেকোনো শপিং প্লাজাগুলোতে কতগুলো লাইট জ্বলে? এগুলোতো মিনিমাইজ করা যেতেই পারে। এমনি এমনিতে এতগুলো আলো জ্বালানোর কথা না। যাইহোক, আমি মনে করি এসব অনাহূত ব্যয় কমাতে হবে। ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে আরও যেটি হয়, সরকারি যে ব্যয়গুলো আছে, বাহুল্য খরচতো সরকারের বহু আছে। সরকারি কর্মচারীদের মোবাইল বিল দিয়ে দিচ্ছেন, ইচ্ছেমতো খরচ করছেন, সেগুলো কমান না কেন? রেন্টাল এলাউন্স দিয়ে দিয়েছেন, গাড়ি কেনার জন্য লোন দিয়ে দিয়েছেন, সেগুলো কমান না কেন?
এখন যেটি হয়েছে, যখন ভাল সময় ছিল, সব সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। অব্যবহৃত অনেক বিল্ডিং আছে, যেগুলো থেকে মাসে ১০/১২ লাখ টাকা ইলেক্ট্রিসিটি বিল দিতে হয়, এসবের কি দরকার আছে?
আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে, আমাদের ইকোনোমাইজ করার। খরচ কমানো বিশেষ করে বাহুল্য খরচ কমানো। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করা। এখন এটি একটি সুযোগ। এখন সরকার যেটি করেছে, সেটি কিছুদিন চলুক। চ্যালেঞ্জ তো আছেই, সবাইকে এটির ভার বহন করতে হবে। তবে আপাত অর্থে সরকার যে ব্যয় সাশ্রয়ের কথা ভেবে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে সেটি আশার কথা এবং এর বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারকে আরও বেশি সুক্ষ্মদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
আরএ/