বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে আরও উদ্বুদ্ধ করা উচিত
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আমাদের জাতীয় পর্যায়ে যে প্রয়োজনগুলো রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিরাজমান। ভারতের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক যোগাযোগ ইত্যাদি বহুকাল ধরেই চলে আসছে। স্বাধীনতার সময়ে ভারত আমাদের অর্থনৈতিক ও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের যে সম্প্রীতি দেখিয়েছে, তার জন্য কিন্তু এই সম্পর্কটি আজও বিরাজমান রয়ে গেছে।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যখন বাংলাদেশের জন্ম হল, সেখানেও কিন্তু বাংলাদেশ তিন দিক থেকেই ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম যে চিন্তার বিষয়টি থাকে অর্থাৎ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সেদিক থেকে প্রথমেই আমাদের যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো— ভারত একটি রাষ্ট্র এবং তার সঙ্গে সম্পর্কটি সম্মানজনকভাবে নিতে চেষ্টা করতে হবে। কাজেই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তিই হচ্ছে আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এবং তিন দিক থেকে ভারত যে আমাদের বেষ্টিত করে রেখেছে সেটি অন্যতম একটি বিবেচ্য বিষয়। ভারতের কথাও যদি বলি, সেই একই কারণে ভারতকেও কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কাজেই নিরাপত্তার বিষয়ে উভয়ে উভয়ের উপর নির্ভরশীল।
অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যদি বলি, ইচ্ছে করলেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে যে সম্পর্ক বিরাজমান তা দূর করতে পারি না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনটুকু আমলে নিতে হবে এবং সেভাবেই আমাদের নীতিমালাটুকু তৈরি করে নিতে হবে।
মানুষ যদি পারস্পরিকভাবে যোগাযোগের সুযোগ বেশি পায় সেক্ষেত্রে কিন্তু অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলোও বৃদ্ধি পায়। আমার কথা হল— ভারত আমাদের এখানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে এবং আমরাও যে পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করি, তার হিসেবে চিন্তা করলে আমরা একটু হতাশ হই। ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী, তাদের পণ্য উৎপাদন বেশি, আমরা যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করি ভারত আমাদের তার চেয়ে বেশি পণ্য পাঠাবে স্বাভাবিক।
একইভাবে আমাদেরও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে ভারতকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করা উচিত। বাংলাদেশ কিছুকাল ধরে সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকার বড় ধরনের সুযোগও দিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর এগুলো ব্যবহার করার সুযোগ আমরা তাদের দিয়েছি। রেললাইনের মাধ্যমে রাস্তাঘাটের মাধ্যমে আমরাই ভারতকে সেই সুযোগ করে দিয়েছি। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য দশ-পনের বছরে ব্যাপকহারে বেড়েছে। আমাদেরও চেষ্টা থাকতে হবে যে, নিজেদের সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নেওয়া। এটি খুব দরকার মনে হয়।
২০১১ সাল থেকে বিনা শুল্কসুদে ভারতে পণ্য সামগ্রি নেওয়ার সুযোগ আমরা পেলেও তার সুবিধা সেভাবে পাচ্ছি না। তার কারণ হল— বিভিন্ন ধরনের আধাশুল্ক অশুল্ক প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়ে গেছে। যে কারণে ভারতীয় বাজারে আমরা যে পরিমাণ পণ্য সামগ্রি রপ্তানি করতে পারতাম, সেটি আমরা সেভাবে পাচ্ছি না অর্থাৎ সেভাবে ফলপ্রসু হচ্ছে না। কাজেই সেজন্য আমরা ভারতকে বলছি, তারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ গড়ুক। বিনিয়োগ বাড়িয়ে তারা সেই পণ্যগুলো নিজেরাই কিনে নিক। এতে করে সব পক্ষই উপকৃত হবে। আমরা প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গেই সম্পর্কগুলো বাদ দিতে পারব না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সব দেশের সঙ্গেই আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে এবং সেটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে সম্পর্কটি আরও কি করে সম্প্রসারিত করা যায় সেটি ভেবে দেখতে হবে এবং সেটিই জরুরি বলে আমি মনে করি।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/