ব্যবস্থাপনা হতে হবে প্রকৃতিকে বুঝে
এখন যেহেতু বর্ষাকাল, বৃষ্টি হবে এটিই স্বাভাবিক। নদীর পানি বাড়ছে। এ বছর একটি বন্যা আগেই হয়ে গিয়েছে সুনামগঞ্জে। এটি একটু অস্বাভাবিক।
প্রত্যেকটি নদী ধরে ধরে আমাদের বুঝতে হবে। বরাক নদীই পরে সুরমা কুশিয়ারায় ধাবিত হয়েছে। এবার বরাকে বৃষ্টি হয়নি। আসামে তেমন বৃষ্টি হয়নি। মেঘালয়ে বৃষ্টি হয়েছে প্রচুর। নদীর গতি যখন তীব্র থাকে,তখনই বন্যা হয়। সুনামগঞ্জ শহরে কোনো প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নেই। কাজেই সুনামগঞ্জ ডুবে যাওয়াটি খুবই স্বাভাবিক। সিরাজগঞ্জে পানি বাড়ছে। চরগুলো ডুবে যাচ্ছে। এটিও প্রকৃতিগতভাবে খুবই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হচ্ছে এই বছর, এর সময়কাল।
সাধারণত সিলেটের পাহাড়ি নদীতে তিন চারদিন পানি থাকে। এ বছর পানির ফ্লো দেখে মনে হচ্ছে এটি সাত আট দিন থাকতে পারে। এটি আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনো জিনিস না। প্লাবনভূমিতে আপনি বাড়ি করেছেন কোনো প্রতিরক্ষা ছাড়া। কাজেই বর্ষণে ডুবে যাবে এটিই স্বাভাবিক।
বন্যা প্রতিরোধক ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে কিন্তু সিলেটে সেভাবে নেই। কিছু প্রটেকশন আছে বলেই এখনো পরিস্থিতি কিছুটা আয়ত্ত্বে। আজকে যদি সেটি না থাকত, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া পানির নিচে থাকত। আগে লোকসংখ্যা ছিল অনেক কম। এখন ১৮ কোটি। এখন যেখানে পানি উঠবে আপনি সেখানে গিয়ে বাড়ি করছেন, পানির দোষ কী? যেসব এলাকাকে প্লাবনভূমি মনে করা হতো, যেখানে গ্রামগুলো উঁচু করা, অনেকটা টিলার মতো । স্বাভাবিক বর্ষাকালে মাঠ ঘাট ডুবে যেত। মানুষের বাড়ি তার থেকে উঁচুতে। আপনি এখন নিচুতে বাড়ি করেছেন, প্লাবন ভূমিতে, আপনার বাড়িতো ডুববেই। পানিকে দোষ দিচ্ছেন কেন?
এখন প্লাবন ভূমি ডুবে গেলে সেখানে যদি আমন ধান লাগিয়ে থাকে, আমন ধান লাগানো এখনো শুরু হয়নি। আরও দশ পনের দিন পরে হবে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়তো তেমন একটা হবে না। বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হবে। এখন আমরা চিন্তাভাবনা করি। আমরাতো চিন্তাভাবনায় ব্রিটিশ আমল থেকে এখনো বের হতে পারিনি। আমরা তো চিন্তা করি না; এস এস সি, এইচ এস সি পরীক্ষা কেন এপ্রিল মে মাসে হয়? কেন নভেম্বর ডিসেম্বরে হবে না? এখন আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, কেন হয়? ইংল্যান্ডে এপ্রিল মে মাসে গ্রীষ্মকাল। ওরা পরীক্ষা দিয়ে একটা লম্বা ছুটিতে চলে যাবে। এখন আমাদেরতো সেটি অনুসরণ করলে চলবে না। বিলেতিরা যখন শাসন করত, এপ্রিলে পরীক্ষা শেষ করত।
তারপর, মে, জুন, জুলাই তারা ছুটি কাটায়। কারণ সে সময় তাদের আবহাওয়া ভাল। রোদ হয়, বৃষ্টি কম থাকে। সেজন্য তারা ছুটি উপভোগ করে। আমদের পরীক্ষা কেন এপ্রিল মে মাসে হতে হবে? ব্রিটিশ আমলে হতো বলেই কি এখনো হতে হবে?
কাজেই আমি বলতে চাই, প্রকৃতি সম্পন্ন ব্যবস্থাপনা হতে হবে। প্রকৃতিকে বুঝে ব্যবস্থাপনা হতে হবে। স্বাভাবিক বন্যার পানি কতদূর আসতে পারে, সেটি হিসেব নিকেশ করে বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট করতে হবে। এই সময়ে বন্যা হওয়াটি স্বভাবিক ব্যাপার। তবে এ বছর একটু অস্বাভাবিক কারণ, মে মাসে একটি হয়ে গিয়েছে সেটি অস্বাভাবিক ছিল। আর এবছর প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির ধারা যদি আরও তিন চারদিন চালু থাকে, তাহলে আরও সাত থেকে দশদিন ভুগতে হবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ