বাবা ও সন্তানের শাশ্বত সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে পালন করা উচিত
একসময় কোনো দিবস পৃথিবীতে ছিল না। ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে দিবসগুলো। কখন? যখন সভ্যতা তার সদাচারকে হারিয়েছে। একটা সময় ছিল, পৃথিবীর যে প্রান্তে যে মানুষই হোক, আফ্রিকান হোক, ইউরোপিয়ান হোক, এশিয়ান হোক তাদের প্রত্যেকের ভেতর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তো বটেই। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে একধরনের সহমর্মিতা ছিল। মানুষ মানুষকে অনুভব করত। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে যান্ত্রিকতা যখন প্রবলভাবে গ্রাস করে নিতে শুরু করল সবকিছু, তখন মানুষের দয়া-মায়া, স্নেহ-ভালবাসা কমতে শুরু করল। মানুষ তার মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে ফেলতে লাগল।
বাবা দিবস আলাদা থাকতে হবে কেন? বাবাকে তো আমি প্রতিদিন মান্য করব। আমি আমার ছেলেকে প্রতিদিন মান্য করব। মাকে করব। বিশেষ করে পশ্চিমা সভ্যতায় দেখা যাচ্ছে, বাবা-মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, সন্তানরা তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং তখন তাদের ঘিরে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হচ্ছে। এখন বাবাকে অন্তত একদিন হলেও স্মরণ করতে হবে, বাবা দিবস। বাবা দিবস এলে তারা বাবার সঙ্গে কথা বলেন, পশ্চিমারা উপঢৌকন পাঠান। আবার আমি যখন হাওয়াইতে ছিলাম, তখন দেখেছি, মা আলাদা বাস করে, সন্তান বলছে, আজকে আমি বাবার কাছে যাব, কয়েকঘণ্টার জন্য। এভাবে যখন আমাদের মানবিক অনুভূতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন এইসব দিবসগুলোর সৃষ্টি হয়েছে উদযাপনের জন্য। অর্থাৎ আমার বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কটুকু নষ্ট হয়ে গেছে এবং তাকে জাগরুক রাখার জন্য এই বাবা দিবসসহ অন্যান্য দিবসগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
যাইহোক, বাবা দিবসে আমি বলব, বাবা দিবসে বাবা একটি প্রধান বিষয় ছিল। আমি আমার মা ও বাবাকে নিয়ে লিখেছি। আমি আমার মা বাবাকে মুহূর্তে মুহূর্তে মনে করি। কেননা, তারা না থাকলে তো আমার কোনো অস্তিত্বই পৃথিবীতে থাকত না। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, ওরা তো এখনও ছোট। কাজেই এদের তো আমারই আগলে রাখা উচিত। একটা সময় এসে যায়, যখন বাবাদের আগলে রাখা উচিত ছেলেদের। আমিতো আমার ছেলেকে বলি, একটা সময় আমি তোমার বাবা ছিলাম, এখন তুমি আমার বাবা।
বাবা দিবসকে এলে এভাবেই মনে করি যে, বাবা ও সন্তানের শাশ্বত সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে পালন করা উচিত। সারাবছর ভুলে গিয়ে বিশেষ দিনে বাবাকে মনে করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, বাবা দিবস, মা দিবস, ভাই দিবস, বোন দিবস ইত্যাদি দিবসের মাধ্যমেও যদি আমরা মানবিক বন্ধনকে ইতিবাচকভাবে ধরে রাখতে পারি সেটিই এই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সবাইকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা।
লেখক: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি
আরএ/