সামাজিক সুরক্ষা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকে সমন্বয় জরুরি
বর্তমান সময়ে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট চলছে। খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট ইত্যাদি যার ছোঁয়া আমাদের দেশেও লেগেছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো কিছুটা চাপের মুখে আছে। এটি একটি বড় প্রেক্ষিত বর্তমান বাজেটের জন্য।
আমি মনে করি, কোভিড সমস্যার বিষয়টি কিছুটা স্থিমিত হয়ে এসেছে। আমাদের ভ্যাক্সিনেশনে অনেকটাই সফলতা এসেছে এবং আমাদের ইনফেকশন রেট আয়ত্বের মধ্যেই আছে। সুতরাং অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যখাতের দিকে নজর দিতে হবে, বিশেষকরে এটি দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার জন্য। অতীতের ঘটনাগুলো থেকে আমাদের শিখতে হবে এবং সেটিকে কাজে লাগাতে হবে।
এ মুহূর্তে বাজেট নিয়ে দুটি পর্যায়ে চিন্তা ভাবনা করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির উপরে যে চাপ, সেটি সঠিকভাবে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব? এটি একটি বিষয়। আরেকটি হচ্ছে সামস্টিক অর্থনীতির মূল্যস্ফীতির ফলে মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের উপরে, তাদের জীবনমানের উপরে যে বড় ধরনের চাপ পড়েছে, এটি একটি বিষয়। অর্থাৎ এটি কিন্তু অর্থনৈতিক কষ্টের একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি লাঘব করার জন্য কিছু বিষয় সরকারের নজর দিতে হবে।
আমি মনে করি, সামজিক সুরক্ষা কর্মসূ্টিতে আরও বেশি জোরদার করা প্রয়োজন। এখানে নগর দরিদ্ররা আছে। তাদের দিকে একটু বাড়তি নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছি। আরেকটি বিষয় যেটি তা হলো, সামজিক সুরক্ষা বলতে আমরা খাদ্য সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা দুভাবেই চিন্তা করে থাকি। এর বাইরে যে খরচ অর্থাৎ খাদ্যের বাইরে যে খরচ হয়, বিশেষ করে যেমন ইলেক্ট্রিসিটি খরচ , যাতায়াত খরচ, এগুলোর উপরও চাপ অনেক বেশি থাকে। শুধু ভর্তুকি দেওয়া নয়, এই চাপ যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সেদিক থেকে যারা এগুলো যোগান দিচ্ছে এবং যাতায়াত খাতে যেমন মালিক পক্ষ আছে, অথবা বিদ্যুৎখাতের উৎপাদক যে শ্রেণি আছে, তাদের উপর নজর দেওয়াটা খুব জরুরি। এই বিষয়গুলো হলো সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে এবং সামস্টিক সূচকগুলোকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য।
সংকট সেতো আমাদের জীবনে সবসময়ই থাকে। আমাদের যে মধ্যম মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা সেগুলোর দিকেও যেন ঠিকমতো এগিয়ে যায় সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। সেখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন, আরেকটি হচ্ছে আট বছরের মধ্যে আমাদের এসডিজি অর্জন করার একটি চ্যালেঞ্জ আছে। সুতরাং ওই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের সংকট মোকাবিলার বাইরেও যে কাঠামোগত প্রয়োজন আছে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে কাঠামোগত সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে সংস্কার এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
আমাদের মধ্যম আয়ের কথা যদি বলি, বাজেটে যেসব অগ্রাধিকার তৈরি করতে হবে, শুধুমাত্র অবকাঠামোভিত্তিক মেগা প্রকল্প নয়, আমাদের সামাজিক খাতগুলো যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির ভূমিকা রাখতে পারে, কৃষিখাত এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পখাত এগুলোকেও বাজেট থেকে সুস্পষ্ট সহায়তা দেওয়া দরকার। আমি ভর্তুকির চেয়ে উৎপাদন এবং কর্মমুখি পরিকল্পনার দিকে মনযোগ বেশি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। অনেকেই কাজ হারিয়েছে।কেউ কেউ ফিরতে পারলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত।তাদেরকে পুনরায় কাজের ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। আয় ও ব্যয় উভয়ক্ষেত্রে একটি সংগতি অর্থাৎ সামঞ্জস্যপূর্ণতা জরুরি।
লেখক: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা