রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ছয় দফা: শহীদের রক্তে লেখা

প্রতি বছর আমাদের জাতীয় জীবনে সাতই জুন তথা ‘ছয় দফা দিবস’ ফিরে আসে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা দিনটি পালন করি। এ বছর সাতই জুন তথা ছয় দফা দিবসের ৫৬তম বার্ষিকী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছয় দফা ও সাতই জুন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ছয় দফা ও সাতই জুনের গুরুত্ব অপরিসীম।

১৯৬৬-এর এই দিনে মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় ঐতিহাসিক ছয় দফা। পরবর্তীতে ‘৬৯-এর গণআন্দোলনের সূচনালগ্নে এই ছয় দফা দাড়ি-কমা-সেমিকোলনসমেত এগারো দফায় ধারিত হয়ে,’ ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এক দফা তথা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন। তার হৃদয়ের গভীরে সততই প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা তার ছিল না। জেল-জুলম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বাংলাদেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে সর্বধর্মের, সর্ববর্ণের, সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য তিনি আওয়ামী লীগের দরজা উন্মুক্ত করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে। কারো ধর্ম পালনে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের অভিপ্রায় থেকেই তিনি জাতির উদ্দেশে ছয় দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন।

বাংলার গণমানুষ ‘৬৬-এর সাতই জুন স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে সংখ্যাগুরু বাঙালি জাতিকে গোলামীর শৃঙ্খলে চিরস্থায়ীভাবে শৃঙ্খলিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এর বিপরীতে, বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ’৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলসমূহের এক কনভেনশনে বাংলার গণমানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি সম্বলিত বাঙালির ‘মুক্তিসনদ’ খ্যাত ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা দাবি’ উত্থাপন করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ‘ছয় দফা দাবি’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ঢাকা বিমান বন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ও ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘ছয় দফা’ দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বাংলার মানুষের মুক্তিসনদ ‘ছয় দফা’ ঘোষণার পর জনমত সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু তার সফর সঙ্গীসহ ৬৬-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ‘ছয় দফা’কে ‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ হিসেবে উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে বৃটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’

চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের আসন্ন কাউন্সিল সামনে রেখে ‘ছয় দফা’র যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি একের পর এক জনসভা করেন। এরই অংশ হিসেবে ২৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর মাইজদি, ওইদিনই বেগমগঞ্জ, ১০ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ সদর ও ১৪ মার্চ সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনতার দরবারে তার বক্তব্য পেশ করেন।

‘ছয় দফা’ প্রচার ও প্রকাশের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট ‘উপ কমিটি’ গঠন এবং তারই নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ছয় দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। একই বছরের মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। এদিন কাউন্সিল সভায় পুস্তিকাটি বিলি করা হয়। দলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীত হয়। বাঙালীর বাঁচার দাবি ‘ছয় দফা’কে উপলক্ষ করে ৬৬-এর মার্চে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশনটি ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেদিনের সেই কাউন্সিল সভায় আসা ১৪৪৩ জন কাউন্সিলর বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে। ‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি খসড়াও অনুমোদন করা হয়। ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে ‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা পরবর্তীকালে ‘ছয় দফা’র চূড়ান্ত পরিণতি এক দফা তথা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল। ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ‘ছয় দফা’ এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, বাংলার প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে এই পুস্তিকা সযত্নে রক্ষিত হয়েছিল। ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ বস্তুত, ‘ছয় দফা’ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর। কাউন্সিল অধিবেশনের শেষদিন অর্থাৎ ২০ মার্চ চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকারের এই বাণী লয়ে আপনারা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দিন, দেশের জন্য, দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য সবকিছু জেনে-শুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক পথে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’

আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল অধিবেশনটি ছিল বাঙালির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন। যা ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ৭১-এর মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। কাউন্সিল সভার সমাপনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেছিলেন, ‘ছয় দফার প্রশ্নে কোনো আপোষ নেই। রাজনীতিতেও কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেতাদের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়-এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ছয় দফা আদায় করতে হবে। কোনো হুমকিই ছয় দফা আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ছয় দফা হচ্ছে বাঙালির মুক্তি সনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা চলতে হয় চলব। ভবিষ্যৎ ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।’

বঙ্গবন্ধু জানতেন, ‘ছয় দফা’ই কেবল বাঙালির স্বাধিকার তথা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত কর অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। পক্ষান্তরে, পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ পাঞ্জাবিরা ‘ছয় দফা’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংখ্যাগুরু বাঙালির রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে-যা পরিণামে স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর বঙ্গবন্ধু সারা দেশ চষে বেড়ান। ২৬ মার্চ সন্দ্বীপ এবং ২৭ মার্চ সাতকানিয়ার বিশাল জনসভায় ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করেন। এরপর উত্তরাঞ্চল সফরে যান ৬৬-এর ৭ এপ্রিল। ওইদিন পাবনা ও নগরবাড়ির জনসমাবেশে বক্তৃতা করেন। একই মাসের ৮ তারিখ বগুড়া, ৯ তারিখ রংপুর, ১০ তারিখ দিনাজপুর, ১১ তারিখ রাজশাহী, ১৪ তারিখ ফরিদপুর, ১৫ তারিখ কুষ্টিয়া, ১৬ তারিখ যশোর এবং ১৭ তারিখ খুলনায় বিশাল সব জনসভায় ছয় দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বক্তৃতা করেন। এভাবে সারা দেশে ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। বিপুল সংখ্যক জনতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত লাগাতার জনসভায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় ‘ছয় দফা’র সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে উঠে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উপর নেমে আসে স্বৈরশাসক আইয়ুবের নির্মম গ্রেপ্তার-নির্যাতন। প্রত্যেক জেলায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রদত্ত বক্তৃতার প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যেক জেলা থেকে জারীকৃত ওয়ারেন্ট বলে লাগাতার গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এপ্রিলের ১৭ তারিখ রাত্রি ৪টায় খুলনায় এক জনসভায় ভাষণদান শেষে ঢাকা ফেরার পথে রমনা থানার জারীকৃত ওয়ারেন্ট অনুযায়ী পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৪৭ (৫) ধারা বলে পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। যশোর মহকুমা হাকিমের এজলাস হতে তিনি জামিন পান। সেদিনই রাত ৯টায় সিলেটে গ্রেপ্তার, পুনরায় জামিনের আবেদন এবং ২৩ তারিখ জামিন লাভ। ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার, ২৫ এপ্রিল জামিন। ‘ছয় দফা’ প্রচারকালে তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট ৮ বার গ্রেপ্তার করা হয়। এভাবেই আইয়ুবের দমন নীতি অব্যাহত থাকে। একই বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’ স্মরণে শ্রমিক জনতার এক বিরাট সমাবেশে শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে এবং পাটের মালায় ভূষিত করে। ভাষণদান শেষে রাত ১টায় তিনি যখন বাসায় ফেরেন তখন পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৩২ (১) ‘ক’ ধারা বলে তাকেসহ তার ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। ‘ছয় দফা’ দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে স্বৈরশাসক আইয়ুব বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে দেশরক্ষা আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের উপর অব্যাহত গ্রেপ্তার-নির্যাতন চালায়। সামরিক সরকারের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের জনসভায় ‘ছয় দফা’র প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। হাজার হাজার শ্রমিক এদিন স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে এবং পল্টনে অনুষ্ঠিত জনসভায় উপস্থিত হয়ে সরকারের দমন নীতির তীব্র প্রতিবাদ করে। দলের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেপ্তার করা হলে সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেতাদের গ্রেপ্তার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘সাতই জুন’ সর্বব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। সাতই জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা যেন অগ্নিগর্ভ। বিক্ষুব্ধ মানুষ স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়।

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে-আমরা সেদিন হরতাল কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সেদিনের হরতাল কর্মসূচিতে ধর্মঘটী ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে তেজগাঁয় শ্রমিক মনু মিয়া, আদমজীতে মুজিবুল্লাহসহ এগারো জন শহীদ হন এবং প্রায় আটশ’ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। তেজগাঁ শিল্পাঞ্চলে হরতাল সফল করার দায়িত্বে ছিলেন ছাত্রনেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী ও নূরে আলম সিদ্দিকী। তারা সেখানে বক্তৃতা করেন। প্রকৃতপক্ষে সাতই জুন ছিল স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথের আরম্ভস্থল তথা যাত্রাবিন্দু। আর আমরা যারা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিও স্থাপিত হয়েছিল এদিনটিতেই।

১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬২-এর ১৭ সেপ্টেম্বরের ‘শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৭ জুন ‘ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর ১৭ থেকে ২৪ জানুয়ারির ‘গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান, ৯ ফেব্রুয়ারি ১১-দফা বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ‘শপথ দিবস’ পালন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান, অতঃপর ২২ ফেব্রুয়ারি সব রাজবন্দির মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি লাভ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ‘মুক্ত মানব শেখ মুজিব’কে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক তথা নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করে নিয়েছিল বাংলার মানুষের হৃদয় আর সৃষ্টি করেছিল ইতিহাস। অতীতে আমাদের সময়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তা না হলে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে দিতে হত। এটাই ছিল বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধানের অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। বিধান মোতাবেক ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আসম আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এক বছর পরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২১ মার্চের মধ্যে সম্মেলন করে নূরে আলম সিদ্দিকী এবং শাজাহান সিরাজের কাছে নেতৃত্বের দায়িত্বভার অর্পণ করে আমাদের কমিটি বিদায় নেই এবং ২২ মার্চ হল ত্যাগ করে গ্রিন রোডে ‘চন্দ্রশীলা’ নামে একটি বাসা ভাড়া করে আমি এবং রাজ্জাক ভাই বসবাস শুরু করি। আজ অতীতের সেই সোনালী দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের অধিকার আদায় তথা ‘মুজিবাদর্শ’ প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড। মূলত বঙ্গবন্ধু মুজিবের নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বই সেদিন সারা দেশে সাতই জুনের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের পথে এক অনন্য নজীর স্থাপন করে। আর বাংলার মেহনতী মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রদত্ত ‘ছয় দফা’ই হচ্ছে বাঙালির জাতীয় মুক্তির সনদ।

‘ছয় দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু ‘ছয় দফা’র প্রতি বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় স্থির-প্রতীজ্ঞাবোধ তাকে জনমনে জনগণমন অধিনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত করে। ৬৬-এর ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েও ‘ছয় দফা’ আন্দোলনকে যখন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দেন। ‘ছয় দফা’ দাবি আদায়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে বাংলার সর্বস্তরের মানুষসহ আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তারা ৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয়-দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভুক্ত করে সারা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলশ্রুতিতে এগারো দফা আন্দোলনের সপক্ষে সারাদেশে যে গণজোয়ার তৈরি হয় তাতে দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এমতাবস্থায় শাসকশ্রেণী গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আমাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করে। তাদের এই অপপ্রয়াসের সমূচিত জবাব দিতে ৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শপথ দিবসের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু মুজিবের নির্দেশে বলেছিলাম, ‘পূর্ব বাংলার মানুষ কোনদিন বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় দেয়নি এবং বিচ্ছিন্নতায় বিশ্বাসীও নয়। কারণ তারা সংখ্যায় শতকরা ৫৬ জন। যদি কারো পূর্ব বাংলার সঙ্গে থাকতে আপত্তি থাকে তবে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।’ নেতার এই নির্দেশ আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মেনে চলেছি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা চালানোর আগ পর্যন্ত কোনরকম উগ্রতাকে অতি বিপ্লবীপনাকে আমরা প্রশ্রয় দেইনি। নিয়মতন্ত্রের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগে আমাদের কখনোই অভিযুক্ত করা যায়নি। আমরা আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ন্যায্যতা প্রমাণ করে মুক্তিসংগ্রামী হিসেবেই এগিয়ে গেছি। আর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে সাতই জুনের কর্মসূচি পালনকালে শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মদান।

ছয় দফার পক্ষে সাতই জুনের হরতাল এতটাই সর্বব্যাপী ছিল যে, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এসম্পর্কে প্রতিবেদন মুদ্রণ ও প্রকাশের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করেছিল। সাতই জুনের সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ও ‘ছয় দফা’র পক্ষে জনমত তৈরিতে দৈনিক ইত্তেফাকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ৬৬-এর ১৬ জুন পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধির ৩২(১) ধারায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার এবং দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করে। পরে, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে দৈনিক ইত্তেফাক এবং বাজেয়াপ্তকৃত নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসটি ফেরত প্রদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়েছিল। ‘ছয় দফা’ দাবি আদায় ও পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য সাতই জুনে যে সার্বভৌম পার্লামেন্টের দাবিতে আমরা ছয় দফার পক্ষে সংগ্রাম করেছিলাম সেই কর্মসূচির ফলশ্রুতিই হচ্ছে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সাতই জুন ছিল এর সূচনা বিন্দু। আজ ভাবতে কত ভালো লাগে, আমাদের জাতীয় জীবনে শত শহীদের রক্তে লেখা এদিনটি চেতনায় জাতীয় মুক্তির যে অগ্নিশিখার জন্ম দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ৭০-এ জুনের ২ তারিখে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং তারই নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি।

আওয়ামী লীগে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু আমাকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে মনোনয়ন দেন এবং মাত্র সাতাশ বছর এক মাস পনেরো দিন বয়সে আমি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। এরপর ৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও নির্দেশে মুজিব বাহিনীর চার প্রধানের অন্যতম হয়ে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় আমাকে তার রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন।

আজ সাতই জুনে অতীতের অনেক স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে উঠে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে আমার জীবন ধন্য। সাতই জুনের চেতনাবহ এই দিনটি আমার জীবনে অম্লান হয়ে আছে। সাতই জুনে যে সব শহীদ ভাইয়েরা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, বাংলার মানুষের মুক্তির পথকে প্রশস্ত করে গিয়েছেন, আজ তাদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। তাদের অমর প্রাণের বিনিময়ে সংগ্রাম পরম্পরায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জাতির পিতার সংগ্রামী চেতনার ভিত্তিত্বে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা করেছি। প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিক সাতই জুন ছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার প্রারম্ভ বিন্দু। এই দিনটিতে সাতই জুনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্তব্য বলে মনে করি।

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বিয়ে না করেই পঞ্চাশে অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রী, তোলপাড় নেটদুনিয়া

বলিউড অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেল। ছবি: সংগৃহীত

বলিউড অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেল আবারও উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। তবে এবার কোনো সিনেমা বা গ্ল্যামার নিয়ে নয়, বরং ব্যক্তিগত জীবনের একটি রহস্যজনক ইঙ্গিত নিয়েই সরব নেটিজেনরা। ৪৯ বছর বয়সেও তার স্টাইল ও সৌন্দর্যে মোহিত ভক্তরা, কিন্তু সম্প্রতি দুবাইতে ছুটি কাটাতে গিয়ে পোস্ট করা একটি ছবিতে তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জল্পনা।

সবুজ মনোকিনিতে একটি ম্যাঙ্গো আইসক্রিম হাতে, খোলা চুল, চোখে সানগ্লাস আর মাথায় স্টাইলিশ টুপি পরে ক্যামেরার দিকে পোজ দিয়েছেন আমিশা। সাধারণত এমন ছবিতে ভক্তরা প্রশংসায় ভরিয়ে দেন কমেন্ট বক্স। তবে এবার নজর কাড়ে তার পেট। নেটিজেনদের একাংশ মনে করছেন, ছবিতে ‘বেবি বাম্প’ স্পষ্ট। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে— “তিনি কি অন্তঃসত্ত্বা?” কেউ লিখেছেন, “বিয়ের আগেই বেবি?” আবার কেউ লিখেছেন, “হে ভগবান, এটা কি সত্যি?”

 

বলিউড অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেল। ছবি: সংগৃহীত

এ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি আমিশা। তবে এর আগে ১৯ বছরের ছোট নির্বাণ বিড়লার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়। একটি ছবি ঘিরে তখনো নেটদুনিয়ায় বেশ আলোচনা হয়েছিল, যেখানে নির্বাণকে ‘ডার্লিং’ বলে সম্বোধন করেন আমিশা, আর নির্বাণও তেমনি প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।

বর্তমানে আমিশার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এটি নিছক গুজব, আলো ছড়ানো একটি ছবি, না কি সত্যিই জীবনের নতুন অধ্যায়—তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় থাকতে অভিনেত্রী ভালোই জানেন কীভাবে দর্শকদের কৌতূহলী করে তুলতে হয়।

Header Ad
Header Ad

পারভেজের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে মাতম, পাগলপ্রায় মা-বাবা ও একমাত্র বোন

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রদল কর্মী পারভেজের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও একমাত্র বোন। কাঁদছে স্বজন ও গ্রামের মানুষ।

তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে হতবাক সবাই। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি স্বজন ও এলাকাবাসির। রাত ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে পারভেজের লাশ।

সন্তান হারানো শোকে আজোড়ে কাঁদছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা পারভীন আক্তার। বাবা জসিম উদ্দিন যেন শোকে পাথর। এলাকার প্রিয়মুখ পারভেজের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে কাঁদছে গ্রামের মানুষ।

মৃত্যুর আগের রাতে মায়ের সাথে শেষ কথা হয় পারভেজের। শেষবারের মতো ভিডিও কলে দেখেন ছেলের মুখ।

ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কুয়েত প্রবাসী বাবা জসিম উদ্দিন বাড়ি এসেছেন রোববার ভোরে। একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সন্তান হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা বাবা জসিম উদ্দিন।

মা পারভীন আক্তার বলেন, 'যারা আমার ছেলেরে মারছে তাদের আমার সামনে আনো। আমি জিগাইতাম কেরে আমার ছেলের মারছে।'

বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, 'আমার আর বাইচ্চা থাইক্যা কি অইবো। আমার ছেলেই তো নাই। হাত-পা ভাইঙ্গা রাখতো, সারাজীবন পালতাম, খালি বাবা ডাকটা শুনতাম। যারা আমার ছেলে মারছে তাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই।'

বাবা বিদেশে থাকায় নিজের গ্রামের বাড়িতে নতুন একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন পারভেজ। কিন্তু সে বাড়িতে আর থাকা হলো না তার। ফিরেছে লাশ হয়ে। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ আসে গ্রামের বাড়ি ভালুকার বিরুনীয়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে। লাশ আসার পর সৃষ্টি হয় হৃদয় বিধারক পরিবেশ। পাগল প্রায় মা-বাবা-বোনের আহাজারিতে কান্নার রোল পড়ে।

পারভেজের মৃত্যুর খবরে ভালুকার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে ভিড় করেছেন এলাকার মানুষ। এলাকায় স্বজন, ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত পারভেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানান স্বজন ও এলাকার মানুষেরা। তাদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত পারভেজের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি জানান স্থানীয়রা।

পারভেজের পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পারভেজের বাবা বিরুনীয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তাদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। পারভেজ এলাকায় আসলে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মসূচি ও মিছিলে সবসময় অগ্রভাগে থাকতো।

এদিকে ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে রোববার বিকেলে ভালুকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল ও স্থানীয়রা। এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিল পারভেজ। এ ঘটনায় আটজনের নামসহ অজ্ঞাত আসামি করে বনানি থানায় মামলা করেছে নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ুন।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি কিউবা মিচেল

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি কিউবা মিচেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির ধারা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। ইংল্যান্ডের ক্লাব সান্ডারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা ১৯ বছর বয়সী মাঝমাঠের খেলোয়াড় কিউবা মিচেল বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কিউবাকে গতকাল একটি ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল। আজ বিকেলে সেই ই-মেইলের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে তিনি আগ্রহী এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত আছেন।

জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের হলেও কিউবার মা বাংলাদেশের এবং বাবা জ্যামাইকান। ইতোমধ্যে সান্ডারল্যান্ডের হয়ে ৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তার ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল বার্মিংহাম সিটির যুব দলে।

এর আগে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব কাভালরির ফুটবলার সামিত সোমও বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে তার জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে এবং পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াধীন।

ডেনমার্কপ্রবাসী মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়ার পথ ধরে প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশ দলে খেলার এই ধারা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হামজা চৌধুরীর অভিষেকের পর থেকেই বিষয়টি ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহও বেড়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিয়ে না করেই পঞ্চাশে অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রী, তোলপাড় নেটদুনিয়া
পারভেজের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে মাতম, পাগলপ্রায় মা-বাবা ও একমাত্র বোন
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি কিউবা মিচেল
আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর
২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই ৫০ সেঞ্চুরিতে দেশের প্রথম এনামুল হক
ভিসা বাতিল করায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও চীনা শিক্ষার্থীদের মামলা
একনেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন
বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় এনসিপি
এপ্রিলে ১৯ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া নিয়ে বিএনপির অভিমত
ফাইয়াজের মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার নেই: আসিফ নজরুল
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক ছাত্রীকে ৭ দিন ধরে আটকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ!
বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল মুসলিম সমাজ, হায়দ্রাবাদে গণবিক্ষোভ
ফকিরাপুলে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ
আল-আকসা ভেঙে মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা ফাঁস, ফিলিস্তিনের সতর্কবার্তা
শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে: চিফ প্রসিকিউটর
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
আইপিএলে অভিষেক ম্যাচেই তিন রেকর্ড গড়লেন ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী