নাটোরে আমের কেজি ২ টাকা
নাটোরে প্রতি কেজি কাঁচা আম পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই টাকায়। আর সেটা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা দরে। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লুফে নিচ্ছেন প্রতি কেজিতে প্রায় ১৩-১৮ টাকা। ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা।
চলতি মৌসুমে গাছে আম আসার পর থেকে তীব্র খরায় মাঝে মাঝে ঝরে পড়ছে আম। এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইলেই গাছ থেকে পড়ছে বিভিন্ন আকৃতির আম। ওই সব আম বাগানিরা বিক্রি করছেন পাইকারি বাজারে। আর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন খুচরায়।
আম বাগানিদের দাবি, জেলা জুড়ে দফায় দফায় কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় কয়েকশ মণ আম ঝরে পড়েছে। সেই আম জেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে পাইকারি মাত্র দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় আমচাষিরা। তবে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লালপুর আর বাগাতিপাড়া উপজেলায়।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় ১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। তবে কাঁচা আম ঝরে পড়ায় ওই লক্ষ্য পূরণ করা নিয়ে শঙ্কায় বাগানিরা।
উপজেলার দুড়দুড়ীয়া, মনিহারপুর, গন্ডবিল, বেরিলাবাড়িসহ আশপাশের এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঝরে পড়া আম পাড়া-মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে ২ টাকা কেজি দরে কিনছেন পাইকাররা। এসব আম কিনে শত শত মণ আম বস্তাভর্তি করে জড়ো করছেন ব্যবসায়ীরা। আর এসব আম দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার আমচাষি রেজাউল করিম বলেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়ি। গাছের গোঁড়ায় রস না থাকায় বোঁটা শুকিয়ে গুটি ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে আবার আঘাত হানে কালবৈশাখী। সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ মেট্রিক টন আম ঝরে গেছে। এসব আম মাত্র দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
স্থানীয় আম ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বস্তা আম কিনেছেন। খরচসহ এসব আমের দাম পড়েছে প্রায় ১০০ টাকা মণ। তার কেনা আম ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন। তার মতো অনেকেই আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। ঝড়ে পড়ে যাওয়ার পর এখনো গাছে যে আম আছে চাষিরা সঠিকভাবে সেগুলোর যত্ন নিলে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। তাতেই আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে।
অপরদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলার আমবাগানি আনোয়ার হোসেন অপু জানান, খরা আর ঝড়ের কারণে তার বাগানের প্রায় ৩০ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। ওইসব আম তিনি বিক্রি করেছেন দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি।
নাটোর শহরের মাদ্রাসামোড় ও স্টেশন বাজার ঘুরে দেখা যায়,কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে খুচরা ১৫-২০ টাকা কেজি। খুচরা দোকানি হুজুর আলী জানান, তিনি ওই আম কিনেছেন ১০ টাকা কেজি। গাড়িভাড়া দিয়ে তার ১২ টাকা পড়েছে। তাই বিক্রি করছেন ১৫-২০ টাকা কেজি।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলা সমন্বয় সভায় কাঁচা আমের বিক্রি দর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় প্রাণ কোম্পানি আচার তৈরির জন্য আম কিনছে ১৩ টাকা কেজি দরে। আর অন্য কিছু কোম্পানি নিচ্ছে ১৮ টাকা কেজি দরে। সে হিসাবে পাইকারি বাজারদর এত কম হওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি সমাধানের উপায় নিয়ে আগামী সভায় আলেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে আমের বাজার রয়েছে। যেখানে কৃষকরা সরাসরি আম বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পান। নাটোরে এমন বাজার বা কৃষকবাজার করা যায় কি না এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।
এসজি