ইউটিউব দেখে বস্তায় আদা চাষ
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে পাটি আমবাটী গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন ও নার্গিস বেগম দম্পতি আম ও লিচুর বাগানের ফাঁকা জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আম ও লিচুর বাগান ছাড়াও বাড়ির আঙিনা ও বসতবাড়ির আশপাশে ফাঁকা জায়গাতেও বস্তায় আদা চাষ করেছেন তারা।
ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের ভিডিও দেখে উৎসাহিত হন ওই দম্পতি। এলাকায় প্রথমবারের মতো গত বছর বাণিজ্যিকভাবে ৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হন রুহুল আমিন ও নার্গিস বেগম দম্পতি। আরও লাভের আশায় বসতবাড়ির আশপাশে এবং আম ও লিচুর বাগানের ফাঁকা জায়গায় এবার তারা ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাদের দেখে এলাকার অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
রুহুল আমিন বলেন, তারা তিন বোন ও এক ভাই। ভাই-বোনদের তিনি ছোট। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় তার বাবা মারা যান। ওই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। ওই সময় সংসারে নানান টানাপোড়ন গেছে। কৃষি কাজ করেই তিনি তার ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। বিয়ে করার পর দ্বায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। নিজেদের অল্প জমিতে ফসলাদি চাষ করেও অভাব যাচ্ছিল না। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বস্তায় আদা চাষ করে এখন একটা আশার আলো দেখতেছি। গত বছর ১০০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রি করার পরও প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল। এ বছর বাজারে আদার যে দাম রয়েছে তাতে আশা করছি ১৫ হাজার বস্তার আদা বিক্রি করে ১০-১২ লাখ টাকা লাভ থাকবে।
নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়কের পাশেই পত্নীতলা উপজেলার পাটিচরা ইউনিয়নের পাটি আমবাটী গ্রামটি অবস্থিত। সরেজমিনে সম্প্রতি গিয়ে মহাসড়ক থেকে কাঁচা রাস্তা ধরে গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল তিন থেকে চার বয়সী গাছের একটি আম বাগান। সেই আম বাগানের ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে শত শত বস্তায় লাগানো হয়েছে আদা। বস্তার ভরা মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে আদার গাছ। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সেই সব গাছের পরিচর্যা করছিলেন আদা চাষি নার্গিস বেগম।
নার্গিস বেগম জানান, তার ক্ষেতের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। শ্রমিকদের তদারকি করার জন্য তার স্বামী মাঠে গিয়েছেন। এজন্য আদার গাছের পরিচর্চার কাজ তাকেই দেখতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সময়ই তার স্বামীকে মাঠে অন্যান্য কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকেন। আদা চাষে পরিমাণ মতো জৈব, রাসায়নিক সার এবং বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে সিমেন্টের বস্তায় ভরা থেকে বস্তা থেকে পরিপক্ক আদা সংগ্রহ পর্যন্ত অধিকাংশ কাজ তাকেই করতে হয়।
তিনি বলেন, পরিপক্ক রসালো আদা চটের (পাটের বস্তা) বস্তায় ভরে তাতে মাঝে মাঝে পানি দিয়ে ১০-১৫ দিন রেখে ওই সব আদা থেকে কুশি বা টেক জন্মায়। এক একটা আদায় তিন-চারটা কুশি হয়। কুশিসহ আদা কেটে সেগুলো বীজ হিসেবে বস্তায় ভরা মাটিতে লাগানো হয়। একেকটা বস্তায় তিনটা করে আদার গাছ লাগানো হয়। বীজ তৈরি থেকে শুরু করে সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিটি বস্তায় গত বছর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৫ টাকা করে। প্রতিটি বস্তায় ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম করে আদা পাওয়া যায়।
রুহুল আমিন বলেন, ‘সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে এই পদ্ধতিতে ফলন বেশি হয়। গত বছর আদার দাম বাজারে কম থাকা সত্ত্বেও লাভের মুখ দেখেছি। তাই এবার আরও বেশি আদা লাগিয়েছি। আমাদের দেখাদেখি এলাকায় বস্তায় আদা চাষ করার জন্য পরামর্শ চাইতে আসছেন। আমরাও অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।’
পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ দেশের অন্যান্য জেলায় কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হলেও নওগাঁয় এই পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো রুহুল ও নার্গিস দম্পতি প্রথম শুরু করেছেন। তাদের এভাবে আদা চাষে এলাকার অনেক কৃষকই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ যেমন চাহিদা মেটাতে পারবে, একইভাবে কৃষকও লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকেরই ছোট-বড় বিভিন্ন ফলজ বাগান রয়েছে। বিশেষ এখানে আমের বাগান প্রচুর। এসব বাগানে আম গাছের ফাঁকা জায়গা আছে, এগুলো অব্যবহৃত থাকে। এই ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে আদা চাষ করলে অন্যান্য কৃষকেরাও লাভবান হতে পারবেন।
এসএন