মরুভূমির ‘সাম্মাম’ চাষে মোন্নাফ আলীর চমক
দেখতে অনেকটা তরমুজের মতো। দেশে অনেকেই এই ফলটিকে ‘রকমেলন’ নামে চেনেন। দেশের মাটিতে মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’ চাষ করে লাভবান হয়েছেন মোন্নাফ আলী মন্ডল। ৭৫ শতক জমিতে সাম্মাম ফলের আবাদ করে এখন পর্যন্ত তিনি আড়াই লাখ টাকা আয় করেছেন। নতুন জাতের এ ফল উৎপাদনের খবর পেয়ে দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষক ও দর্শনার্থীরা। অনেকেই নতুন জাতের এ ফল খেয়ে দেখছেন, আবার কেউবা ক্রয় করছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মোন্নাফ আলী মন্ডল। তেঁতুলতলা এলাকায় ভাতারমারি ফার্মের পশ্চিম পাশে ৭৫ শতাংশ জমিতে ‘রকমেলন’ চাষ শুরু করেছেন। তিনি একজন ভালো ও অভিজ্ঞ তরমুজ চাষি হলেও তরমুজের পাশাপাশি এবার এই মরুর ফল চাষ করেছেন। ইউটিউব দেখে মালচিং পলিথিন ছিদ্র করে এর ফাঁকে ফাঁকে বীজ বপন করেন তিনি। বপনের মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ‘রকমেলন বা সাম্মাম’ ফল কর্তন (হারভেস্ট) করে বাজারজাতকরণ করছেন। ফলে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন। তেমনি এখানে কাজ করে ৮-১০ জন নারী-পুরুষ পেয়েছেন আয়ের উৎস।
মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে এর ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি এই কৃষি উদ্যোক্তা। ৭৫ শতাংশ জমিতে রকমেলন চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই আড়াই লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৫ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তরমুজ চাষের মতো করেই তৈরি করা হয়েছে সারিবদ্ধ মাটির ঢিবি। দূর দেখে যে কেউ দেখলে মনে করবেন এটা তরমুজ ক্ষেত। কিন্তু কাছে যেতেই বোঝা গেল এটি তরমুজ সাদৃশ্য নতুন জাতের সাম্মাম ফল। মাটির উপরে মালচিং বিছিয়ে সাম্মাম ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে সেখানে। আর ছিদ্রকরা মালচিংয়ের ফাঁকা দিয়ে গজিয়ে উঠেছে সাম্মাম ফলের গাছ।
সাম্মাম ফলের চাষি কৃষক মোন্নাফ আলী মন্ডল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ফলটি এই অঞ্চলে পরিচিত না হওয়ায় বাজারজাত করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এখন পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এখনো মাঠে যা ফল আছে তাতে আরও লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার এক পরিচিত কৃষকের কাছ থেকে মোন্নাফ আলী মন্ডল সাম্মাম ফলের বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর সেসব বীজ থেকে তিনি বাড়িতে চারা তৈরি করেন।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রাথমিকভাবে ৭৫ শতক জমিতে সাম্মাম ফলের চারাগুলো রোপণ করা হয়। তরমুজের মতো করে মাটিতেই এই ফলের চাষ করা হয়। জমিতে রোপণের দেড় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয় মরুভূমির ফল সাম্মাম। ফলটি সর্বনিম্ন ৫০০ গ্রাম থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। ফলটি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হয় বাজারে। আর আমি পাইকারিভাবে বিক্রি করছি ৬০-৮০ টাকা দরে।
তিনি আরও বলেন, আগে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে সাম্মাম ফলটি বিক্রি করেছি। এখন ক্ষেত থেকেই ঢাকার পাইকার এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশে এই ফলের বাজার সম্প্রসারণ হলে দেশের কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
ক্ষেতে কাজ করে তাদের সংসারও ভালো চলছে বলে জানান স্থানীয় নারী শ্রমিক কৌশলা। এর আগে কখনো এমন ফল দেখেননি ও খাননি বলে স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন ফসলের মাঠে।
আরিফ নামে এক দর্শনার্থী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রকমেলন ফলটি আগে কখনো সরাসরি দেখিনি ও খাইনি। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এখানে দেখতে আসলাম। দেখে ও ফলটি খেয়ে ভালোই লাগল।
স্থানীয় কৃষক সুমন হোসেন বলেন, মোন্নাফের রকমেলন ক্ষেত দেখতে এসেছি। দেখে ভালোই লাগল। চিন্তা করছি আগামীতে আমিও এর চাষ করব। এ ছাড়া আশপাশের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
রাজধানীতে চাহিদা থাকায় ক্ষেত থেকে রকমেলন ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা কেজি দরে কিনে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করেন বলে জানান ব্যবসায়ী উজ্জ্বল।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটি মরুভূমির ফল হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া ও মাটির সঙ্গে ভালোভাবে অভিযোজিত। স্থানীয় পর্যায়ে এটির বাজার তৈরি হলেও এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রকমেলন একটি ভিটামিন খনিজ সমৃদ্ধ ফল। এটি একটি লাভজনক ফসল ও এর দামও ভালো। তাই রকমেলন চাষে মোন্নাফ আলী মন্ডলকে পোকা-মাকড় রোধসহ সব ধরনের সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর।
এসজি