নেত্রকোনায় হাওরে ধানে চিটা, দিশেহারা কৃষক
নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হলেও আগাম ব্রি-২৮ ধান চাষে ধানে চিটা হওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা। ধান চাষ করে লাভবান না হওয়ার কারণে তাদের লোকসান গুনতে হবে এ বারের বোর ফসল চাষ মৌসুমে। তবে জেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ৮৮ জাতের ধান চাষ করলে এমনটি হতো না বলে তাদের দাবি।
হাওরাঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা অকাল বন্যার হাত থেকে সারা বছরের একমাত্র ফসল রক্ষা এবং আগাম ফলনের আশায় জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিল। বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হওয়ায় এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে যাওয়ায় কপাল পুড়ল তাদের।
ফলে তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে সারা বছরের খোরাকি এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। এর আগের বছরও একই ধান চাষ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের অসচেতনতা এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদাসিনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে হাওরাঞ্চলের ধান উৎপাদন।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমি। বোর ধান চাষ লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে এবছর বেশি চাষ করেছেন হাওর অঞ্চলে।
খালিয়াজুরী উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, আমি প্রায় ২৫ কাটা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হয়েছে। মেন্দীপুর গ্রামের কৃষক জানু চৌধুরী বলেন, ব্রি-২৮ ধান ছিটা ওহয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে পড়েছে।
মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, প্রতি কাটা জমিতে আগে যেখানে ধান হতো ৭-৮ মণ, সেখানে ধান হয়েছে ২-৩ মণ। চিটা হওয়ার পরও কেন ধান কাটছেন জানতে চাইলে কৃষক দুলাল মিয়া জানান, গরু খাবার সংগ্রহ করতেই ধান কাটছি। খালাসী পাড়ার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, আমি আমার ধান শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছি। শুধু বন যেন আমাকে দিয়ে দেয়।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, ব্রি-২৮ ধান আবাদ না করতে যে রকম প্রচার প্রচারণা করার দরকার ছিল তা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফলে কৃষকরা বার বার একই ভূল করে লোকসানের মুখে পড়েছে।
জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, আমরা ক্ষেতের মাঝে কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেতে চিটা হওয়ায় খোরাকি উঠবে না গোলায়। বার্ষিক শ্রমিকদের মুজুরী ঋণ করে দিতে হবে। আর্থিক সহযোগিতা না পেলে পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হবে সারা বছর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, জেলার হাওরাঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ জাদের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। দ্রুততম সময়ে ধান কাটার জন্য ৭৩০টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন প্রস্তুত রয়েছে। হাওরে ব্রি-২৮ ধানে ছিটা দেখা দিয়েছে।
মৌসুমের শুরুতেই বালাই নাশক প্রয়োগ কৃষকদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ধানের চাষাবাদ না করতেও কৃষকদের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ৮৮ জাতের ধান চাযাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এএজেড