সবুজ শীষে দুলছে হাওরপাড়ের কৃষকের স্বপ্ন
সুনামগঞ্জ জেলার হাওরগুলোতে এখন ঘন সবুজের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ শীষ। আর এই সবুজ ধান গাছের ঢেউয়ে দুলছে হাওরপাড়ের কৃষকের স্বপ্ন। আর কয়েকদিন পরেই সবুজ ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। আর সেই সোনালি ধান কেটে গোলায় তুলতে অপেক্ষায় কিষান-কিষানি।
মাঠ ভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
হাওর অধ্যুষিত সুনামঞ্জ জেলার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই বোরো উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল এবং জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯৫ হেক্টর বেশি। জেলার ১২ উপজেলার ১৪২ হাওরের বোরো ধানের শিষে এখন ফুল বেরিয়েছে। মাঠে বর্তমানে ফসলের অবস্থা ভালো রয়েছে।
জানা যায়, বোরো ধান কাটতে সুনামগঞ্জ জেলায় শ্রমিকের কোনো সংকট হবে না। বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তুকির আওতায় ৬৬৫টি সচল কম্বাইন হারভেস্টার আছে। এ ছাড়া এই মাসের মধ্যে আরও কিছু কম্বাইন হারভেস্টার ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জের ডেকার হাওর, শনি হাওর ও খরচার হাওরসহ বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধানের চাষাবাদে হাওরগুলো সবুজ ধানের শীষে ভরে গেছে। ধান ক্ষেতে সর্বশেষ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। ধান লাভজনক ফসল। তাই কৃষকরা বোরো মৌসুমকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখেন। তবে জেলার কিছু কিছু জমিতে ধানে রোগ দেখা দিয়েছিল। তারপরও সতর্কতার সাথে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষকরা।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৃষক মাজিদ মিয়া ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, আমাদের শাল্লা উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে ধানের গোছায় গোছায় ফুলে ভরে গেছে। হাওরের দিকে থাকে মনটা জুড়িয়ে যায়, আল্লাহ যদি এবার ফসল দিয়ে যায় তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে বাঁচতে পারব।
হাসিভরা মুখে খরচার হাওরপাড়ের কৃষক সুলতাম হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবার আমার বাবা প্রায় ১৫ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছেন। হাওরে বর্তমানে ধানের ফুল থেকে সবুজ ধান বের হওয়া শুরু হয়েছে। হাওরজুড়ে এখন শুধু সবুজ ধান আর ধান। দিন ভালো থাকলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছি। যেভাবে ফসল রক্ষা বাঁধ করেছে যদি বাঁধ না ভাঙে তাহলে সুন্দরভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারব।
বৃহত্তর হাওর ডেকার হাওরের কৃষক নুর মোহাম্মদ মিয়া বলেন, এই বছর ৮ বিঘা জমি চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত মাঠের অবস্থা ভালো আছে। কিছু ধান হলুদ হয়েছিল, এখন ঠিক হয়ে গেছে। দিন ভালো থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আমি আশাবাদী।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ সোম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। সুনামগঞ্জে এপ্রিল মাসে ভারি বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আপাতত নেই। জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ সকল নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। এবার ধান কাটতে শ্রমিকের কোনো সংকট হবে না। কম্বাইন হারভেস্টার মিশন গতবারের চেয়ে বেশি কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অন্য বছরের তুলনায় ফলন বেশি পাওয়া যাবে। কৃষকরা যাতে ভালোভাবে তাদের ফসল তুলতে পারেন সেজন্য সংশ্লিষ্টরা মাঠে কাজ করছেন।
এসআইএইচ