ময়মনসিংহে সরিষায় হলুদ মাঠের পর মাঠ
দ্বিবীজপত্রী সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে ময়মনসিংহে। সরিষার হলুদ মাঠে এখন সবুজ দানা লেগেচে। ময়মনসিংহে ৫ হাজার ৮শ ১২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
অগ্রহায়ণ-মাঘ মাসের সময় থেকে ময়মনসিংহের ফসলি জমিগুলোয় দেখা যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরিষার ক্ষেত। আমন ধান কাটার পর কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে কৃষকের জীবিকার একমাত্র উৎস এই কৃষিজমি। সেই জমিতেই অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ময়মনসিংহের কৃষকরা।
আমন ধান কাটা শেষ হলে ফসলি জমিতে বীজ ছিটিয়ে আর হালকা চাষ দিয়ে করা যায় সরিষার আবাদ। এই শস্য আবাদের পর এ জমিতে অন্য ফসল বেশ ভালো হয়ে থাকে। আমন আর বোরো ধান আবাদের মাঝে যে সময় জমি পতিত থাকে, সে সময় আবাদ হওয়া সরিষার তেমন উৎপাদন খরচ নেই। এছাড়া একই সময়ে ক্ষেতে জৈব সারের অভাবও পূরণ হয়ে যায়, ফলে বাড়তি খরচ থেকে রক্ষা পায় কৃষক। কারণ বোরো আবাদে প্রচুর সারের প্রয়োজন হয়। সরিষার আবাদের ফলে পরবর্তী ফসলে খরচ কমে আসে।
ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্তিক মাসে আমন ধান কাটার সপ্তাহখানেক আগেই পাকা ধানক্ষেতে প্রতি বিঘা জমিতে দুই কেজি সরিষা ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর কয়েক দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে গেলে কৃষক ধান কাটা শুরু করেন। পরে ওই জমিতেই বেড়ে উঠতে থাকে সরিষা গাছ। বাড়তি পরিশ্রম ছাড়াই ৬০ থেকে ৭০ দিনে এ সরিষা কৃষক সংগ্রহ করতে পারেন। ভালো বীজ হলে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ মণ সরিষা হয়ে থাকে। সরিষা সংগ্রহ শেষে ওই জমিতেই কৃষকরা বোরো চাষ করে থাকেন।
ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, তিনি এক একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এবার ফলন ভালো। ফুল থেকে সবুজ দানায় পরিণত হয়েছে সরিষা গাছ।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সরিষা চাষী কাজিমদ্দিন বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই সরিষা চাষ করছি। অন্য ফসল থেকে সরিষা চাষ তুলনামূলক লাভজনক। কার্তিক মাসে আমন ধান কাটার পর আমরা সরিষার বীজ বুনি। বীজ বুনার পর তিনটি চাষ দিতে হয়। মাঘ মাসে আমরা সরিষা চাষ ঘরে তুলতে পারি। আর এই সরিষা চাষের পর সেই জমিতে ইরি ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়।’
স্থানীয় জাত ছাড়াও বিনা ও বারী জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে এবার বলে জানায় কৃষি অফিস।
সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১০ হাজার কৃষকের মাঝে প্রনোদনা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতিজ্জামান। তিনি বলেন, মানুষ এখন সয়াবিন তেল ছেড়ে সরিষা তেলের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে সরিষা তেলের চাহিদাও বেড়েছে।’
একে/এএন