ভোলায় মাঠে মাঠে সূর্যের হাসি
ভোলার রাজাপুরে কৃষক ইউসুফের মাঠজুড়ে বিরাজ করছে সূর্যের হাসি। দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইউসুফ চাষ করেছে হাইসান -৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের।
ভোলার আবহাওয়া এখনো পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় এখানকার সূর্যমুখীচাষিরা এবছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরেজমিনে চাষি ইউসুফের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে তার খেতের প্রায় সব গাছেই ফুল ফুটেছে। আর ফুলে ফুলে ছড়িয়ে আছে সূর্যের মতো হাসি।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর ভিবিন্ন উপজেলায় নিজ উদ্যোগ ও প্রকল্পের আওতায় ৯০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে; যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা কাটাতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সূর্যমখী ফুলের প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিলি লিটার তৈল উৎপাদন হয়। ভালো ফলন হলে প্রতি শতাংশ জমি থেকে প্রায় ৫০ কেজি বীজ পাওয়া যেতে পারে বলে জানান চাষি ইউসুফ। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে তেলের দাম বেশি, অন্যদিকে সূর্যমুখী চাষ করতে খরচ তেমন একটা হয় না। তবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হয়। কৃষি উপসহকারী মঞ্জুর স্যারের পরামর্শে আমি গত বছর ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি তাতে আমার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লাভ হয়েছে। এবছরও ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবছর দ্বিগুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন ইউসুফ।
৩ নম্বর পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের সূর্যমুখীচাষি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, কৃষি অফিস থেকে বীজ প্রণোদনা নিয়ে ৩০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হওয়ার আশা করছি।
আরেক কৃষক মাইনুদ্দিন বলেন, আমার গতবছর সূর্যমুখী ফুলের ফলন ভালো হয়েছে, লাভও হয়েছে তবে ভোলায় তেল উৎপাদনের মেশিন সংকট থাকায় বীজ কম মূল্যে বিক্রয় করে দিতে হয়।
কৃষক তাহের বলেন, সূর্যমূখী বীজ ভাঙানোর মেশিন সচরাচর থাকলে এর চাষির সংখ্যা বাড়বে কারণ সূযমুখীতে লাভ বেশি খরচ কম। যদি মেশিন থাকত তাহলে জেলায় প্রতি বছর সূর্যমুখী চাষ বাড়তো।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, গতবছর জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবছর ৯০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। তবে কৃষক নিজ উদ্যোগে বেশি চাষ করলেও সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমেও সূর্যমুখী চাষে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে। এবছর এখনো পর্যন্ত সূর্যমুখীর বড় ধরনের কোনো রোগবালাইের আশঙ্কা নেই এমনকি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা না থাকলে ফলন ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। সূর্যমুখী চাষে আমাদের মাঠকর্মীরা চাষিদের আগ্রহী করছেন। কারণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ কম, লাভও বেশি। যেহেতু গত বছরের তুলনায় এবছর ভোলায় সূর্যমুখী দ্বিগুণ চাষ হয়েছে আগামীতে জেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ এবছরের চেয়ে দ্বিগুণ হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এসএন