বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেল ব্রি ধান১০৫ ও ব্রি ধান১০৬
উচ্চ ফলনশীল দুটি নতুন জাতের ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। নতুন জাত দুটি হচ্ছে ব্রি ধান১০৫ ও ব্রি ধান১০৬।
এর মধ্যে ব্রি ধান ১০৫ থেকে হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যাবে গড়ে ৭ দশমিক ৬ টন থেকে ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত। অপরদিকে ব্রি ধান ১০৬ থেকে হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যাবে গড়ে ৫ দশমিক ৪৯ টন।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় জাতগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদন পাওয়া দুটি ধানের জাতের মধ্যে হচ্ছে বোরো মওসুমে চাষের উপযোগী কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) ব্রি ধান১০৫ এবং রোপা আউশ মওসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগি ব্রি ধান ১০৬। এই দুটি জাত উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত মোট ধানের জাত সংখ্যা দাঁড়াল ১১৩টি।
নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি ধান১০৫ হল বোরো মওসুমের একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। ব্রি ধান১০৫ এর সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো সবুজ পাতা, খাড়া ডিগ পাতা, মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা যার জিআই এর মান ৫৫.০। সুতরাং, কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রি ধান১০৫ এর ধান পাকার পরও এর গাছ সবুজ থাকে। এ জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সে. মি.। গড় ফলন হেক্টরে ৭.৬ টন তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি সরু ও রঙ সোনালী। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এই জাতের ১০০০ টি দানার ওজন ১৯.৪ গ্রাম। ব্রি ধান১০৫ এর অ্যামাইলোজের পরিমান ২৭.০শতাংশ এবং প্রোটিনের পরমিাণ ৭.৩শতাংশ। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু।
ব্রি ধান১০৬ আউশ মওসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত । এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এ জাতের গাছের গোড়ায় ও ধানের দানার মাথায় বেগুনি রং বিদ্যমান। এর গড় উচ্চতা ১২৫ সে.মি.। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৭৯ টন যা অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৭ এর চেয়ে শতকরা ১৭.৪ ভাগ বেশি। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০৬ এর ফলন হেক্টর প্রতি ৫.৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। নতুন জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হলো এটি ঢলে পড়া প্রতিরোধী, ফলে গাছ হেলে পড়ে না। ধানের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১১৭ দিন । ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।
এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০২০-২১ মওসুমে দেশের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২১-২২ সালে কৌলিক সারিটি উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ এর গবেষণায় ঢলে পড়া প্রতিরোধী বলে বিবেচিত হওয়ায় ২০২২-২৩ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ৬ টি অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় কৌলিক সারিটি আউশ মওসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগি উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/