ভারতীয় পেঁয়াজের নকল বীজে কৃষকের মাথায় হাত
ভারতীয় পেঁয়াজের নকল বীজ রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৭ গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক কৃষক। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ কিনে তা রোপণ করেন। রোপণের পর জমিতে কিছু অংশে চারা গজালেও অধিকাংশ অংশে গজাইনি। এ ছাড়া সেচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেঁয়াজের ছোট চারাগুলো মরে গেছে। এতে হাত পড়েছে কৃষকের মাথায়।
জানা গেছে, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে নকল বীজ রোপণে উপজেলার ৭টি গ্রাম- জোকা, হোগলডাঙ্গা, আমলসার, চরমালাইনগর, মদনপুর ,বড় উদাস ও গোয়ালপাড়ায় পেঁয়াজ আবাদে ধস নেমেছে।
এদিকে পেঁয়াজের নকল বীজ বিক্রির দায়ে মহম্মদপুরের শ্যাম নগর গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আনোয়ার মৃধার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্রীপুরের চর জোকা গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শ্রীপুরের এই ৭ গ্রামের পেঁয়াজের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ পেঁয়াজ ক্ষেতে কোনো চারা গজাইনি। মাঠে কিছু অংশে পেঁয়াজের চারা আছে, আবার কিছু অংশে নেই। আবার যে চারাগুলো আছে সেগুলো মরে হলুদ হয়ে গেছে। বিবর্ণ মাঠে বসে হাহাকার করছেন কৃষকরা।
শ্রীপুরের গোয়ালপাড়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি অলিয়ার বিশাস বলেন, গত বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তা দেখে এবারও পেঁয়াজের আবাদ করি। এবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ কিনি। মাঘ মাসে বীজতলা তৈরি করি। আর পৌষের মাঝামাঝিতে পেঁয়াজের চারা মাঠে রোপণ করি। কিন্তু সেচ দেওয়ার পরপরই আমার পেঁয়াজের চারাগুলো বসে যায়। ৫৫ শতকের ক্ষেতে অধিকাংশ জমিতেই কোনো চারা গজাইনি। গত বছর যেখানে আমার ২-৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল এবার ২ লাখের বেশি টাকার ক্ষতি হলো। সর্বশান্ত হয়ে গেছি এ চাষে।
জোকা গ্রামের রহমান বিশ্বাস চাষি বলেন, এবার ১৩০ শতকে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেয়াঁজের বীজটা ছিল ভারতীয়। পেঁয়াজ রোপণের পর সেচ দিতেই পেঁয়াজের কোনো চারা গজাইনি। ফলে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে আছি।
হোগলডাঙ্গা গ্রামের চাষি ওবাইদুর বলেন, আমি বরাবরই পেঁয়াজের চাষ করি। কিন্তু এবার ভারতীয় বীজে পেঁয়াজের চাষ করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমাদের গ্রামের অনেক কৃষকই এবার ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ কিনে তা ক্ষেতে রোপণ করে। চারা রোপণের সঙ্গে সঙ্গেই তা হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে। এবার পেঁয়াজ চাষে আমাদের মাথায় হাত।
শ্রীপুরের চরজোকা গ্রামের একাধিক পেঁয়াজচাষি আজাদ, রফিক, নজরুল, আতিয়ার বলেন, বীজ ব্যবসায়ী আলাউদিনের কাছ থেকে আমরা এবার পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করি। বীজটি পাতো দেওয়ার পর চারা হয়। সেগুলো আমরা মাঠে রোপণ করি। কিন্তু সেচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারাগুলো মরে যায়। এতে আমরা বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের কাছে এর কারণ জানতে চাই। পরে তিনি যার কাছ থেকে বীজ কিনেছিলেন তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে বীজের ব্যবসা করে আসছি। এবার চলতি মৌসুমে মাগুরা মহম্মদপুরের শ্যামনগর থেকে বীজ ব্যবসায়ী আনোয়ার মৃধার কাছ থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় ৫২ কেজি বীজ কিনে তা এলাকার বিভিন্ন কৃষকের কাছে বিক্রি করি। পেঁয়াজের বীজে ধস নামায় এলাকার কৃষকের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে আমি মহম্মপুদপরের ওই বীজ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারি আদালতে একটি মামলা করি। যেটি এখন শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত করছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা বলেন, মাগুরা জেলার মধ্যে শ্রীপুরে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুসে এবার উপজেলায় ৫ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। কিন্তু এবার উপজেলার কিছু গ্রামের পেঁয়াজ রোপণের পরপরই ক্ষতি হয়েছে শুনেছি। এটা বীজের সমস্যা নাকি অন্য সমস্যা আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে উপজেলার চরজোকা গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন আদালতে একটি মামলা করেছেন। আমরা তদন্ত করছি। নকল বীজ ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এসজি