দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলন
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেড়েছে সরিষার আবাদ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। মাঠে মাঠে ভরে উঠেছে সরিষার ক্ষেত। এ অঞ্চলের উৎপাদিত সরিষা দেশের মোট চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণে সক্ষম হবে। বিশেষ করে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় বাম্পার চাষ হয়েছে সরিষার।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে মোট ৭২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৯০ হেক্টর। এ বছর ১৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত মৌসুমে এসব জেলায় মোট সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮৬১ হেক্টর। ওই বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য গত কয়েক বছর চাষ কম হয়েছিল বলেও জানান তারা।
কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারের বিশেষ প্রণোদনার কারণে এ বছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস জানায়, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে যশোর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর। ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১১২ হেক্টর, মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে, কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর; চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে। চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে।
সর্বশেষ গেল ২০২১-২২ মৌসুমে যশোর জেলায় ১১ হাজার ৯২৬ হেক্টর, ঝিনাইদহে ৯ হাজার ১১৯ হেক্টর, মাগুরায় ১৩ হাজার ৩৯ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৯ হাজার ১৪৭ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর এবং মেহেরপুরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল।
যশোরের কৃষক বাবলুর রহমান জানান, চলতি বছর দু’বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। চাষে খরচ হয়েছে মাত্র দেড় হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করা সম্ভব। কয়েক বছর বাজারে সরিষার দাম চড়া।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজর কোটি টাকার সষিার তেল আমদানি করতে হয়। তেলের ঘাটতি পূরণে উৎপাদন যেন স্থানীয়ভাবে করতে পারি সে লক্ষ্যে গত বছরের জুলাই থেকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিকল্পনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রনোদনা কর্মসূচি চালু রয়েছে। যশোর অঞ্চলের ৬ জেলার ১ লাখ ৪০ হাজার কৃষককে বিঘা প্রতি বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। বারি সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে, যা মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন সম্ভব হয়। যা বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ফলন হচ্ছে। সরকারের এ কর্মসূচির কারণে কৃষকরা উৎসাহিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে সরিষা চাষ যশোর অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
এসএন