আঙিনায় মাছ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কুড়িগ্রামের মোমিন
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসতবাড়ির ভেতরে ও বাইরের উঠোনে বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন এক মাদ্রাসা শিক্ষক। ইউটিউবের মাধ্যমে আগ্রহী হয়ে শখের বসে প্রথমে ভেতরের আঙিনায় মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এতে লাভবান হওয়ায় বাইরের আঙিনাসহ দুটি জলাধারে এবার ৭৫ হাজার কৈ-মাছ ও দেশি টেংরা মাছ ছেড়েছেন। আর কিছুদিন পরেই মাছ তুলে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন তিনি।
তার এই ব্যতিক্রমধর্মী কাজ দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে লোকজন ভিড় করছেন। জেলার রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের খালিসা কৈলাশকুটি গ্রামের আব্দুল মোমিন (৪২) একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। পাশ্ববর্তী সরিষাবাড়ী হাট দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পুকুর বা বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। গতবার পুকুরে ৪০ হাজার হাইব্রিড কৈ-মাছ ছেড়ে লোকসানে পড়েন। এরপর ইউটিউবে ছোট্ট পরিসরে বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের কার্যক্রম দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নিজের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাড়ির ভেতর ও বাইরের উঠোন গর্ত করে জলাধার তৈরি করেন তিনি।
জলাধার দুটির গভীরতা ৪ ফুট করে। ভেতর আঙিনার জলাধারের দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট ও ১৮ ফুট। বাইরের আঙিনার জলাধারের দৈর্ঘ্য ৪১ ফিট ও ২৪ ফিট। চলতি বছরের ১৯ আগস্ট দুটি জলাধারে ৫৭ হাজার কৈ-মাছ ও ৩ হাজার দেশীয় টেংরা মাছের পোনা ছেড়েছেন তিনি। এ কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী ও ছেলে। আগামি ১৯ ডিসেম্বর মাছ বিক্রি শুরু করবেন তিনি। জলাধার তৈরি, অক্সিজেন মেশিনসহ উপকরণ ক্রয়, খাবার, ওষুধ ও বিদ্যুৎ খরচসহ তার মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এই মাছ বর্তমান বাজারে তিনি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। এতে সাড়ে ৪ মাসে তার আয় হবে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।
আব্দুল মোমিনের স্ত্রী শাহজাদী বেগম বলেন, গ্রামবাসী ও তার ভাইয়েরা এ কাজে নিরুৎসাহিত করলেও আমি স্বামীর কাজে খুশি ছিলাম। আমার ছেলেসহ আমরা তিনজন মানুষ। আমাদের যা আছে তাই দিয়েই সংসার চলে। স্বামী ব্যতিক্রম কিছু করলে ভালোই লাগে। স্বামী মাদ্রাসায় গেলে আমি বাকি সময় খাবার দেওয়া, অক্সিজেন লাইন ঠিক আছে কিনা তা দেকভাল করি।
রাজারহাট কারিগরি কলেজের শিক্ষক মধুসুদন রায় বলেন, আমি খবর শুনে নিজেই দেখতে এসেছি। মানুষ পুকুরে মাছ চাষ করে, বিলে মাছ চাষ করে শুনেছি। কিন্তু বাড়ির আঙিনায় মাছ চাষ করা এই প্রথম দেখলাম। আমি দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছি। এভাবে অল্প জায়গায় বেকার যুবকরা মাছ চাষে এগিয়ে এলে তারা লাভবান হবে।
উদ্যোক্তা আব্দুল মোমিন বলেন, শখের বসে ইউটিউবে দেখে দেখে ঢাকা থেকে সমস্ত উপকরণ ডেলিভারি নিয়েছি। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে অক্সিজেন মেশিন কিনেছি। প্রায় ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মাছের পোনা সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়াও দুটি জলাধার নির্মাণে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার কাছে কিছু টাকা ছিল। আর বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ করেছি। প্রাথমিক অবস্থায় খরচ বেশি হলেও লাভ দ্বিগুণেরও বেশি হবে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার কালিপদ রায় বলেনন, বায়োফ্লক পদ্ধতি একটি নতুন প্রযুক্তি। এতে ছোট্ট পরিসরে ৩০ ভাগ কম খরচে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ায় যায়। কেউ আগ্রহী হলে জেলা মৎস্য বিভাগ তাদের সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এসএন