নেত্রকোনায় বারোমাসি আম চাষে সফল ওয়াসীম
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি-১১ জাতের আমের চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বৃক্ষপ্রেমিক আনোয়ার জাহিদ মল্লিক ওরফে ওয়াসীম। মৌসুম ছাড়াও আম চাষ করে তাক লাগিয়েছেন তিনি। জেলায় এই আমের চাহিদাও অনেক। প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থান থেকে মোবাইল কিংবা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আম সরবরাহ করছেন।
অনেকেই বাগানে এসে নিজের হাতে আম তুলে নেন। এবার প্রতি কেজি আম ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বলে জানান ওয়াসীম। ওয়াসীমের বারি-১১ আম ছাড়াও বারি-৪ আম, মাল্টা বাগান, লেবু, সজনে ও কুল বাগান রয়েছে।
প্রায় ১২০ শতক জমিতে তার বসতবাড়িটি দেখলে মনে হয় একটি ফলবাড়ি। সারা বছরই কোনো না কোনো ফল তার বাড়ির গাছে থাকে। প্রায় ১৭০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে তার বাড়িতে। এরমধ্যে ৪০ প্রজাতির আম, ৮৫টি কাঁঠাল গাছ, ৮টি জাম, ৬টি কমলা, ৫টি লিচু গাছ রয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারা গাছ ১০টি, ড্রাগন গাছ ৬টি, ৪০টি লটকন গাছসহ পেঁপে, সুপারি, গোলাপ জাম, নারিকেল, আঙুর, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ট্যাংফল, কামরাঙ্গা, অড়বরই, নাশপাতি, কুল, তেঁতুল, ডেওয়াফল, চালতা, সফেদা, লঙ্ঘান/আশফল, বিলম্বু, আনারস, কলা, বেল, থাই জাম্বুরা, করমচা, জামরুল, আমড়া, আনার, ডালিম, বেদানা, চেরিফল, মহুয়া ফল, রামবুটান, কতবেল রয়েছে।
আরও রয়েছে আমলকি, শরিফা, আতাফল, তৃণ ফল, অ্যাভোকাডো, করোসল, বিভিন্ন প্রজাপতির আপেল, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, মালবেরি, বিভিন্ন প্রজাপতি আনার, পার্সিমন ইত্যাদি। ভেষজ জাতীয় রয়েছে হরতকি, বহেড়া, পাথরকুঁচি, ডায়াজেট, অ্যালোভেরা, পান বিলাপ, তুলসী, লজ্জাবতী, উলটকমল, আলোবোখরা, লবঙ্গসহ নানা প্রজাপতির বনজ ও ওষুধি গাছ।
ফলচাষি ওয়াসীম বলেন, রাসায়িক কীটনাশকমুক্ত জৈব সার ব্যবহার করি ফল বাগানে। ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতার চাহিদাও ভালো। ৪০ শতক জমিতে ৩ বছর আগে বারি-১১ আমের চারা রোপণ করি। গত বছরেই ভালো আম ধরেছিল। গাছ ছোট থাকায় সব আম রাখতে পারিনি। গত আমের মৌসুমেও ভালো আম ধরেছিল বন্যায় পানি উঠায় ফলের কিছু ক্ষতি হয়েছিল।
তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে আম বিক্রি শুরু করছেন। বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিনই অর্ডার পাচ্ছেন। এ গাছে আম বছরে ৩ বার ধরে বলে শুনেছি। তবে আমি দেখছি সারা বছরই কমবেশি ফল গাছে ধরছে। আমার বাগানে একই গাছে আম পাকছে, গুটি আম আছে আবার মুকুলও ধরছে। এই বাগান করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান ওয়াসীম।
গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, বারি-১১ জাতের আমের মিষ্টতা ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বারি আম-১১ বছরব্যাপী ফুল ও ফল দেয়। তার মধ্যে বছরের তিনটি সময়ে ফুল ও ফল তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ, মে-জুন ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ফল আহরণ করা যায়। এ জাতের আমগুলোর আকৃতি মাঝারি। এক থোকার মধ্যে গুচ্ছাকারে পাঁচ থেকে ছয়টি পর্যন্ত আম থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। পাকা অবস্থায় হলুদ বর্ণের হয়। আমটি খেতেও সুমিষ্ট।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শাহজাহান কবীর বলেন, তার বাড়িকে একটি বহুমাত্রিক ফলের বাগান বলা যায়। বাড়িতে দেশীয় ও বিদেশি বহু দুর্লভ ফলের গাছ রয়েছে। এর থেকে সারা বছর তার বাড়িতে ফল থাকে। বারোমাসি বারি-১১ আম চাষে সফল তিনি। তার বারি-৪ আম বাগান রয়েছে। এ ছাড়া তিনি মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। তার এসব ফলের বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা, আম ও কুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন শুরু করেছেন। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে কৃষকের কাছে উন্নতমানের পরামর্শ ও বীজ সারের ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।
এসএন