গাইবান্ধায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ
মাটি ছাড়াই গাইবান্ধায় খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে শাক-সবজি ফলাচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা। কলাগাছের উপর কচুরিপানা পচিয়ে বীজতলা তৈরি করে তার উপর বীজ ছিটিয়ে নানা ধরনের শাক-সবজির চাষ করছেন তারা।
তাদের এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে মেলোনাইস সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশের (এমসিসিবি) আওতাধীন স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার ফুড সিকিউরিটি প্রজেক্ট। গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ নদ-নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে সংস্থাটি।
সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঝাড়াবর্ষা বিল রাস্তার পাশে ভাসমান বীজতলায় সবজি চাষ করা হয়েছে। পরপর ভাসমান ৮টি বীজতলা। তাতে চাষ করা হচ্ছে কলমি, লালশাক, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি। শুরুতে ভাসমান বীজতলা পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হলেও সফলতা পাওয়ায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা। তুলনামূলক চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা।
চাষি আতিয়ার রহমান ও তাহমিনা বেগম জানান, তারা ভাসমান বীজতলায় লালশাক, পুঁইশাক ও কলমি ও ডাটা শাক চাষ করেছেন। উৎপাদিত শাক পরিবারসহ খেয়ে প্রত্যেক সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার শাক বিক্রি করেছেন। এরপর তারা শীতকালীন সবজি চাষের পরিকল্পনা করছেন। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এ পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার ফিল্ড অর্গানাইজার মমতা খাতুন জানান, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক ভাসমান বীজতলায় সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা বিল, বিষ পুকুর বিল ও গলাকাটা বিলে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজি চাষ চালু করা হয়েছে। এখান থেকে একটি পরিবার নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
তিনি বলেন, একটি বীজতলায় তিন থেকে চারবার যেকোনো শাক চাষ করা যায়। প্রতিটি বীজতলার দৈর্ঘ্য হতে পারে ২৫-৩০ ফুট (ছোট-বড়) হতে পারে। প্রস্থ চার-পাঁচ ফুট। বীজতলা দুইটি স্তরে তৈরি করা হয়। এরমধ্যে নিচের স্তরে কলাগাছ দিয়ে একটি বীজতলা তৈরি করা হয়। উপরের স্তরের কচুরিপানা দেওয়া হয়। কচুরিপানা পচে গেলে উপরে বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সাঘাটার এসব বিল এলাকার লোকজনকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আগ্রহী চাষিদের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বীজতলা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝাড়াবর্ষা বিলসহ এই এলাকার পৃথক তিনটি স্থানে ২৪টি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হাওরাঞ্চলে বেশি হয়। গাইবান্ধার একটি স্থানীয় সংস্থা ভাসমান বীজতলায় সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটি সাঘাটা উপজেলার তিনটি স্থানে প্রাথমিকভাবে সবজি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে ভাসমান সবজি চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যে উপসহকারী কৃষি অফিসাররা তদারকি করছেন।
এসএন