নব উদ্যোগের আলোয় আলোকিত করলেন ড. মেহেদী হাসান খান
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস সাত দিনের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কী, কী কাজ করেছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান? লিখেছেন রাজিবুল ইসলাম।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-টেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন এবং ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। আর ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক প্রয়োজনে অধ্যাপক ড. মেহেদীকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। দায়িত্বগ্রহণকালে বলেছিলেন ‘স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পেলেও আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব।’
তিনি বায়ো-টেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন। প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ ফ্যাকাল্টি। অন্য ফ্যাকাল্টিগুলোর তুলনায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বেশ কজন সেরা ফলাফলধারী স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাবৃত্তিতে দেশের বাইরে। তার সাহায্য অনেক রয়েছে। শত প্রতিকূলতাও নতুন ফ্যাকাল্টিকে যত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাতে প্রত্যেকটি ছাত্র, ছাত্রী তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান ‘আব্দুস সামাদ আজাদ হল’র প্রভোস্ট ছিলেন। তিনি সততা ও নিষ্ঠায় কাজ করেছেন।
তিনি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো-টেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্বরত। সিন্ডিকেট সদস্য, অর্থ কমিটি, রিসার্চ অ্যাডভাইজরি কমিটি, কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সদস্য।
তার ডিনের দায়িত্ব পালন ও বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে ক্লাস নেয়ার দরুণ সহজেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত ও সমাধানে কাজ করেছেন।
গত এক মাস সাতদিনে তো অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও গেটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নামাজের জায়গা না থাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বায়ো-টেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের পুরোনো দুটি ভবনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করছেন। অনুষদীয় এক নম্বর ভবনের গ্রিল এবং গেটের কাজ সম্পন্নও হয়েছে। যেসব ক্লাসের মাল্টি-মিডিয়ায় পড়ানোর প্রজেক্টর নষ্ট হয়েছে, দ্রুতই পরিবর্তন করেছেন। কর্মচারী পরিষদের অনেক দিনের দাবি, তারা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাবেন, সম্পন্ন করেছেন। ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জমকালো আয়োজন করেছেন। সাজিয়েছেন ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের ইচ্ছানুযায়ী আয়োজন করা হয়েছে কনসার্ট, ইতিহাসের সর্বোচ্চ জনসমাগম হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করে তাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ‘এমওই’ করতে আগ্রহী করেছেন। ফলে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্মিলিত গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করা হয়েছে। সেগুলো যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য তিন ফেইজ লাইনের ব্যবস্থা ছিল না। বাজেট ইতিমধ্যে বরাদ্দ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন। খেলাধুলা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল। উত্তরণের জন্য ইতিমধ্যে ক্রীড়া পরিচালকের সাথে আলোচনা করেছেন। এই মৌসুমেই বিভিন্ন রকম, বিষয়ভিত্তিক খেলাধুলার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিন কাউন্সিলের কোন গাড়ি ছিল না। সমাধানে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নষ্ট গাড়িগুলোও মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন। থেমে যাওয়া নতুন অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজও শুরু করা হয়েছে। পুরাতন অডিটোরিয়ামের সংস্কার শুরু হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে পুরাতন অডিটোরিয়াম এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে নতুন অডিটোরিয়ামের কাজও সম্পন্ন হবে বলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান জানিয়েছেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তৈরির জন্য কাজ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোও তাকে এজন্য নানাভাবে সহযোগিতা করছে।
এই কাজগুলোর মাধ্যমে তিনি একমাসে করে দেখিয়েছেন। তার সুপরিকল্পিত কাজের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক ক্ষেত্রে আরো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্যম।
বায়ো-টেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রভাষক আহমেদ জামিল বলেন, ‘উপাচার্য হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেয়ায় পর স্যার সততা ও নিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তাতে সব কার্যক্রম আরো গতিময় হয়েছে।’ অনুষদের ছাত্র সুপন দত্ত বলেন, ‘স্যার অনেকগুলো দায়িত্ব একসাথে পালন করার চাপের মধ্যেও শিক্ষকতার দায়িত্ব ভুলে যাননি। বিশ্বাস করি, আমাদের সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিশ্বের সামনে আরও উজ্জল করতে সক্ষম হব।’
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খানের মোট ৬১টি গবেষণাপত্র ও ৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে মোট ২১টি গবেষণাপত্র উপস্থপন করেছেন। এ পর্যন্ত ১৫ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ও ১০ জন শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর গবেষণায় সহ-তত্ত্বাবধায়ক।
ওএফএস।