শাক-সবজির ক্ষতি হলেও উপকার হয়েছে আমন চাষিদের
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বরগুনায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষিদের ক্ষতি হলেও সুফল পাচ্ছেন আমন চাষিরা। এমনটাই দাবি করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বরগুনা জেলায় ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে এ বছর ৯৯ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে; যা মোট আবাদের ৯ শতাংশ। এ ছাড়াও মৌসুমি ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে।
আমন চাষিদের দাবি, এবার জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) থেকে টানা দুই দিন ধরে জেলায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা আমন ক্ষেতের জন্য অনেকটাই উপকার হয়েছে।
অপরদিকে মৌসুমি ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষিদের দাবি, দুদিনের বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মৌসুমি ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
একই সুরে প্রাথমিকভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষের ২০০ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে।
বরগুনা সদরের বালিয়াতলী ইউনিয়নের আমন চাষি ফোরকান মিয়া। এবছর তিনি ৩ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন।
ফোরকান মিয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা দুই দিন বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ এই অঞ্চলের আমনের চারা রোপণ নির্দিষ্ট সময়ের একমাস পরে হওয়ার কারণে এখনো ধান আসতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। যেহেতু ফুল আসার আগে বৃষ্টি হয়েছে তাই কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
আমতলীর কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়নি বরং উপকার হচ্ছে। পোকা দমন হয়েছে। এতে ফসলের বাম্পার ফলনের আশা করছি। তবে কিছুটা জলাবদ্ধতায় সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে।
সদর বরগুনার বদরখালী ইউনিয়নের আগাম শীতকালীন সবজি চাষি ফরিদ মিয়া। তিনি বলেন, এবার ৮০ শতাংশ জমিতে লাল শাক রোপণ করেছি। টানা দুই দিন বৃষ্টিপাতের কারণে ছোট লাল শাকের চারাগুলো পচতে শুরু করেছে। এজন্য আমার লোকসানে গুণতে হচ্ছে।
পাথরঘাটার সবজি চাষি কামাল হোসেন বলেন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, ফুলকপিসহ বিভিন্ন আগাম শীতকালীন শাকসবজি চাষ করেছিলাম। কিন্তু টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতের চারাগুলোতে পচন ধরতে শুরু করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, বরগুনায় সিত্রাংয়ে তেমন কোনো আমন ফসলের ক্ষতি হবে না। বরগুনার প্রধান ফসল হচ্ছে আমল। জেলায় প্রায় ৯৯ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অনেক জায়গাতেই কম বৃষ্টিপাতের কারণে পানির অভাব ছিল। কিন্তু সিত্রাংয়ে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে এতে আমন চাষিদের লাভ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমন ধানের জন্য প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। আমাদের এখানে আমন ধানের এখনো ফুল না আসার কারণে পানিতে কোনো ক্ষতি হয়নি ধান গাছের। ধান গাছে ফুল এলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে শাক-সবজির ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতি হবে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য। আমরা পরে তাদের প্রণোদনার আওতায় আনব।
এসএন