ভোলায় আখচাষে সাবলম্বী কৃষক সাদেক রাড়ী
ভোলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নিরিবিলি গ্রাম কন্দ্রকপুর। রবি শস্যের পাশাপাশি পতিত জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে আখের চাষ হচ্ছে এখানে। বর্তমানে চাষিরা ব্যস্ত আখের রস দিয়ে গুড় তৈরিতে। গুড়ের সুবাসে মাতোয়ারা কন্দ্রকপুর গ্রাম।
আখের রস দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে সাদেক রাড়ীর তৈরি ভেজালমুক্ত গুড় কন্দ্রকপুর খুবই জনপ্রিয়। সাদেক রাড়ীর সঙ্গে এ কাজে সহযোগিতা করেন তার পরিবারের সদস্যরাও। এ ছাড়া তার সঙ্গে কাজ করেন কিছু কৃষি শ্রমিকও। ১০/১৫ দিন ধরে তারা আখের রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন।
গ্রামে প্রবেশের মূল রাস্তার থেকে দেড় কিলোমিটার মেঠো পথধরে যেতে হয় সাদেক মিয়ার আখ ক্ষেতে। ক্ষেতে আখ কাটছেন কৃষি শ্রমিকরা। কেউ বোঝা বেঁধে নিচ্ছেন, কেউবা সংগ্রহ করা আখ মেশিনে দিচ্ছেন। সেখান থেকে পাত্রে জমা হওয়া রস এসে বড় চুল্লির উপর রাখা ড্রামে জমা করছেন। দ্বিতীয় জন জমি থেকে সংগৃহিত আখের ছোবড়া ও শুকনো পাতা দিয়ে জমা হওয়া রসগুলো আগুনে জ্বাল দিচ্ছেন। আগুনের চুল্লির উপর ড্রামে রাখা রসগুলো দু-তিন ঘণ্টা আগুনে জাল দেওয়ার পর রসগুলো জমাট বেঁধে গুড়ে পরিণত হয়। অর্ধ তরল অবস্থায় রাখা রস ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে গুড়ে পরিণত হয়ে যায়।
কন্দ্রকপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় আখের গুড় তৈরি করার কারিগর সাদেক রাড়ীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার সঙ্গে তাকে সহযোগিতায় আছেন স্ত্রী, ছেলে তছলিম, তাহের ও পুত্রবধূ।
গুড় তৈরির কারিগর তসলিম জানান, আখের রস সংগ্রহ করা একবারে সহজ তবে একটু পরিশ্রম বটে। তসলিম জানান প্রতি ড্রামে ৩০০ লিটার রস ধরে। এ রস জাল দিলে ৫০ কেজি গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। এটা একটা দেশীয় স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি। রস তৈরি করার জ্বালানি হিসেবে আখের ছোবড়া ও আখের শুকনো পাতা ব্যবহার করি। এখানে অন্য কোনো জ্বালানি খরচ লাগে না। সদ্য তৈরি হওয়া আখের গুড় বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা এসে কিনছেন। নির্ভেজাল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে আধুনিক মেশিনে রস সংগ্রহ করে আমরা গুড় তৈরি করছি বলেই আমাদের গুড়ের চাহিদা বেশি।
পার্শ্ববর্তী বাজার এলাকার দুইজন যুবক শামিম ও রেদোয়ান তারা দুজন ৩ কেজি করে মোট ৬ কেজি গুড় কিনেছেন। তারা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কীভাবে আখের রসে গুড় তৈরি হয় তা দেখেছি। একদম তরতাজা। স্বাদে ও মানে অনন্য। তাই আমরা দুজন তিন কেজি করে ৬ কেজি গুড় কিনেছি। বাড়িতে নিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোনদের নিয়ে আখের গুড় দিয়ে পিঠা খাওয়া যাবে।
সাদেকের ছেলে তাহের বলেন, দৈনিক পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার গুড় বিক্রি করতে পারি। এতে বেশ ভালো মুনাফা হয়।
সাদেক রাড়ি বলেন, আমি এবছরও ২ একর জমিতে ঈশ্বরদী ৩৭ আখ চাষ করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আখ চাষে সব সহায়তা পেয়েছি। আখের গুড় তৈরির জন্য আখের রসদ সংগ্রহ করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেশিনসহ সব সরঞ্জাম দেয়। আমি আখ চাষ করে সফল হয়েছি। আগামী বছর আমি আরও বেশি পরিমাণ আখের চাষ করব।
রাজাপুর ইউনিয়ন এলাকার কৃষি উপসহকারী মো. মঞ্জুর আলম বলেন, এলাকায় এবছর ১০ একর জমিতে আখের চাষ হয়েছে তবে সব চাষি গুড় তৈরি করেন না। আখ চাষে আমরা কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছি। সাদেক রাড়ী আমাদের একজন সফল আখ চাষি। আগামীতে কেউ আখ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও উন্নত জাতের আখের চারাসহ সব সহায়তা দেওয়া হবে।
এসএন