খড়ের বিনিময়ে জমির ধান কাটা-মাড়াই
প্রতি বছরই ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরির ভারে বিপাকে পড়েন কৃষক। তবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ধান কাটার নিয়ে শ্রমিক ও মজুরি সমস্যার সমাধান করেছে ফেলেছে উভয়পক্ষ। সেখানে জমির খড়ের বিনিময়ে ধান কাটাই-মাড়াই করে গৃহস্থের গোলায় ধান পৌঁছে দেওয়ার রীতি শুরু হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার জন্য কৃষিশ্রমিকদের দিনমজুরি দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। ২০ থেকে ২৫ জন কৃষিশ্রমিক দিনে এক একর জমির ধান কাটাই-মাড়াই করে কৃষকের গোলায় ধান তুলে দিতে পারেন। এতে কৃষকের ব্যয় হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও জমির কাঁচা খড় শুকিয়ে বাজারজাত করতে পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচ লাগে। অন্যদিকে খড় ব্যবসায়ীরা নিজের লোকবল দিয়ে ধান কাটাই-মাড়াইসহ ধান কৃষকের গোলায় তুলে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন জমির পুরো খড়।
উপজেলার এলুয়ারি, আলাদিপুর ও শিবনগর ইউনিয়নের আদর্শ কলেজপাড়া, গোপালপুর, দাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার উঁচু জমিতে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এ ধানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই গাছ কাঁচা থাকতেই ধান পাকতে শুরু করে। ফলে এসব খড় গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বুধবার সকালে সরেজমিনে, উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর মালিপাড়া গ্রামে একদল কৃষিশ্রমিককে আগাম জাতের ধান কাটতে দেখা যায়। কৃষিশ্রমিকরা জানান, ১২ হাজার একর চুক্তিতে ধান কাটাই-মাড়াইসহ গৃহস্থের বাড়িতে ধান পৌঁছে দিতে হবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাগলপুর এলাবার খড় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, জমির মালিকের কাছ থেকে এক একর জমির ধান কাটাই-মাড়াইসহ বাড়িতে ধান পৌঁছে দেওয়ারসহ অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে ধান কাটছেন। বিনিময়ে তিনি জমির খড় পাবেন।
দাদপুর মালিপাড়া গ্রামের কৃষক বাবু মিয়া বলেন, জমির খড় দেওয়ার বিনিময়ে এক একর জমির ধান কাটাই-মাড়াইয়ের চুক্তি দিয়েছেন খড় ব্যবসায়ীদের। এতে হাতে নগদ ৫ হাজার টাকাও পেয়েছেন খড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
কৃষক নূর আমিন বলেন, অন্য বছরগুলোতে এ সময় এক বোঝা (আঁটি) খড় প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একই খড় বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি একর জমির ধানে প্রকারভেদে ২৭৫ থেকে ৩০০ বোঝা (আঁটি) খড় হয়। বর্তমানে খড়ের দাম কম হওয়ায় খড় ব্যবসায়ীদের খড়ের বিনিময়ে জমির ধান কাটাই-মাড়াইসহ বস্তাজাত করার চুক্তিতে দেওয়া লাভজনক। এতে নগদ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় খড় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ৫/৬ বছর ধরে খড়ের ব্যবসা করছেন পৌরশহরে। খড়ের বিনিময়ে কৃষকের ধান কাটাই-মাড়াইসহ বস্তাজাত করার চুক্তিতে ধান কেটে দিচ্ছেন। খড়ের বাজার দর অনুযায়ী প্রতি একরে নগদ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকাও দিতে হয়। খড় বাজারে গো খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে যাবতীয় খরচ মিটিয়ে অন্তত ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ হয়। প্রথম দিকে কৃষকরা খড়ের বিনিময়ে ধান কাটাই-মাড়াইয়ে আগ্রহী না হলেও বর্তমানে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।
এসএন