হিলিতে মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক
দিনাজপুরের হিলিতে ভালো ফলন ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় মাল্টা চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। একজনের দেখাদেখি অপরজন এই মাল্টা চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এদিকে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে মাল্টা চাষাবাদে কৃষকদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
হিলির খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের খট্টা গ্রামের কৃষক এএনএম জাকারিয়া তার বাড়ির পার্শ্বে ২০ শতক জমিতে ৬০টি মাল্টার গাছ দিয়ে গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। সেই মাল্টা বাগান লাভজনক হওয়ায় এবার পরিসর বাড়িয়ে আরও প্রায় ২বিঘা জমিতে মাল্টাসহ কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন।
বাগানে কর্মরত শ্রমিক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, জাকারিয়া ভাই মাল্টা বাগান করেছেন সেখানে আমার মতো আরও তিনজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে মাল্টা বাগান দেখাশোনা করাসহ গাছের পরিচর্যা ও মাল্টা উঠানোর কাজ করি। এতে করে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি পাই। তাই দিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালানোসহ দিনপথ ভালোই যাচ্ছে।
বাগান দেখতে আসা কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, জায়গাটি পতিত ছিল। কোনো ফসলের আবাদ হচ্ছিল না। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে গাছ নিয়ে এখানে মাল্টার বাগান করেছেন। তাতে করে ভালোই ফলাফল দেখতে পারছি আমরা। আগে তার যে অবস্থা ছিল মাল্টার বাগান করার ফলে তার চেয়ে এখন অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত হয়েছে। আমাদের বেশ জায়গা পতিত রয়েছে তা কোনো কাজেই আসে না। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার মতো মাল্টা বাগান করব। তাতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারব সংসারের আয় উন্নতি আসবে। এজন্য জাকারিয়া ভাইয়ের কাছ থেকে মাল্টা চাষাবাদের পরামর্শ নিচ্ছি পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকেও পরামর্শ নিচ্ছি।
কৃষক এএনএম জাকারিয়া বলেন, গত ২০১৬ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বারি-১ জাতের ৬০টি মাল্টা গাছের চারা পাই। আমার বাড়ির পাশে পতিত ২০ শতক জমিতে সেই চারাগুলো লাগায়। ৬০টি গাছের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ হয় ৩৬টি, গাছ লাগানোর দুবছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। এসময় সেই ফলগুলো এলাকাবাসীর মাঝে বিলিয়ে দিই। এরপরে ২০১৯ সাল থেকে বিক্রি শুরু করি। এ সময় ৩০ হাজার টাকার উপরে মাল্টা বিক্রি করি। এরপরের বছর গাছে আরও বেশি মাল্টা ধরলে সেসময় ৫৪ হাজার টাকার উপরে মাল্টা বিক্রি করি। এরপরের বছর সেটি আরও বেড়ে ৭৪ হাজার টাকার উপরে মাল্টা বিক্রি করি।
তিনি বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছে বেশ মাল্টা ধরেছে, আকারও বেশ বড়। তবে এখনো গাছ থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু করিনি। এ বছর আশা করছি ১ লাখ টাকার উপরে মাল্টা বিক্রি করতে পারব। বাগান করা থেকে শুরু করে এপর্যন্ত আমার ব্যয় হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। এতে করে এই মাল্টা বাগান করে আমি ভালো লাভবান হয়েছি। আমি এটিকে আরও বড় করতে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে অন্য একটি বাগান করেছি। যেখানে ৪৮৫টি গাছ রয়েছে এর মধ্যে দার্জিলিং কমলার গাছ রয়েছে ১৫০টি। এ ছাড়া ৬০টি গাছ রয়েছে ভিয়েতনামের বারোমাসি মাল্টা গাছ, বাকিটা বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে।
জাকারিয়া বলেন, ইতোমধ্যেই এসব মাল্টাগাছে ফল আসতে শুরু করেছে। তবে আমি এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফল উত্তোলন শুরু করিনি। আগামী বছর থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু করব আর ২০২৪ সাল থেকে কমলা গাছে আসতে পারে। আর এসব মাল্টা বিক্রি নিয়ে কোনো টেনশন নেই, পাইকাররা বাগানে এসে মাল্টা দেখে কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।
তবে সময়ের আগেই মাল্টা উত্তোলন না করতে মাল্টা চাষিদের পরামর্শ দেন তিনি। সময়ের আগে মাল্টা উত্তোলন করলে বাজারে সেসময় মাল্টা পরিপক্ক হবে না। আর এতে স্বাদ ভালো হবে না। ফলে বাজারে দাম কম থাকে তাতে করে কৃষকরা লোকশানের মুখে পড়ে। অক্টোবর মাস থেকে মাল্টা উত্তোলন শুরু করলে মাল্টা যেমন পরিপক্ক হবে, স্বাদ ভালো হবে এবং দাম ভালো পাবেন। এতে করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, আমাদের এই উপজেলায় মাল্টা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। প্রথমে প্রকল্পের আওতায় জাকারিয়া নামের এক কৃষককে ৬০টি মাল্টা গাছ দিয়েছিলাম। সেই বাগানে বিগত কয়েকবছর ধরে ফল ধরতে শুরু করেছে। মাল্টার আকার বেশ বড়, সুস্বাদু ও ফলন বেশ ভালো হওয়ায় উনি মাল্টাচাষাবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে উনি আরও বৃহৎ আকারে ৪৮৫টি গাছ দিয়ে পৃথক একটি মাল্টার বাগান করেছেন। এ ছাড়া ৩ হেক্টর জমি জুড়ে আরও ৩টি বাগান রয়েছে। তাদের দেখাদেখি আরও অনেক কৃষক মাল্টা চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে আসছেন। আমরা চাচ্ছি এই ফসল এই উপজেলায় সম্প্রসারিত হোক। বিদেশ থেকে যে মাল্টা আমদানি করা হয় সেটি কমিয়ে দেশীয়ভাবে উৎপাদন করে সেই চাহিদা মেটাতে চাই। সেলক্ষ্যে কৃষকদের প্রকল্পের আওতায় চারা বিতরণসহ সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এসএন