উঠানে সবজি চাষ, স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে দরিদ্র পরিবার
দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভাগ। ফলে জেলার ১২টি উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে পারিবারিক বিষমুক্ত সবজি পুষ্টি বাগান।
বসতবাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষকরা বাড়ির উঠানে সবজি চাষ করছেন। বিনামূল্যে সবজি বীজ পেয়ে কৃষকরা বাড়ির উঠানে চাষকৃত সবজি যেমন পরিবারের চাহিদা পূরণ করছে, তেমনি সবজি বিক্রি করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে দরিদ্র পরিবারের লোকজন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী পর্যায়ক্রমে স্থাপন করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১২০টি ইউনিয়নে সাড়ে ১১ হাজার পুষ্টি বাগান স্থাপন করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার সবজি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, ফলের চারা, নেট, বীজ সংরক্ষণের পাত্র, বাগানে পানি দেওয়ার ঝাঝরিসহ অন্যান্য সব উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাটা, ধনিয়া ও ঘিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলা অলোয়া ইউনিয়নের ভারই গ্রামের ফরহাদুল ইসলাম বলেন, উপ-সহকারীর পরামর্শে বাড়ির উঠানে ফাঁকা জায়গায় সবজি বাগান তৈরি করেছি। পুষ্টি বাগান থেকে আমার নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে আশেপাশের মানুষকে শাক-সবজি দিচ্ছি। এ ছাড়া বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকাও আয় করছি।
সবজি চাষি লাবণী আক্তার বলেন, বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করি। আমার সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার বাড়ির আশপাশের লোকজনও বাড়ি এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়। এতে করে অনেকটা স্বচ্ছলও হয়েছি।
দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব মাহমুদ বলেন, অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষকদের বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজির বীজ ও ফলের গাছ বিতরণ করেছি। উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে ৮০০টি বাগান স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ২১৯টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। পযার্য়ক্রমে বাকি বাগানগুলো স্থাপন করা হবে। আমাদের মাঠ পযার্য়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বাগান স্থাপন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিষমুক্ত সবজি চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি। কার্যক্রম অব্যাহত।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাসার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা শুরু করেছি এবং মডেলের বাগান স্থাপন করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সবজি চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এতে কৃষকের নিজের যে পুষ্টি দরকার তারা তাদের বাগানে উৎপাদন করে সেই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। একই সঙ্গে শাক-সবজি উৎপাদন করছে সেটা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে সব সময় আছি।
এসজি