শেকৃবিতে দুই আঞ্চলিক গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৪
লেখা ও ছবি : শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
রাজধানীর শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা হলে ঢাকা ও কুমিল্লার ছাত্রদের আঞ্চলিক গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগত ছাত্রদের দলে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতা ও সম্প্রতি কয়েকটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার ২০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে এ মারামারির সূত্রপাত ঘটে।
তাতে ঢাকার ৩ জন ও কুমিল্লার ১ জন আহত হয়েছে।
আহতদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন ঢাকা অঞ্চলের মোহাম্মদ রাকিব, ওয়ালিদ সাইফুদ্দিন, ইফতি।
কুমিল্লার রউফ-ই-ওসমানী।
তারা সবাই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ ৮০তম ব্যাচের ছাত্র।
কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার দিন ১০ সেপ্টেম্বর তাদের ভর্তি পরীক্ষার বিষয় নিয়ে কুমিল্লা গ্রুপের অনুসারী একজন ফেসবুকে পোস্টে দিলে ঢাকার এক অনুসারী হা, হা রিঅ্যাক্ট দিয়েছে। এরপর কুমিল্লার ছেলেদের সবাই ঢাকার সব পোস্টে ‘হা, হা, পোস্ট দিতে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডাও হয়েছে।
এই রেশ ধরে রাতে কুমিল্লার অনুসারীরা ঢাকা এলাকার অংশে গেলে বাকবিতণ্ডা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।
সংঘর্ষে আহত ঢাকার ইফতি বলেছেন, 'গতকাল রাতে কুমিল্লা এলাকার আমাদের ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ জন এসে আমাদের সঙ্গে বিবাদ শুরু করেছে। এসময় হলের রুমে আমরা চার থেকে পাঁচ জন ছিলাম। একত্রে বসার জন্য আরও বড় ভাইদের ডাকতে ফোন বের করছিলাম। এর মাঝেই তারা আমাদের মারা শুরু করেছে।’
ঢাকা অঞ্চলের অপর শিক্ষার্থী নিয়ামুল বলেছেন, ‘এ রীতিমতো সন্ত্রাসী আক্রমণ। আরেকটি বিষয়, এখানে জুনিয়রদের উপর সিনিয়ররাও আক্রমণ করেছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। ঘুমন্ত অবস্থায় অতর্কিত হামলা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের বহিষ্কারের মতো শাস্তি না হলে আমরা অনশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার সর্বকনিষ্ঠ ব্যাচের উপর আক্রমণে কুমিল্লা অঞ্চলের এক ব্যাচ সিনিয়রদের মাঝে অগ্রভাগে ছিল রায়হানুল্লাহ রাহী, অজয় পাল, আব্দুল্লাহ-আল-নোমান, একই ব্যাচের সাজিদুল ইসলাম মজুমদার, হাসান জিসান, আফিকুল ইসলাম রাকিব, রাফিউস সানী ও সজীব ভূঁইয়া।
মারামারিতে তারা ব্যাট, স্ট্যাম্প ও কাঠের তক্তা ব্যবহার করেছেন।
এই আক্রমণের বিষয়ে এই প্রতিবেদককে কুমিল্লা এলাকার মাইনুদ্দিন বলেন, ‘নতুন ব্যাচের জুনিয়রদের ভর্তি বিষয়ক পোষ্ট দিয়েছিল আমাদের এলাকার সাজিদ ও এনামুল । ঢাকার মুশফিক, এনামুল, হাসানাত তাদের সবার পোষ্টে রিঅ্যাক্ট দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ তর্কাতর্কি হয়েছে। এরপর ঢাকার প্রায় ২০ জন এসে আমাদের হুমকি দিয়েছে। গতরাতে বিষয়টি মিমাংসা করতে আমরা একসাথে বসতে যাই। ওদের মাত্র ৩ কী ৪ জন ছিল। ওদের বাকিদের ডাকতে বললে ওরা বলে উঠে তোদের সাথে আমরা এই কয়েকজনই যথেষ্ট। এই নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় ও এক পর্যায়ে ঢাকার ইফতি কাঠ দিয়ে আমাদের রউফ-ই-ওসমানীর চোখের নিচের দিকে ফাটিয়ে দিয়েছে। তার তিনটি সেলাই লেগেছে।'
ঘটনার সময় গণরুমে অবস্থানরত ময়মনসিংহ অঞ্চলের অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন ‘আমাদের রুমে ঢাকার ৮০তম ব্যাচের অল্প কয়েকজন ছিল। কুমিল্লার ৮০তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন আসলে তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই কুমিল্লার ৭৯তম ব্যাচ কক্ষে ঢুকলো ও দুই ব্যাচ মিলে ঢাকার ৮০তম ব্যাচকে মারতে থাকল।'
এ নিয়ে দুই গ্রুপের ছাত্ররাই শেরে বাংলানগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই বিষয়ে শেরে বাংলানগর থানার এসআই সাব্বির আলম বলেছেন, 'মধ্যরাতে গণরুমে মারামারির ঘটনায় দুইপক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ঘটনা, প্রক্টর ঘটনাটি জানেন। তিনিই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।'
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ বলেছেন, ‘নবাব সিরাজ-উদ -দৌলা হলে রাতে ছাত্রদের দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত আছি। হলের সহকারী প্রভোস্ট ও সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে একটু পর উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। আমরা আজ রাতে বসব। যদি তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রয়োজন হয় করব ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিব। তবে দুই পক্ষের কেউই লিখিত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে দেয়নি।’
ওএফএস।