ধান বীজ উৎপাদন করেই সফল উদ্যোক্তা বোরহান
২৩ বছর আগে ৫ হাজার টাকা বেতনে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন খুলনার ডুমুরিয়ার উলা গ্রামের বোরহান আলী। তিনি কাজ করতেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রড) ধান প্রজনন বিভাগে। কিন্তু কাজে যোগ দিয়ে বছর কয়েক পার হতেই ভেতরে ভেতরে পরিবর্তনের ডাক পেলেন। বুঝলেন এভাবে হবে না! এগোতে হলে ধান থেকে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা শিখতে হবে। ধীরে ধীরে গবেষক দলের সঙ্গে সরাসরি মাঠে গিয়ে ধানের বীজ উৎপাদনের কলাকৌশল শিখে নেন। পোক্ত হয়ে একসময় চাকরি ছেড়ে নিজেই বীজ উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন।
২০০১ সালে চাকরি ছেড়ে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে সেখান থেকে বীজ উৎপাদন করেন। প্রথমবারেই ভালো সাড়া পান বোরহান আলীর উৎপাদিত ধানের বীজ। তাতেই উৎপাদনকারী হিসেবে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনেই কাজ করছেন সাতজন শ্রমিক। বছরে আয় প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সফল উদ্যোক্তা হবেন, এমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মজীবন শুরু করেননি বোরহান। অনেকের মতো তারও শুরুটা জীবিকার তাগিদেই।
বোরহান আলী জানান, বীজ উৎপাদনের পর তা আমার নিজের বাড়িতে রেখে বেচতে শুরু করি। কৃষকও তার বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন পেতে শুরু করেন। এরমধ্যে ২০০৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ডের বীজ উইং থেকে উৎপাদনের নিবন্ধন নেন। সেবার ২৫ বিঘা জমিতে বীজ উৎপাদনের জন্য ধানরোপণ করা হয়। তাতেও আসে সফলতা। এরপর নিজের জমি ২৫ বিঘাসহ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বীজ উৎপাদন করতে থাকে। বর্তমানের ওই গ্রামে প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে ব্রিডার জাতের ধান রোপণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের বীজ প্রক্রিয়া ও সংরক্ষণ করে রাখছেন।
উদ্যোক্তা বোরহান আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ব্রিডার জাতের ধান কিনে বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে দুই কেজি ধান রোপণ করলে তা থেকে উৎপাদন হয় বিঘাপ্রতি ২২ মণ। বীজতলা তৈরি থেকে ধান মাড়াই পর্যন্ত বিঘাতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকার মতো। এ ছাড়াও বীজ উৎপাদনের জন্য এলাকার চাষিদের কাছে থেকে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা দরে ধান কেনা হয়। নিয়মিত শ্রমিকের পাশাপাশি আমন ও বোরো মৌসুমে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মৌসুমভিত্তিক শ্রমিকও এ কাজের জন্য রাখা হয়।
বর্তমানে ফলোবতী সিড লিমিটেড নামে প্যাকেটজাত বীজ বিক্রি করেন বোরহান। পাশাপাশি নিজেই গড়ে তুলেছেন বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। তাই এখন আর তার উৎপাদিত বীজ অন্য কোনো প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে নিতে হচ্ছে না। এ বীজ সংরক্ষণ ও সরবারহের জন্য ১০ কেজি করে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেট প্রস্তুতকরণে খরচ হয় ১২০ টাকা। তারপর সেগুলো পরিবহন করে নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। প্যাকেটপ্রতি ৬৫০ টাকা ভিত্তি, ৫২০ টাকা প্রত্যয়িত ও ৪৭০ টাকা মানঘোষিত বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রতি বছর আমন মৌসুমে ২৫ টন ও বোরো মৌসুমে ১৫ টন বীজ সংরক্ষণ ও বিক্রি করা হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্তি উপপরিচালক (শস্য) মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বোরহান আলী চাকরিজীবী থেকে একজন সফল ব্যবসায়ী। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের তেমন কোনো নজির ছিল না। এরমধ্যে বোরহান বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছেন। একজন চাকরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার এ নজির সত্যিই অনন্য।
এসএন