নওগাঁয় আউশ ধানে কৃষকের মুখে হাসি ফিরছে
নওগাঁয় কৃষকের মুখে হাসি ফিরিয়েছে আউশ ধান। গত মৌসুমে জেলায় ৫১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল, এবার তা বেড়ে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আউশের আবাদ হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রীর নির্দেশনায় আউশের হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। বন্যা না থাকায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলনও ভালো হয়েছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্য মতে, বুধবার (৩১ আগস্ট) বাজারে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে আউশ ধান বিক্রি হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৫১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল, এবার তা বেড়ে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর হয়েছে। চাষিরা জিরা, কাটারি, বিআর-২৬ ও ২১, ব্রি-২৮, ৫৬, ৬৫, ৮২, ৮৫, বিনা-১৯, পারিজা ও হাইব্রিড হীরা জাতের ধান চাষ করেছেন। এ বছর ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অনাবৃষ্টির কারণে আউশ ধানের খেতে সেচ দিতে হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারছেন চাষিরা। সারা বছর সপ্তাহের প্রতিদিন ধান বেচাকেনা হয়ে থাকে নিয়ামতপুর উপজেলার চৌবাড়িয়া বাজারে।
বুধবার ওই বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ জিরা জাতের আউশ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। এ ছাড়া ব্রি-২৮, ৫৬, পারিজা ও হীরা ধান প্রতি মণ ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মান্দা দেলুয়াবাড়ি বাজারের ধানের আড়তদার আলম বলেন, গত বছর আউশ ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আউশ ধানের দানা পরিপুষ্ট হয়েছে। মিল মালিকদের মধ্যে আউশ ধান কেনার বেশ চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
সদর, মান্দা,পত্নীতলা ও মহাদেবপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খেতের ধান পেকে গেছে। কাটা, আঁটি বাঁধা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। ভ্যান, ট্রলিসহ বিভিন্ন বাহনে করে কৃষকেরা খেত থেকে ধান তুলে মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
বুধবার সকালে ১০ জন শ্রমিক নিয়োগ করে খেতের ধান কেটে নিচ্ছিলেন পত্নিতলা উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের চাষি নেছার উদ্দিন। নেছার উদ্দিন বলেন, এবার বোরো মৌসুমে যে সময় মাঠের ধান পাকতে শুরু করেছিল, সে সময় ঘন ঘন বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ঝড়ে ধানগাছ পড়ে যাওয়ায় ও পানিতে ডুবে খেতেই প্রায় ৩০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ধানগাছ পড়ে যাওয়ায় ধান কাটতেও বেশি খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় এবার আউশ ধান লাভজনক হয়েছে। অনাবৃষ্টি ছাড়া বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সেচের কারণে বাড়তি খরচ হলেও বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল গ্রামের কৃষক মহেন্দ্র উঁড়াও বলেন, ‘এবার দেড় বিঘা জমিতে জিরা ধান লাগিয়েছিলাম। এর মধ্যে এক বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য সরকারি বীজ ও সার পেয়েছি। দেড় বিঘা জমির মধ্যে ১৬ শতক জমির ধান মাড়াই করে ১০ মণ ধান হয়েছে। এর মধ্যে ১২০০ টাকা মণ দরে ৪ মণ ধান বাজারে বিক্রি করেছি। গত বছর আউশ ধানের দাম ছিল ৭০০-৮০০ টাকা মণ। সেই তুলনায় এবার ধানের দাম ভালো।’
সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষে সাধারণত আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ১০ হাজার টাকা করে খরচ পড়েছে। এবার প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে ১৭–১৮ মণ করে। সে হিসাবে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ৬০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের বাজারদর ১২০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এবার কৃষি বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ ধান, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক সময়ে আউশ ধান রোপণ ও বপনের কাজ করায় ভালো ফলন হয়েছে। ১০-১২ শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির ধান পুরোপুরি কৃষকের ঘরে উঠে আসবে।
এসএন