ঊর্ধ্বমুখী রাসায়নিক সারের বাজারে কেঁচো সারের সম্ভাবনা
সাতক্ষীরায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের প্রবণতা যেমন কমছে, তেমনি সাশ্রয় হচ্ছে ফসলের উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, জেলাজুড়ে জৈব সারের ব্যবহার ও উৎপাদন ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।
বর্তমানে কেঁচো সার উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন সাতক্ষীরার কয়েক হাজার চাষি। এর ভেতরে সাতক্ষীরায় তালা উপজেলায় কেঁচো সার চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এক হাজার ২০০ জন চাষি। আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক সার ব্যবহারে সুফল পাচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরাও। প্রাথমিকভাবে এসব কৃষকদের মনে কেঁচো সার ব্যবহারে বিরুপ ধারণা থাকলেও তা কেটে গেছে নিমেষে। এখন তারা নিজেরাই স্বচ্ছল হয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, তালা উপজেলায় ছোট-বড় এক হাজার ২০০ জন কেঁচো সার চাষি রয়েছেন। এর ভেতরে নতুন করে গত বছর উপজেলার ৪০ জন চাষি কেঁচো সংগ্রহ করে জৈব পদ্ধতিতে সার উৎপাদন শুরু করেন। তাদের বিনামূল্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আর উৎপাদিত সেই সার জমিতে ব্যবহার করে আশানুরূপ ফলন পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে নিজেরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলে জানান চাষিরা।
তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, বছর দশেক আগে সল্প পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন সার উৎপাদন হয়। এই সার ব্যবহার করে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, অপরদিকে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে আমার সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী আব্দুল আজিজ বিশ্বাস জানান, অভাব অনটনের সংসারে ২০১৮ সালে একটি এনজিওর সহযোগিতায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সল্প পরিসরে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাদের খামার বড় হতে থাকে। বর্তমানে খামারে ৩৭টি ছোট-বড় হাউজ ও ৪০টি (সিমেন্টের তৈরি পাত্র) চাড়িতে কেঁচো চাষ করা হয়। প্রতি মাসে তাদের খামার থেকে ২২ টন কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকা।
কেঁচো চাষের প্রক্রিয়া সমন্ধে তিনি জানান, ৫০ কেজির এক বস্তা গোবর কিনে বাড়িতে নিয়ে আসা পর্যন্ত খরচ হয় ২৫ টাকা। এরপর গোবরগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণের পর দেওয়া হয় হাউজে। হাউজে গোবর দেওয়ার পরে সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয় কেঁচো। ৩৫ দিন রাখার পর কেঁচো গোবর খেয়ে যে পায়খানা করে সেটিই মূলত কেঁচো সার। এরপর চালুনের মাধ্যমে চেলে কেঁচো ও সার আলাদা করা হয়। সারগুলো ৫-৬ দিন শুকানো হয় ছায়াযুক্ত স্থানে। তারপর বস্তাবন্দি করে বিক্রি করা হয়।
জালালপুর ইউনিয়নের রিপন মুন্সি বলেন, কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবহার করে এক দিকে যেমন ফসলি জমির উর্বরতা বাড়ছে অন্য দিকে ফসলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। অনেক নারী বাড়িতে অবসর সময় না কাটিয়ে এই সার উৎপাদন করছে। ফলে এ সার তৈরি করে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক নুরুল হুদা জানান, ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সার এক নতুন সম্ভাবনার নাম। গোবর থেকে কেঁচোর মাধ্যমে উৎপাদিত এই সার কৃষি জমির উবর্রতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে কৃষকদের মাঝে এই সারের চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে। পানের বরজ, সবজি ও ফলের ক্ষেতসহ মাছের ঘেরে সাধারণত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা হয়।
এই সার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সার ব্যবহার করা লাগে না জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোন উদ্যোক্তা ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করতে আগ্রহী হন তাহলে কৃষি অফিস সার্বিকভাবে তার পাশে থাকবে।
এসএন