কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য এআইপি পাচ্ছেন ১৩ ব্যক্তি
কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’ সম্মাননা।
কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সেজন্য, কৃষিকাজে উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং বন উপখাতের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, বাণিজ্যিক কৃষিখামার স্থাপনকারী, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের প্রতি বছর কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এই সম্মাননা চালু করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এআইপিরা সুযোগ সুবিধা পাবেন সিআইপিদের (সিআইপি) মতো। প্রথমবারের মতো এপিআই সম্মাননা প্রদান করা হবে পাঁচটি বিভাগে। এআইপি এর সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ৪৫টি।
এরমধ্যে ‘ক’ বিভাগ কৃষি উদ্ভাবন (জাত/প্রযুক্তি) ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জনকে এই সম্মাননা দেওয়া হবে। এর মধ্যে পাঁচ জন হচ্ছেন ফসল উপখাত থেকে, মৎস্য উপখাত থেকে দুই জন, প্রাণিসম্পদ উপখাত থেকে দুই জন এবং বন উপখাত থেকে একজন।
‘খ’ বিভাগে কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সম্মাননা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১৫ জন। একটি প্রশাসনিক বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ দুই জন করে এই সম্মানা পাবেন।
‘গ’ বিভাগে রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে সম্মাননা দেওয়া সর্বোচ্চ ১০ জনকে। ‘ঘ’ বিভাগে স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সংগঠন থেকে সম্মাননা দেওয়া হবে সর্বোচ্চ পাঁচ জনকে। এবং ‘ঙ’ বিভাগে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত পাঁচ জনকে এই সম্মাননা দেওয়া হবে।
২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। তার আলোকে প্রথমবার ২০২০ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। কিন্তু কোভিডের কারণে সেই সময় সম্মাননা প্রদান করা যায়নি। তাই প্রথমবারের মত ২০২০ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নির্বাচন চূড়ান্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই এআইপি সম্মাননা আগামী ২৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০ সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন-
“ক” বিভাগ (কৃষি উদ্ভাবন জাত/প্রযুক্তি): নির্বাচিত-৪ জন। এরা হলেন- প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, ডিপার্টমেন্ট অফ জেনেটিক্স এন্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ(বাউধান-৩ এর জাত উদ্ভাবন, লবণাক্তসহিষ্ণু বাউ সরিষা-১, ২, ৩ এর জাত উদ্ভাবন)। আতাউস সোপান মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ আর মালিক সিডস প্রা. লিমিটেড (গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র)প্রাণনগর, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর। সৈয়দ আব্দুল মতিন, ফিউচার অর্গানিক ফার্ম,ভরসাপুর, উজলকুড়, রামপাল, বাগেরহাট।
আলীমুছ ছাদাত চৌধুরী, আলীম ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, বিসিক শিল্প নগরী, গোটাটিকর, সিলেট।
খ বিভাগ (কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প):নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন। এরা হলেন-আলহাজ্ব মো. সেলিম রেজা, দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারী, ডাল সড়ক, নাটোর সদর, নাটোর। মো.মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী, চামেশ্বরী, চৌধুরীহাট, ঠাকুরগাঁও। মো. মাহফুজুর রহমান, এশা ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার ফার্ম, ঝালকাঠি সদর, ঝালকাঠি। মো.বদরুল হায়দার বেপারী, প্রোপাইটার,জাগো কেঁচো সার উৎপাদন খামার, চৌঠাইমহল, নাজিরপুর, পিরোজপুর। মো. শাহবাজ হোসেন খান, নুর জাহান গার্ডেন, শৌলা কালাইয়া, বাউফল, পটুয়াখালী। মো. সামছুদ্দিন (কালু), বিছমিল্লাহ মৎস বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামার, নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন সংলগ্ন, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।
‘ঘ’ বিভাগ (স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি ফসল/মৎস্য/প্রাণিসম্পদ/বনজসম্পদ উপখাতভুক্ত সংগঠন) নির্বাচিত- একজন। তিনি হলেন- জাহাঙ্গীর আলম শাহ শাহ্, কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর কালীগ্রাম, মান্দা, নওগাঁ।
‘ঙ’ বিভাগ (বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত): নির্বাচিত হয়েছেন দুই জন। এরা হলেন- মোছা. নুরুন্নাহার বেগম, নুরুন্নাহার কৃষি খামার, ছলিমপুর (বক্তারপুর), জয়নগর, ঈশ্বরদী, পাবনা এবং মো. শাহজাহান আলী বাদশা, মা-মণি কৃষি খামারছলিমপুর (বক্তারপুর), জয়নগর, ঈশ্বরদী, পাবনা
এআইপি কার্ডধারীরা যেসব সুযোগ সুবিধা পাবেন
এআইপিগণ সুযোগ সুবিধা পাবেন সিআইপির মতো। সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে-
১. এআইপি কার্ড এর সাথে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র
২. একজন এআইপিকে প্রদত্ত সুবিধাদি তার মেয়াদকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে (প্রদানের তারিখ হতে ১ বৎসর)
৩. এআইপিরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস পাবেন;
৪. বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ও সিটি/মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন;
৫. বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার পাবেন;
৬. একজন এআইপি’র ব্যবসা/দাপ্তরিক কাজে বিদেশে ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা প্রাপ্তির নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে উদ্দেশ্য করে লটার অব ইনট্রোডাকশন ইস্যু করবে;
৭. একজন এআইপি তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাতা, পিতা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং ৮. বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহার সুবিধা পাবেন।
এনএইচবি/এমএমএ/